ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩৫৯ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব

পিপিপিতে বিশ্বব্যাংককে পাশে চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

পিপিপিতে বিশ্বব্যাংককে পাশে চায় সরকার

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব (পিপিপি) কার্যকর করতে চাচ্ছে সরকার। এজন্য ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রায় ৩৫৯ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরামর্শে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে সহায়তার বিষয়টি ঢাকা অফিসকে জানানো হয়, তবে এখন পর্যন্ত কোন উত্তর জানায়নি বিশ্বব্যাংক। ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আশা করা যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক এ সহায়তা দেবে। কেননা বিশ্বব্যাংকও চায় যাতে পিপিপির আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন বেশি হয়। এতে সবার অংশগ্রহণ বাড়ে এবং বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। এর আগে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, পিপিপি বাস্তবায়নে গত ছয় বছরে আমি অনেক বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে তেমন উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নেই। স্বীকার করতেই হবে, পদ্ধতিগত প্রস্তুতি আমাদের দুর্বল ছিল। তবে আশা বিষয় হলো বিনিয়োগকৃত সম্পদ হতে প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যেই সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব বিল ২০১৫ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছি। ফলে পিপিপি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হবে এবং বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। এসব উদ্যোগ ছাড়াও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নানা সংস্কার পিপিপি কার্যক্রমে গতিশীলতা আনবে। তিনি জানান, পিপিপির আওতায় ৪২টি প্রকল্প নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অন্য দুটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হবে শীঘ্রই। তাছাড়া অনুমোদিত ২৪টি প্রকল্পের ট্রানজেকশন এ্যাডভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক বিবেচনায় অবকাঠামো খাতে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রয়োজনীয় অর্থায়নের উৎস নিশ্চিত না হওয়ায় সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য সরকার প্রতিবছর পিপিপিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও ব্যয় করতে পারছে না। প্রতিবছরই বরাদ্দ দেয়া অর্থ অলস পড়ে থাকছে। গত নবেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে অবকাঠামো খাতে বাজেট বাড়বে না। তবে বাড়বে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) আওতা। বেশ কিছু মেগা প্রকল্প রয়েছে। সেগুলো কিভাবে পিপিপির আওতায় আসবে সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বড় অবকাঠামো নির্মাণে পিপিপি ধারণা নিয়ে আসে। মূলত উন্নয়ন বাজেটে সরকারী অর্থ সঙ্কটের কারণে বেসরকারী খাতের পুঁজি আকৃষ্ট করতে সরকার পিপিপির ধারণা নিয়ে আসে। এজন্য ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রায় প্রতি অর্থবছর তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রতিবছরই অলস পড়ে থাকে বড় অঙ্কের এ বরাদ্দ। সরকার প্রকল্পগুলো পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করলেও দেশী-বিদেশী বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, কয়েক বছর ধরে আলোচনা চললেও বাংলাদেশে পিপিপি নতুন ধারণা। এর ওপর কোন ধরনের নীতিমালা ছিল না, ছিল নানা রকম প্রতিবন্ধকতা। সেসব জটিলতার নিরসন হয়েছে। বেসরকারী খাতের পুঁজি পিপিপির আওতায় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, পিপিপির আওতায় নেয়া কয়েকটি প্রকল্পের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এর আওতায় নেয়া প্রকল্পের কার্যক্রমের কোন অগ্রগতি নেই। এর মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। পিপিপিতে বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১১ সালের নবেম্বরে। দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। এর চেয়ে খারাপ অবস্থা ঢাকা-আশুলিয়া দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। ২০১১ সালের ৭ মার্চ দরপত্র আহ্বানের পর কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও অংশ নেয় মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান। এদিকে সড়ক খাতের উন্নয়নে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ১৩টি প্রকল্প সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের (সওজ) সাত সদস্যের একটি পিপিপি সেলও গঠন করা হয়। কর্মপন্থা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক করলেও প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি পিপিপি সেল। প্রতিটি প্রকল্পই এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। এরপর প্রকল্প সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সওজ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ করতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চার লেনে উন্নয়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ জন্য প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু সরকারের পক্ষে বিশাল পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করা কঠিন। তাই পিপিপির ভিত্তিতে নতুন সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে গঠন করা হয় পিপিপি সেল। কিন্তু বাস্তবে কোন প্রকল্পেরই অগ্রগতি নেই। পিপিপির প্রয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় পিপিপি সেল গঠন করা হয়। এর আওতায় দেশী বা বিদেশী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান অথবা বিদেশের সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) পিপিপি লিংক প্রজেক্ট হিসেবে বেশ কিছু প্রকল্প রাখা হয়েছে।
×