ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুভাষ সিংহ রায়

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যদি না হতো

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যদি না হতো

এটা একটা বড় প্রশ্ন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যদি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করতেন তা হলে কী অবস্থা দাঁড়াত। এভাবে হয়ত অনেকেই আমরা ভাবি না। কৃষি ধ্বংস হওয়ায় ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি হয়। এমনি সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আমাদের ৯০ হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী, আটককৃত ৩৭ হাজার রাজাকার এবং সোয়া লাখ ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর খাদ্য সরবরাহের এক কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হয়। বঙ্গবন্ধু মাত্র ১৩১৪ দিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে গেছেন। ফলে ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সরকারী হয়। আর্থিক সঙ্কট থাকা সত্ত্বে¡ও বঙ্গবন্ধু সরকার পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ এবং অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের ৯ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং ৯০০ কলেজ ভবন ও ৪০০ হাইস্কুল ভবন পুনর্নির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বছরে শতকরা ৭ ভাগেরও বেশি অর্জিত হয়েছিল। তিনি এগারো হাজার কোটি টাকার ধ্বংসস্তূপের ওপর আরও তেরো হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন স্তম্ভ দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। মন্ত্রিসভা গঠন (১২ সদস্য-বিশিষ্ট), মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে নির্ধারিত হয় : জাতীয় পতাকা; জাতীয় সঙ্গীত; রণসঙ্গীত, শরণার্থী পুনর্বাসন ও দেশের অভ্যন্তরে ৪৩ লাখ বাস গৃহ পুনর্নির্মাণে ত্রাণ কমিটির রূপরেখা প্রণয়ন, ভারতীয় সৈন্যদের দেশে ফেরত পাঠানো, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, শহীদ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিচারের জন্য ‘বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ’ প্রণয়ন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কমিশন গঠন, ধ্বংসপ্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্গঠন/পুনর্নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা, কৃষি পুনর্বাসন, ১৩৯টি দেশের স্বীকৃতি অর্জন, সংবিধান প্রণয়ন, প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক অনুদান প্রাপ্তির কূটনীতি, মুুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ, ব্যাংক, বীমা, পাট, বস্ত্রকল জাতীয়করণ, বিদ্যুত উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা, ১৯৭১ সালের মার্চ-ডিসেম্বরকালীন ছাত্র বেতন মওকুফ, প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ, ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষক কমিশন গঠন, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ঘোষণা, বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ, ধ্বংস স্কুল-কলেজে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ, শিক্ষকদের ৯ মাসের বন্ধ বেতন দেয়া, জরুরীভাবে ১৫০টি আইন প্রণয়ন, শিক্ষকদের (২৫ বিঘা পর্যন্ত) খাজনা মওকুফ, পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়স্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন, রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ঘোষণা। দুই. পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জনসাধারণের মাঝে বাঙালীদের স্বাধীনতার পক্ষে যদিওবা যথেষ্ট সমর্থন ছিল, তা রাষ্ট্রীয় নীতিতে যাতে প্রতিফলিত না হয়, তার জন্য পাকিস্তানী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ছিল ব্যাপক এবং শক্তিশালী। তাছাড়া দেশ-বিদেশে আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলোও হয়ে উঠেছিল সক্রিয়। এক হাজার দিন-রাতের মাঝেই, এক আশ্চর্য সাবলীলতায় সহস্র্র প্রতিকূলতার মাঝেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার ফলে ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ শেষ হতে না হতেই প্রায় পঞ্চাশটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করল। ১২ মার্চ ১৯৭২-এ বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিশে^র নজরে সুপ্রতিষ্ঠিত করল। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় আমরা চীন এবং সৌদি আরব ব্যতীত বিশে^র সব দেশেরই আমরা স্বীকৃতি লাভ করেছিলাম। ১৯৭৪ সালে বন্যায় সৌদি আরব আমাদের দিয়েছিল দশ মিলিয়ন ডলারের অনুদান। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন তৎপর ও দূরদর্শী। ১৯৭৪-এর শেষার্ধে বঙ্গবন্ধুর কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর এই অঞ্চলে বাংলাদেশীদের কর্মলাভের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। ১৯৭২-এ যখন ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এলেন তখন কোন ভারতীয় সৈন্য বাংলার মাটিতে ছিল না। ১৯৭৪ সালের প্রথমার্ধে বঙ্গবন্ধুর দিল্লী সফরকালে ভারতের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত চুক্তি সম্পাদিত হয়। ১৯৭৫ সালের প্রথম দিকেই শুরু হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের প্রক্রিয়া। ফারাক্কার পানি বণ্টনে বঙ্গবন্ধুর সরকার শুষ্ক মৌসুমে পেয়েছিল ৪৪০০০ কিউসেক পানির নিশ্চয়তা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তা গিয়ে ঠেকেছিল ১৩০০০ কিউসেক পানিতে। তিন. বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করতেন তা হলে কি অবস্থা হতো আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি? ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারির সেই বিকেলে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে খোলা ট্রাকে করে বঙ্গবন্ধু তখনকার রেসকোর্স ময়দানের দিকে এগোতে থাকেন। সেখানে অপেক্ষায় ছিল বিশাল এক জনসমুদ্র। এইটুকু পথ তাঁকে পাড়ি দিতে হয় আড়াই ঘণ্টায়। এখানে তিনি জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘গত ৭ মার্চ আমি এই রেসকোর্সে বলেছিলাম ‘দুর্গ গড়ে তোলো।’ আজ আবার বলছি ‘আপনারা একতা বজায় রাখুন।’ আমি বলেছিলাম, ‘বাংলাদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব।’ বাংলাদেশ আজ মুক্ত, স্বাধীন। একজন বাঙালী বেঁচে থাকতেও এই স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন দেশরূপেই বেঁচে থাকবে। বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারে এমন কোন শক্তি নেই।’ যেই রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালী জাতিকে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছিলেন সেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারিতে খুব স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি- আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তা হলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে- পূর্ণ হবে না। আমাদের তাই এখন অনেক কাজ করতে হবে। তোমরা, আমার ভাইয়েরা, গেরিলা যুদ্ধ হয়েছিল দেশমাতার মুক্তির জন্য। তোমরা রক্ত দিয়েছ। তোমাদের রক্ত বৃথা যাবে না।” জাতির পিতা বলেই তিনি দেশের মাটিতে পা রেখেই বলতে পেরেছিলেন বাঙালী জাতির আত্মগরিমার কথা। গত ৯ মাসে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাকে বিরান করেছে। বাংলার লাখো মানুষের আজ খাবার না, অসংখ্য লোক গৃহহারা। এদের জন্য মানবতার খাতিরে আমরা সাহায্য চাই। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের প্রতি আমি সাহায্যের আবেদন জানাই। বিশ্বের সকল মুক্ত রাষ্ট্রকে অনুরোধ করছি- বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে এ দেশের মানুষ শুধু ইতিহাস দখলের ইতিহাস দেখেছে। দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে যে বাংলাদেশের জন্ম হয় তাঁর হত্যাকা-ে জাতিগত সব অর্জন ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেল। তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের মতো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জায়গায় দাঁড়িয়ে যেত। বঙ্গবন্ধু অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাবান জাতিতে পরিণত করতে পেরেছিলেন। জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রামে তিনিই অধিনায়ক। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির পর অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বে তিনি ছিলেন এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি দেশে ফিরে না আসলে অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার কেউ ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু স্বদেশে এসেছিলেন বলেই ভারতীয় সৈন্য অতি দ্রুত সময়ে প্রত্যাবর্তন করেছিল। পৃথিবীর কোন দেশের স্বাধীনতার পর এত কম সময়ে মিত্রশক্তি সহজে দেশ ছাড়ে না। এই মহামানুষটা দেশে প্রত্যাবর্তন না করলে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের অবস্থা হতো ভয়াবহ। গোটা পৃথিবী এভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াত না। দীর্ঘ মানুষটির দিকে সারাপৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত। পৃথিবীর যেখানেই গিয়েছেন সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্র্রপ্রধানরা মুগ্ধ হয়েছেন। এমনকি যারা কখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি তারাও অভিভূত হয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে। কেননা বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র্রনীতি ছিল খুবই স্বচ্ছ ও স্পষ্ট। তিনি বলতেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবেশী ভারত, চীন, রাশিয়া, ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, সিংহল ও বার্মাসহ সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। কোন বিরোধ দেখা দিলে শান্তিপূর্ণভাবে তার সমাধান হবে।’ এভাবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র্রনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন। আজকে পৃথিবীতে ধনী রাষ্ট্র ও দরিদ্র রাষ্ট্র বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক বিশ্বনেতা সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু চার দশক আগে বঙ্গবন্ধু সেই কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন। এখন অনেকে অস্ত্র-প্রতিযোগিতা বন্ধের কথা বলছেন। কিন্তু সেই সময় বঙ্গবন্ধুর মতো করে অনেকে ভাবেননি। তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘আমি বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতি অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস করে সে অর্থ দিয়ে দরিদ্র দেশের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমানে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয় করা বিপুল অর্থের এক-দশমাংশও যদি জনগণের জন্য খরচ করা হয় তবে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য মুছে যাবে এবং তাতে বৃহৎ ব্যক্তিবর্গের মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে।’ সিংহপুরুষ শেখ মুজিব দেশে ফিরে এসে দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যায়। এটা অবশ্যই গবেষণার বিষয় বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কেউ একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নেতা হিসেবে শর্তহীন বহির্সাহায্যের কথা বলতে পারতেন কিনা? তাঁর দৃঢ়কণ্ঠের সেই আত্মপ্রত্যয়ী উচ্চারণ সমগ্র বাঙালী জাতিকে সব সময় পথ দেখাবে : ‘দেশ গড়ার কাজে কেউ সাহায্য করতে চাইলে তা আমরা গ্রহণ করব। কিন্তু সে সাহায্য অবশ্যই হতে হবে নিষ্কণ্টক ও শর্তহীন। আমরা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সব জাতির সমমর্যাদার নীতিতে আস্থাশীল। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করবেন না, এটাই আমাদের কামনা।’ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু জাতিসংঘের সদস্য হতে চারটি বছর তার লেগে গেল কেন? চীন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যদের অস্ত্র, গুলি আর রাইফেল দিয়েছিল। সেই অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানীরা আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ মেরেছে। সেই চীনই জাতিসংঘে আমরা যাতে সদস্য হতে না পারি তার জন্য বার বার বাধা দিচ্ছিল। চীনের বাধার কারণেই যে সদস্যপদ আমরা ১৯৭২ সালেই পেতে পারতাম, তাই আমাদের পেতে ১৯৭৪ সাল লেগে গেল। ১৯ সেপ্টেম্বর, নিউইয়র্ক শহরে আরও এক শ’- এরও বেশি দেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকাও পত পত করে নিউইয়র্কের আকাশকে ছুঁতে চাইল। বাঙালীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ঐতিহাসিক সেই বক্তৃতা মঞ্চটিতে আরোহণ করলেন ২৫ সেপ্টেম্বর (১৯৭৪ সালে)। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন এই অধিবেশনের প্রথম এশীয় নেতা যিনি এই অধিবেশনের সবার আগে বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আজকের দিনে জাতিসংঘ কোন্্ পথ বেছে নেবে? ধ্বংসের পথ, নাকি ক্ষুধা দূর করার পথ!’ তিনি বাংলাদেশের সেই সময়ের প্রবল বন্যার কথা বললেন। বললেন এই জন্য যে, এমনিতে যুদ্ধের পর দেশটি শত্রুদের আগুনে ছাই হয়ে রয়েছে, তার ওপর বন্যা। দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীকে বললেন, শুধু শান্তির জন্য অতীতের সমস্ত গ্লানি ভুলে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে আবার সম্পর্ক করেছেন। বাংলাদেশের যুদ্ধের দাগ মুছে যায়নি, পাকিস্তান ন্যায্য সম্পদ ফিরিয়ে দেয়নি। সবশেষে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘মানুষের অসম্ভবকে জয় করার ক্ষমতা এবং অজেয়কে জয় করার শক্তির প্রতি বিশ্বাস রেখে বক্তৃতা শেষ করতে চাই। আমরা দুঃখ ভোগ করিতে পারি কিন্তু মরিব না।’ লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক [email protected]
×