ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুখ তুমি কি -শামীম হাসান

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সুখ তুমি  কি   -শামীম হাসান

সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে...। কবির মতো আমাদেরও সবার জানতে ইচ্ছে করে সুখ কি। শুধু জানতে নয় আমরা সবাই সুখ চাই। আসলে সুখ কি? সুখের কি কোন সংজ্ঞা আছে। নাকি সুখ সোনার হরিণ, যাকে ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না। আসলে সুখের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, তবে সোনার হরিণ নয়। পরিবেশ, পরিস্থিতি, চাহিদা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে একেক জনের কাছে সুখ একেক রকম। তবে সাদা মাটাভাবে আমরা বুঝি সুখ মানে ভাল থাকা। সুখ মানে ইচ্ছে পূরণ হওয়া। সুখ মানে অনাবিল শান্তি পাওয়া। সুখ মানে তৃপ্ত হওয়া। আবার ভাল থাকা, ইচ্ছে পূরণ, শান্তি বা তৃপ্তি জনে জনে ভিন্ন। কেউ ভাবে এটা পেলে সুখী হতাম, কেউ ভাবে ওটা পেলে সুখী হতাম। একজন ক্ষুধার্ত পেট পুরে খেতে পারলেই সুখী। যার খাওয়া পড়ার চিন্তা নেই তার সুখ সচ্ছল এবং সম্মানজনক জীবন যাপনে। একজন চাকরিজীবীর বেতন বৃদ্ধি বা পদোন্নতিতে সুখ, তেমনি ব্যবসায়ীর সুখ বেশি মুনাফায়। একজন শিশুর কাক্সিক্ষত খেলনাটি পেলেই সে সুখী। শ্বশুর-শাশুড়ী, দেবর-ননদদের নিয়ে যৌথ পরিবারে থাকা গৃহিণী যখন শুধুমাত্র স্বামী সন্তান নিয়ে ছোট্ট সংসার পায় তখন সে মনে করে সুখী। যখন সে নিজস্ব সংসার পেয়ে যায় তখন আবার অন্য সুখের ভাবনা চলে আসে। আসলে সুখের সীমা নেই। তবে যে যেভাবেই সুখী হোক না কেন সুখের সঙ্গে প্রাপ্তির বিষয়টি অনস্বীকার্য। হোক তা বাহ্যিক বা মানসিক। উইকিপিডিয়াতে বলা আছে, সুখ একটি মানবিক অনুভূতি। সুখ মনের একটি অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। বিভিন্ন সময়ে জৈবিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, দর্শনভিত্তিক এবং ধর্মের দিক থেকে সুখের সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং এর উৎস নির্ণয়ের প্রচেষ্টা সাধিত হয়েছে। সঠিকভাবে সুখ পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন। মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা তাত্ত্বিক মডেলের ভিত্তিতে সুখ পরিমাপ করে থাকেন। এই মডেলে সুখকে ইতিবাচক কর্ম ও আবেগ সমূহের সমষ্টি বিবেচনা করা হয়। আবার অনেকে বলে থাকেন সুখ হলো বেতার তরঙ্গের মতো। এটা চারপাশে সবসময়ই থাকে। এটা শুধু বের করে আনতে হয়। যেমনটি আমাদের চারপাশে থাকা বেতর তরঙ্গ থেকে নির্দিষ্ট টিভি চ্যানেল অন করলেই ছবি ও শব্দ পাওয়া যায়। সাধারণভাবে আমরা মনে করি টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ ছাড়া সুখ পাওয়া যায় না। কথাটি সঠিক নয়। অর্থ-সম্পদ সুখ পাওয়ার একটি উপায় মাত্র। অর্থ-সম্পদই যদি সুখ প্রাপ্তির একমাত্র উপায় হতো, তাহলে তো সুখকে সংজ্ঞায়িত করতে এত ভাবাভাবির প্রয়োজন ছিল না। আমরা চারপাশে কতই না দেখছি অর্থ কিভাবে অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত ছাড়াও যে সুখ পাওয়া যায় সেই বিষয়টিই আলোকপাত করতে চাই। বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক এবং মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার আলোকে সুখকে ধরার জন্য বা সুখী হওয়ার জন্য আমরা যে কৌশলসমূহ অনুসরণ করতে পারি তার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় নিম্নে আলোচনা করা হলো: আত্মতৃৃপ্তি : যা পেয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন। শুকরিয়া করুন। যা পাননি তা নিয়ে হতাশা না করে নতুনভাবে পরিকল্পনা করুন। এমন কিছু বিষয় বা সমস্যা আছে যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। অর্থাৎ যা অবধারিত। আমাদের কোন হাত নেই। এসব বিষয় সহজভাবে গ্রহণ করুন। গায়ের রং, শারীরিক গঠন, বেটে বা লম্বা, জন্মগত সমস্যা ইত্যাদি যা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত-তা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। এতে সব সময়ই কষ্ট পাবেন। নিজেকে ছোট মনে হবে। হিংসা, বিদ্বেষ, লোভকে মাটি চাপা দিন। এগুলো মনের প্রশান্তি নষ্ট করে। পৃথিবাটা অর্জনের জায়গা। যে যেভাবে পারে অর্জন করুক। তাতে আপনার ক্ষতি কি। আপনি আপনার মতো চেষ্টা করুন। কেউ যদি আপনার জন্য কিছু করে তবে তাকে ধন্যবাদ দিন। অন্যের ভাল কাজে প্রসংশা করুন। সালাম পাওয়ার আশা না করে আপনি নিজেই সালাম দিন। এগুলো মনকে পরিষ্কার করে। পরিষ্কার মনে সুখ বাসা বাঁধে। অন্যের কাজে কখনও নাক গলাবেন না। চারপাশে দেখুন আমাদের জীবনের বেশিরভাগ সমস্যাই সৃষ্টি হয় অন্যের কাজে অনাকাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপে। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা যা আপনার ভাল নাও লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে অহেতুক বিতর্ক বা সমালোচনা না করে এড়িয়ে চলুন। পরনিন্দা, পরচর্চা বা গিবত করা একেবারেই বন্ধ করুন। প্রাপ্তিতে শুধু আনন্দ নয়, ত্যাগেও অনেক আনন্দ আছে। মানুষের উপকার করুন, দান খয়রাত করুন। মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। দেখবেন অজান্তেই আপনার মনটা সুখে ভরে গেছে। সর্বোপরি সুখ পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। সৎ উপার্জন, সৎসঙ্গে চলা, সুচিন্তা করা, সুপরামর্শ দেয়া ইত্যাদি সকল সু এর সঙ্গে থাকুন, কু কে ত্যাগ করুন। ছবি : তানিম ও অপু মডেল : সাদিয়া, জোভান, মোরশেদ ও শামীম আক্তার কৃতজ্ঞতা : ফটোলুক পোশাক : লা-রিভ
×