ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শামীম হাসান

নতুন বছর নতুন স্বপ্ন নতুন পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

নতুন বছর নতুন স্বপ্ন নতুন পরিকল্পনা

অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সময়ের এই তিনটি চক্রে মানুষ, প্রকৃতি, বিশ্বজগত আবদ্ধ। অনাগত ভবিষ্যত বর্তমানে আসে আর বর্তমান এক সময় অতীত হয়ে যায়। তারপর একদিন অতীতের অতল গহব্বরে হারিয়ে যায়। যা অতীতে হারিয়ে যায় তা আর ফেরত না পাওয়া গেলেও ভবিষ্যতকে বর্তমানে স্মরণীয় করে রাখা যায়। অনাগত ভবিষ্যতকে পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিকল্পনামাফিক বর্তমানে বাস্তবায়ন করলেই তা সম্ভব। কিছু ঘটনা, কিছু ইতিহাস অতীত হলেও বর্তমানে চিরভাস্বর হয়ে থাকে। যেমন আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা কখনই অতীতের গহব্বরে হারিয়ে যাওয়ার নয়। চিরউজ্জ্বল বর্তমানে। ব্যক্তিজীবনেও তেমনি থাকে অতীত কিছু কর্ম, কিছু উদ্যোগ, কিছু কথা, কিছু ভালবাসা, যা তার বর্তমান ও ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করে। জীবনকে সুন্দর করে। আসলে আজকের সুন্দর বর্তমান আগামীকালের সুন্দর অতীত। আজকের পরিকল্পিত সফল বর্তমান, আগামীকালের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। তাই তো যা কিছু সুন্দর, যা কিছু ভাল-কল্যাণকর তা বর্তমানেই করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই অতীত হয়ে গেল ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ। আর আগমন ঘটল ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের। ১ জানুয়ারি নতুন বছরের প্রথম দিন। আন্তর্জাতিক নববর্ষ। অনেকেই একে ইংরেজী নববর্ষ হিসেবে ভুল করে থাকে। মিসরীয়রা সর্বপ্রথম সময় নির্ধারণের পন্থা আবিষ্কার করলেও মূলত রোমানদের সময়ই দিন গণনার জন্য ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সংশোধন ও সংযোজনের পর সর্বশেষ ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে রোমান প-িত পোপ গ্রেগরি বর্তমান ক্যালেন্ডার প্রচলন করেন। তাই এর নাম গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। পরবর্তীতে ক্যালেন্ডারের এই সর্বশেষ সংস্করণ সকল দেশ গ্রহণ করে। ব্রিটিশরাও তাদের পার্লামেন্টে আইন পাস করে এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। বছরের শুরুর দিন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তারিখ ধরা হলে গ্রেগরিয়ান তার ক্যালেন্ডারে ১ জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন ধরে বছরের হিসাব করে। ১৫৮২ সালের সেই সময় থেকে ১ জানুয়ারি নববর্ষ। ১৭৫২ সাল থেকে আমেরিকা ও ব্রিটেন ১ জানুয়ারিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নববর্ষ পালন শুরু করে। চন্দ্র ক্যালেন্ডার ও কোন কোন অঞ্চলের নিজস্ব ক্যালেন্ডার থাকলেও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার দখল করে নিয়েছে সারাবিশ্ব। তাই এই নববর্ষের কদর ও আনুষ্ঠানিকতা বিশ্বব্যাপী। ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে নিরন্তর প্রবাহমান সময়কে ছকে আটকানোর প্রচেষ্টা মাত্র। আর এই ছকে আটকা পড়ে যায় ঘটনাপ্রবাহ, যাকে আমরা বলি ইতিহাস। ৩১ ডিসেম্বর ঘড়ির কাঁটা ১২টা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই নববর্ষের প্রথম মুহূর্তে আতশবাজির মাধ্যমে বিশ্ব বরণ করে নতুন সালকে। গভীর রাত পযর্ন্ত চলে আনন্দ-উল্লাস। রাস্তায় হাজারো মানুষ নেচে-গেয়ে মুখরিত থাকে। সারাবিশ্ব বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া তো অনেক জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করে থাকে। আমাদের দেশেও থার্টিফার্স্ট নাইট উৎসব উদযাপনের কমতি নেই। এই যে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার এত উৎসব, এত আয়োজন এর কারণ কী? পুরাতন বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ইত্যাদি না ভেবে নতুন স্বপ্নে নতুন আশায় নতুন বছরকে বরণ করে নেয়াই হচ্ছে এর কারণ। অতীতে কোন ব্যর্থতা থাকলে তার গ্লানিতে না ভুগে নতুন উদ্যমে শুরু করতে হবে। বিগত বছরের স্মৃতি হয়ত আবেগময় করে তুলবে। ভাবুন এটা জীবনেরই অংশ। নতুন বছরে নতুন স্বপ্নের বীজ বুনতে হবে। অসীম ভবিষ্যত আর অসীম অতীতের মাঝখানে বর্তমান একেবারেই সসীম। দুই সময়ের জংশন মাত্র। বর্তমানের ব্যাপ্তি এক মুহূর্ত বা ঘণ্টা বা দিন বা বড়জোর এক বছর। তাই প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। বর্তমানকে এক বছর ধরেই আমরা কর্মপরিকল্পনা করি। রাষ্ট্রীয়ভাবে যেমন অফিস-আদালতে কর্মপরিকল্পনা থাকে, তেমনি আমাদের ব্যক্তি জীবনেও কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার। সংসার জীবনে অনেক সময় একঘেয়েমি পেয়ে বসে। বিনা কারণেই মনে হয় কোনকিছু ভাল লাগে না। তাই নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনায় জীবনটাকে বৈচিত্র্যময়, আনন্দময় ও উপভোগ্যময় করার বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। কোন অবাস্তব পরিকল্পনা বা স্বপ্নের পেছনে ছুটবেন না। স্বপ্ন দেখা ভাল। কারণ স্বপ্নহীন জীবন তো জীবন নয়। তাই বলে আকাশকুসুম স্বপ্ন যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, সে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে হতাশা বাড়বে। রাষ্ট্রীয় বাজেটের মতো প্রতিটি পরিবারের জন্যই বাজেট থাকা একান্ত প্রয়োজন। বছরের শুরুতে এই বাজেট পরিকল্পনা করতে হবে। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সেটা বাৎসরিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক হতে পারে। চাকরিজীবীদের ব্যবসায়ী বা অন্য পেশার তুলনায় এই বাজেট প্রণয়ন সুবিধাজনক। সন্তানদের পড়াশোনার সম্ভাব্য খরচের বিষয়টি বছরের শুরুতেই মাথায় রাখতে হবে। ঈদ, পূজা বা অন্য কোন নির্ধারিত উৎসবের জন্য অর্থ সংস্থানের বিষয়টি পরিকল্পনায় গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য অর্থের উৎস চিহ্নিত করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা বা চিকিৎসার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থাকে। আমাদের ভাবনায় থাকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু বিপদে অনেক সময়ই সে ব্যবস্থা হয়ে ওঠে না। তাই এ খাতে বাজেট রাখতে হবে। এছাড়া অপ্রত্যাশিত কিছু অনুষ্ঠান বা উৎসব থাকে যেখানেও বড় ধরনের খরচের বিষয় এসে হাজির হয়। তাই প্রতিটি পরিবারেরই আপদকালীন ফান্ড সৃষ্টি করা প্রয়োজন। জীবনকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য বছরে দু-একবার ভ্রমণের বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন। পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসের গুরুত্ব বিবেচনায় তালিকা থাকা প্রয়োজন, যাতে সে তালিকা অনুযায়ী তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে পারেন। পরিকল্পনাই জীবনের মূল বিষয় নয়। পরিকল্পনা করলেই সবকিছু পরিকল্পনামাফিক হবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। তবে পরিকল্পনা যে কোন কাজকে অনেকদূর এগিয়ে নিবে যাবে। সবশেষে মূল কথা হলো, বর্তমান সে এক মুহূর্তের হোক বা এক বছরের হোক, বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তই সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। আলসেমিকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করুন। আজকের কাজ কালকে নয়। আজকের কাজ আজকেই করার মানসিকতা তৈরি করুন। অবহেলায় আর সময় নষ্ট নয়। তবেই অনাগত ভবিষ্যত সুন্দর হবে এবং তা এক সময় গৌরবময় অতীতে পরিণত হবে। বর্তমানের সুন্দর কোন স্বপ্ন, সুন্দর কোন পরিকল্পনা, সুন্দর কোন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়ে সুন্দর ভবিষ্যত নিয়ে আসবে- এটাই আমাদের কাম্য। শুভ নববর্ষ-২০১৬ খ্রিস্টাব্দ। ছবি : নাসিফ শুভ মডেল : জীবন ও নীহারিকা কোরিওগ্রাফি : কামরুল হাসান সেলিম
×