ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ৪-২ শ্রীলঙ্কা

জয় দিয়ে বছর শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

জয় দিয়ে বছর শুরু বাংলাদেশের

রুমেল খান, যশোর থেকে ॥ বাঘ-সিংহের লড়াইয়ে জয়ের হাসি হাসল বাঘরাই! লঙ্কান লায়ন্সদের এক হালি গোল দিয়ে শুভসূচনা বেঙ্গল টাইগারদের...!!! যশোরের প্রখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ফুটবলপ্রেমী ছিলেন না, সেটা কখনই জানা যায়নি। তবে এখন যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তাহলে নিশ্চয়ই বাংলাদেশ দলের খেলা দেখে লিখে ফেলতেন চমৎকার একটি সনেট! গত বছরটা বাংলাদেশ দল শেষ করেছিল জয় দিয়ে (সাফ সুজুকি কাপে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে)। এবার বছরটা শুরু করল আবারও জয় দিয়েই! বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে (‘এ’ গ্রুপে) শুক্রবার বাংলাদেশ ৪-২ গোলে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। প্রথমার্ধে জয়ী দল এগিয়ে ছিল ৩-১ গোলে। বাংলাদেশের সাখাওয়াত হোসেন রনি জোড়া গোল করেন। বাকি দুটি গোলের মালিক জাহিদ হোসেন এবং নাবিব নেওয়াজ জীবন। এ জয়ে শেষ চারে উন্নীত হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল বেঙ্গল টাইগাররা। তাদের পরবর্তী গ্রুপ ম্যাচ আগামী ১২ জানুয়ারি, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। প্রতিপক্ষ বর্তমান শিরোপাধারী মালয়েশিয়া। আর শ্রীলঙ্কার পরের প্রতিপক্ষ নেপাল (একই দিন, একই ভেন্যুতে, বিকেল ৩টায়)। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের গত আসরের ফলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখল বাংলাদেশ। সেবার ২ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্রুপ ম্যাচ (প্রথম ম্যাচে অবশ্য মালয়েশিয়ার কাছে ০-১ গোলে হার দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ)। ১৭৯ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ এবং ১৮৮ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী শ্রীলঙ্কা এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ম্যাচে পরস্পর মুখোমুখি হয়েছে ১৬ বার। বাংলাদেশের জয়ের পাল্লাই ভারী। তারা জিতেছে ১১ বার। শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৩ বার। বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। বাংলাদেশের ২৫ গোলের বিপরীতে শ্রীলঙ্কা করেছে ১২ গোল। ম্যাচে বাংলাদেশ আরও বেশি গোলের ব্যবধানেও জিততে পারত। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় এবং দুভার্গ্যরে জন্য গোলসংখ্যা বাড়তে পারেনি। জিতলেও বাংলাদেশের রক্ষণভাগের খেলা তেমন মন ভরাতে পারেনি। তাদের ব্যর্থতার কারণেই দুটি গোল ‘খামোখা’ উপহার হিসেবে পেয়ে যায় সফরকারী লঙ্কান দল! তারপরও স্বাগতিক দলের জয়ে যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছে যশোরবাসী। ম্যাচের ১৭ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে উইঙ্গার জাহিদ হোসেন বিপক্ষ দলের গোলমুখে যে ক্রসটি ফেলেন, তা থেকে ‘ওয়ানটাচে’ ডান পায়ের দর্শনীয় শটে লঙ্কানদের জালে বল পাঠান সাখাওয়াত হোসেন রনি (১-০)। উল্লাসে উন্মাতাল হয়ে ওঠে গ্যালারি। তবে বেশিক্ষণ এই গোলের আনন্দ স্থায়ী হয়নি। ম্যাচের ২০ মিনিটে ডিফেন্ডার নাসিরের ভুলে লঙ্কান ফরোয়ার্ড ডি সিলভাকে নিজেদের পেনাল্টি সীমানায় ফাউল করলে পেনাল্টির নির্দেশ দেন থাই রেফারি। এডিসন ফিগারাডুর পেনাল্টি থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি। আসে সমতা (১-১)। তবে লঙ্কানদের সমতায় ফেরার এই আনন্দও বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেয়নি স্বাগতিকরা। ২২ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ইয়াসিনের হেড বক্সে বল পেয়ে তীব্র শট নেন জাহিদ হোসেন। তার পায়ের ছোঁয়ায় বল আশ্রয় নেয় শ্রীলঙ্কার জালে (২-১)। ৪২ মিনিটে বক্সের খুব কাছেই সোহেল রানাকে আটকাতে গেলে হ্যান্ডবল হয় লঙ্কান মিডফিল্ডার চামিরার। জাহিদের ফ্রি কিক বক্সে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বলের গতিপথ বদলে যায়। তা থেকে জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবন (৩-১)। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আশানুরূপ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। সে সুযোগটা কাজে লাগায় লঙ্কান দল। ৫১ মিনিটে মিডফিল্ডার সানজিওয়া বল পাঠান বাংলাদেশের জালে (২-৩)। ৮১ মিনিটে একটি গোল ‘উপহার’ পেয়ে যায় স্কাগতিক দল! প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের ভুল বোঝাবুঝিতে পোস্টে ফাঁকায় বল পেয়ে আয়েশ করে গোল করেন রনি (৪-২)। লঙ্কান দল অনেক গোলের সুযোগ নষ্ট করলে শেষপর্যন্ত ম্যাচ শেষে জয়ী দল হিসেবেই তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে মারুফুল হকের শিষ্যরা।
×