ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীরা কতটা পড়ছে, দেখছে, ভাবছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীরা কতটা পড়ছে, দেখছে, ভাবছে

‘ওরা কিচ্ছু পড়ে আসে না, জেনে আসে না’- এখনকার যারা তরুণ, অভিনয় করতে আসছেন, তাদের সম্পর্কে প্রবীণ অভিনয়শিল্পীদের মন্তব্য এটাই বা এ ধরনের কাছাকাছি কিছু। সমালোচনা বলা হোক, অথবা অভিযোগ সেটাও এ-ই। বদলে তারা ভার্চুয়াল জগতে ঘোরাফেরায় দারুণ ব্যস্ত! খায়রুল বাসার নির্ঝর খতিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন, বইয়ের সঙ্গে এখনকার তরুণ অভিনয়শিল্পীদের অন্তরঙ্গতা কতখানি! ছবি তুলেছেন রণবীর মিত্র বসুনীয়া যে কোন নাটক বা চলচ্চিত্রের মেকাপরুমে ঢুকলেই পার্থক্যটি চোখে পড়ে। ধরা যাক, পঞ্চাশোর্ধ কোন অভিনেতা বসে আছেন। একই রুমে আছে এ প্রজন্মের কেউ। সিনিয়র শিল্পী চাইবেন না তার এতটুকু সময় নষ্ট হোক। তিনি সামনে একটা বই খুলে বসবেন। তারপর চারপাশের ব্যস্ততা, কোলাহল থেকে মুহূর্তেই বিচ্ছিন্ন হয়ে ডুবে যাবেন বইয়ের পাতায়। আর ইয়াং শিল্পীকে দেখা যাবে হইহই করে আড্ডা মারতে। নয়ত চোখ আটকে থাকবে মোবাইল স্ক্রিনে। আঙ্গুল চলবে সমানে। ব্যস্ত সোস্যাল সাইটে। প্রবীণরা বিরক্ত, ‘দু’মিনিট কথাও বলা যায় না এদের সঙ্গে! জানাশোনার এত কমতি!’ কিন্তু চিত্র কি আসলেই সমান, সবার ক্ষেত্রে? সেটা হয়ও না। সবাইকে একই কাতারে ফেলে সমান্তরাল মার্জিন টনে দেওয়াটাও উচিত নয়। এ কথা সত্য যে, ভার্চুয়াল জোয়ারের এই সময়ে অভিনয়ে গ্ল্যামারটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে। কী নাটকে! কী সিনেমায়! সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অধিক ফলোয়ারওয়ালাদেরকে টেনে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার প্রচলনটা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। অভিনয় আদৌ জানে কিনা, জানাশোনার বহর কতটা ভারি- এ হিসেব অতটা মুখ্য নয়। সুন্দর হলেই হলো! তাতে হয়েছে কী, বিউটি উইদাউট ব্রেইনদের মাতামাতি বেড়েছে। কিন্তু দিন শেষে যখন টিকে থাকার প্রশ্ন তৈরি হয়ে যায়, তখনই দেখা যায় আসল খেলটা। শীতের পাতা ঝরার মৌসুমের মতো হাওয়া আসে, আর ঝরে ঝরে পড়ে। কিন্তু এরা তো সংখ্যায় নগণ্য। অতটা ধরতে গেলে চলে না। লম্বা রেস খেলার জন্য অনেকেই আসেন। তাদেরকে আলাদা করা যায় সহজেই। কেউ থিয়েটার থেকে, কেউ নিজ উদ্যোগে জানাশোনা করে তবেই পা রাখেন অভিনয়ের ময়দানে। ‘তারাই টিকে থাকে’- বলছিলেন অভিনেতা অর্নব অন্তু। থিয়েটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। জানা আছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের হালহকিকতও। তবে যে প্রশ্নটা তৈরি হয়ে ছিল, পড়াশোনার অভ্যাসটা কতখানি আছে তাদের মধ্যে? বিশেষ করে অমর একুশে বইমেলার সময় এ প্রশ্নটি আরও ব্যাপকহারে সামনে চলে আসে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেক তরুণ অভিনয়শিল্পী মাসে এক দু’বার হলেও বইমেলা ঢুঁ দেন। কেনেন পছন্দের লেখকের বই। পড়াশোনার অভ্যাসটা এখনও জীবিত আছে। তবে হ্যাঁ, হয়ত দু’আঙ্গুলে বইয়ের পাতাটা উল্টানো হয় না, কিন্তু স্মার্টফোনে পিডিএফ ভার্সন পড়েন চলতে ফিরতে। মেকআপরুমে, অথবা কয়েকজন ইয়াং এ্যাক্টর এক জায়গায় হলেই যে শুধু গসিপ চলে, বাতচিৎ চলে সোস্যাল সাইট কেন্দ্রিক, সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে- তা নয়। আড্ডায় উঠে আসে রাজনীতি, সমাজচিন্তাও। উপন্যাস-গল্প-দর্শন নিয়েও আলোচনা হয়। তবে শুধু অভিনয়শিল্পীই কেন, অনেক তরুণ নির্মাতা তৈরি হয়েছে। পাল্লা দিয়ে একের পর এক দর্শকপ্রিয় কাজ উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তারা। অনেক সিনিয়র অভিনয়শিল্পী তাই তরুণ নির্মাতা শুনলেই খুশি হয়ে সেটে চলে আসেন। পড়ার অভ্যাস আছে বলেই ইয়াং এ্যাক্টরদের মধ্যে সাহিত্য থেকে উঠে আসা কিছু চরিত্র হয়ে ওঠার নেশা আছে। হিমু হতে চান কেউ, দেবদাস; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্র হয়ে দেখা দিতে চান পর্দায়। ভার্চুয়াল দুনিয়ার তা-বে পড়াশোনার অভ্যাসটা এখনও হারিয়ে যায়নি তরুণ প্রজন্মের ভেতর থেকে। সে হোক অভিনেতা, অথবা অন্যকিছু। চরিত্রের ক্ষুধা আছে, নতুন চিন্তা সৃষ্টির নেশা আছে, সমাজকে বদলে দেয়ার ইচ্ছা আছে।
×