ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এআইআইবির যাত্রা শুরু হচ্ছে শনিবার

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

এআইআইবির যাত্রা শুরু হচ্ছে শনিবার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে শনিবার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কে কিয়াং উপস্থিত থাকবেন। ব্যাংকের প্রথম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন চীনের সাবেক অর্থমন্ত্রী জিন লিকুয়ান। চীনের রাজধানী বেজিংয়ে শনিবার সকালে এআইআইবির কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বুধবার রাতে ঢাকা ছেড়েছেন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাস্তবতা মানতে হবে। চীন যে এখন অর্থনৈতিক শক্তি, আইএমএফই তো সেই স্বীকৃতি দিয়েছে। এক সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল দুই পরাশক্তি। এখন সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই, সেই যুক্তরাষ্ট্রও নেই। তিনি বলেন, যে বিবেচনাতেই গঠিত হোক না, এআইআইবি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদই হবে। কারণ, অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের বিপুল বিনিয়োগ দরকার, যা বিশ্বব্যাংক, এডিবি বা আইডিবির অর্থায়নে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এআইআইবির কার্যক্রম উদ্বোধনের পর বোর্ড অব গবর্নর্সের তিনটি অধিবেশন রয়েছে। এতে আবুল মাল আবদুল মুহিত সবগুলোতেই অংশ নেবেন। এআইআইবির প্রেসিডেন্ট জিন লিকুয়ানের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করবেন তিনি। এর আগে গত নবেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে অংশ নিয়ে এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট অবকাঠানো উন্নয়নে ব্যাপক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সেই সাথে আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে তার আলোচনায়। আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুত-জ্বালানি প্রযুক্তি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পারিক সম্পর্ক বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, ১০ হাজার কোটি ডলার মূলধন নিয়ে চীনের নেতৃত্বে এআইআইবি গঠিত হয় ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর। এরপর গত জুনে বাংলাদেশসহ ৫০টি সদস্য দেশ চুক্তি সই করে। চীনের পাশাপাশি ভারত, রাশিয়া, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া এআইআইবির অন্যতম শেয়ারহোল্ডার। বাংলাদেশসহ এর সদস্য বর্তমানে ৫৭টি দেশ। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংযোগ স্থাপনে ঋণ ও অর্থ সহায়তা দেয়াই এআইআইবি গঠনের উদ্দেশ্য। শুরুর দিকে এশিয়ার পরিবহন, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করবে বলে জানা গেছে। এআইআইবি গঠনের উদ্যোগকে অবশ্য অনেক দেশই সরলভাবে মেনে নেয়নি। পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিদ্বন্দ¦ী হিসেবেও ভাবা হচ্ছে এই সংস্থাটিকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। গত সাত বছরে ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি আমরা। পৃথিবীর খুব কম দেশেই যেটা করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের আরও উন্নয়ন করতে হবে। নিজস্ব অর্থে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। এমন আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। আর তাতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা দরকার। এআইআইবি এ ক্ষেত্রে আমাদের বড় অংশীদার হবে বলেই প্রত্যাশা করছি। সূত্র জানায়, এআইআইবির সদস্য ৩০টি দেশের মধ্যেই রয়েছে মোট মূলধনের ৯৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ এখনও বাকি আছে। সবচেয়ে বেশি মূলধন চীনের ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া ভারতের ৮ দশমিক ৪, পাকিস্তানের ১ দশমিক ২ ও বাংলাদেশের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর বিশ্বব্যাংকের গত বছরের এক সমীক্ষায় বলা হয়, আগামী ১০ বছরের প্রতিটি বছরে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের দরকার ৭০০ থেকে এক হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ ১০ বছরে মোট দরকার পড়বে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
×