ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

শীতের শেষ প্রহরে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

শীতের শেষ প্রহরে

শীত শেষ হয়ে আসছে। কনকনে ভাবটা কখনও অত্যধিক বেশি আবার কখনও আনুপাতিকহারে কমছে। শীতের আবহাওয়ার মতিগতি যাই হোক না কেন, শীতের বিদায় বেলায়ও কাপড় কেনায় ব্যস্ততা বাড়ে ফ্যাশন সচেতন মানুষের। শীত যাই যাই করছে, একটু একটু করে ঠাণ্ডা কমতে শুরু করেছে চারপাশে। এই সময়েও তরুণ তরুণীরা থেমে নেই শীতের পোশাক এবং অনুষঙ্গের খোঁজে বেরিয়ে পড়ার। ফ্যাশন হাউসগুলো এবারে বরাবরের মতোই শীত মৌসুমটার জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করেই তৈরি করেছে সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের রকমারী ও ভিন্ন ডিজাইনের পোশাক। সব সময়ই তরুণদের চাহিদা থাকে নতুনত্বের প্রতি। হালের ফ্যাশনে তাই প্রতিনিয়ত যোগ হয় নতুন মাত্রা। পোশাকের রং ঢঙে চাই নতুনত্ব। এবারের শীতে তাদের শীত নিবারণের পাশাপাশি স্টাইল রক্ষা করাটাও জরুরী হয়ে পড়েছে। শুরুতে তেমন না হলেও অপেক্ষায় থাকে হাড় কাঁপানো শীত। আর শীতের বিদায়লগ্নে তো মাঝে মাঝে খুব বেশি ঠাণ্ডার প্রকোপে পড়ে সারাদেশ। প্রায়ই বাধ্য হয়ে তরুণরা বেছে নেয় ভারি শীতের গরম কাপড়। কিন্তু শীতের কাপড় পরা মানে পোশাকের সব ফ্যাশন একেবারে মাটি। তরুণরা এ ক্ষেত্রে বেশ খুঁতখুঁতে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখেই ফ্যাশন হাউসগুলো বাজারে এনেছে ফ্যাশনেবল জ্যাকেট। জ্যাকেটগুলো ব্যবহার করা যাবে শীতের ফ্যাশনেবল অনুষঙ্গ হিসেবে। এবারের শীতের ফ্যাশনে জ্যাকেটগুলো তৈরি করা হয়েছে প্রয়োজন ও ফ্যাশন দুটি বিষয়ের কথা মাথায় রেখে। সম্পূর্ণ দেশী কাপড়ে দৃষ্টিনন্দন এবং সময়োপযোগী নকশায় তৈরি হয়েছে এসব জ্যাকেট। এ ধরনের জ্যাকেট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে খাদি কাপড়। এছাড়া কাপড়ের গঠনে এসেছে বেশ ভারি ও রুক্ষ্ম টেকচার। খাদি কাপড়েই জ্যাকেটের প্যাটার্ন ঠিক রাখা সম্ভব। খাদিতে নকশা ও বুননের সমন্বয়ে জ্যাকেটে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। এবারের শীতে খাদি কাপড় ছাড়াও নানা ধরনের জ্যাকেট বাজারে এসেছে। তাই শীতের ভারি পোশাক জ্যাকেটেও এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। শীতে ঠা-ার হাত থেকে গলা বাঁচাতে মাফলার কাজ দেয়, আবার তরুণদের ফ্যাশনেও এর রয়েছে যথেষ্ট কদর। এ ছাড়াও উলের টুপি, কানটুপি, মানকি ক্যাপ এবং মোজাও এই শীতে আপনাকে বেশ আরাম দেবে। ধরনের ক্যাপ, বেল্ট এবং মাফলার। সঙ্গে গরম কাপড় তো রয়েছেই। ফ্যাশনেবল তরুণীরা বিভিন্ন রঙের শার্ট বা ফতুয়ার সঙ্গে স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারে। স্কার্ফ এমন একটা ফ্যাশন অনুষঙ্গ, যা শীত বা গ্রীষ্ম যে কোন ঋতুতে যে কোন পোশাককেই দারুণ আকর্ষণীয় করে তোলে। তবে এ শীতে নিজেকে উষ্ণ রাখার অনুষঙ্গ যাই হোক না কেন, সেটি যেন আপনার সঙ্গে মানানসই হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সোয়েটার যে কোন গড়নের ছেলেমেয়ে পরতে পারে। তবে ব্লেজার বা কোট পরার সময় শরীরের গঠন ও মুখের গড়ন বিবেচনা করা উচিত। উচ্চতা কম হলে স্ট্রাইপ ব্লেজার পরা ভাল। এক রঙের চেক ব্লেজার বেশি মানানসই যাদের উচ্চতা বেশি। যারা মাঝারি গড়নের তারা যে কোনটিই পরতে পারেন। মোটা হলে এক বোতাম, চিকন ও মাঝারি গড়ন হলে দুই-তিন বোতাম দিয়ে ব্লেজার পরলে ভাল দেখাবে। এক বোতামের ব্লেজার মেয়েদের বেশি মানায়। ছেলেদের শীত পোশাকের তালিকায় প্রথমেই আসে সোয়েটার, জ্যাকেট কিংবা স্যুট-থ্রিপিস বা টুপিসের কথা। তবে বর্তমান সময়ে শীতের পোশাকে স্টাইল হিসেবে জ্যাকেটের চলটাই সবচেয়ে বেশি। ডেনিম, ক্যানভাস কাপড় কিংবা চামড়ার জ্যাকেটের সঙ্গে এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হুডির জনপ্রিয়তাও। ছেলেদের শীতপোশাকে এবার অবশ্য জনপ্রিয় জ্যাকেটও। ফ্লিস কাপড়ের নানা রঙের জ্যাকেট পরছে তরুণরা। কালো, গাঢ় মেরুনের পাশাপাশি কালো-হলুদের মিশ্রণ, বেগুনী, হলদে সবুজাভ রঙের চামড়ার জ্যাকেট চলছে বেশি। যারা অফিস করেন তাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ পোশাক। অফিস মানেই স্যুট- কোট পরতে হবে, তা নয়। ফুলহাতা শার্ট-টাইর সঙ্গে সোয়েটারও পরতে পারেন। এসব সোয়েটারের গলা প্রশস্ত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ভি-আকৃতির ডিজাইন করা সোয়েটার পরতে পারবেন। শীতের হাওয়া গায়ে লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাথের বাজার জমে ওঠে। এ সময় বড় দোকানগুলোর সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাথেও বাজার জমতে দেখা যায়। মহল্লায়, ভ্যানেও শীতের পোশাকের মেলা দেখা যায়। এছাড়াও রাজধানীর মহল্লার মার্কেটগুলোতে দেশী-বিদেশী পোশাকের ছড়াছড়ি পড়ে যায়। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, নিউমার্কেট, বনানী, মিরপুর শপিংমল, গুলশান এছাড়া ফুটপাথের সব দোকানেই শীতের পোশাক পাওয়া যাবে। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর শোরুমেও পাওয়া যাবে বিভিন্ন কালেকশন। বিভিন্ন দোকানের দাম ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এছাড়া শীতের শুরুতে এক দাম আবার শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়ে যায়। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে তুলনামূলকভাবে মান ভাল থাকে। তবে দামে কিছুটা ভিন্নতা পাওয়া যায়। চীন, ভারতের শালগুলো ৪৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যাবে। আবার কাশ্মীরী পাতলা শাল ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যাবে। উচ্চতায় ও প্রস্থে ছোট কাশ্মীরী শাল ৬০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়, খাদি বা পাতলা উলের শাল পাওয়া যাবে ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়। আবার কোয়ালিটি ভিন্নতায় অর্থাৎ মানের দিকটা ভাল দেখলে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়ও পাওয়া যাবে। কোন কোন শাল ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া টুপি, মাফলার, মোজা ২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাবে। সোয়েটার, টুপি ধাঁচের স্কার্ফ ১৫০-২০০ টাকায় পাওয়া যাবে। মানের দিকটা ভেরি করে বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় পাওয়া যাবে বিভিন্ন দামে। তবে দেরি কেন, শীতের এই বিদায়বেলায় শেষবারের মতো আজই বেরিয়ে পড়ুন! ছবি : আরিফ ও বিএম সাবাব মডেল : তানজিনা তিশা ও অমরেশ
×