ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝরে গেল দুটি প্রাণ

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

ঝরে গেল দুটি প্রাণ

সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সড়কে ডিভাইডার তৈরি, বিভিন্ন স্থানে শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করাসহ নানা সতর্ক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। শনিবারও রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত সাবিহা আক্তার সোনালী জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। সে শিশু একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত ও তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিল। এর কয়েক ঘণ্টা পরই পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়া খাদিজা খাতুনের জীবন কেড়ে নেয় বেপরোয়া বাস। মাত্র আধা কিলোমিটার দূরত্বে ঘটনা দুটি ঘটে। দুই পরিবারেই বইছে শোকের মাতম। বেপরোয়া গতির বাস এই দুই শিক্ষার্থীরই ভবিষ্যতের স্বপ্ন কেড়ে নিল জীবনসহ। সড়ক দুর্ঘটনা এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। এমন কোন দিন নেই, যেদিন অকালে প্রাণ ঝরছে না, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাতাস ভারি হয়ে উঠছে না। সড়ক যেন দিন দিন মরণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দুর্ঘটনা সংশ্লিষ্ট পরিবারের সারাজীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনাই সম্ভাবনার অকাল মৃত্যু ডেকে আনে। মাত্র ক’দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারালেন ভূমিমন্ত্রীর পুত্র। বিভিন্ন সময় চালকের অসাবধানতা, অদক্ষতা, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, রাস্তার দুরবস্থাসহ নানাবিধ কারণই সড়ক দুর্ঘটনার উপলক্ষ। তবে ঢাকায় বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই ঘটে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। ওই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য চালকই দায়ী। অবাক করা বিষয় দুই চালকের একজনের বয়স মাত্র ১৪ বছর। ১৪ বছরের এক কিশোর কিভাবে চালকের সনদ পায় এবং কারা এই সনদ দিয়ে থাকেন এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। যদিও এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় নির্বিকার। দায়ীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। দুর্ঘটনায় অকালে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ, পঙ্গুত্ববরণ করছে অসংখ্য মানুষ, বাড়ছে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা, নিঃস্ব হচ্ছে বহু পরিবার। এ দায় কার? সড়ক দুর্ঘটনা কত পরিবারকে পথে বসিয়ে দিয়েছে, তারও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। অথচ প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে প্রাণ দিতে হচ্ছে মানুষকে। তার পরও অবৈধ চালকের সংখ্যা কমছে না। দেশে বৈধ গাড়ির সংখ্যা ১৩ লাখেরও বেশি। কিন্তু এ গাড়ির জন্য বৈধ চালকের সংখ্যা মাত্র ৮ লাখ। বাকি গাড়ি যাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বৈধ নয়। অনেকের একাধিক লাইসেন্সও আছে। স্বাভাবিকভাবেই এ অবৈধ লাইসেন্সধারী গাড়ি চালকরা গাড়ি চালাতে গিয়ে আইনের ধার ধারেন না। সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত নন, এমন চালকের সংখ্যা নিহায়তই কম নয়। এই চালকদের পেছনে আছে শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক, যে কারণে এদের শনাক্ত করাও হয়ে পড়েছে দুষ্কর। চালকরাও তাই বেপরোয়া। প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অনেকেই আধুনিক সড়ক নির্দেশনা বুঝতে অক্ষম। দেশে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে না পারলে দুর্ঘটনার হার কমানো যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার মতো অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে সবার আগে চাই সদিচ্ছা। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ সহজ হলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রগণ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়, এটাই পরিসংখ্যানগত তথ্য। দুর্ঘটনারোধে সংশ্লিষ্টরা যুগোপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেন- এমনটিই সবার প্রত্যাশা।
×