ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আফ্রিদির অভিনন্দন

মনও জয় করতে চান আমির

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

মনও জয় করতে চান আমির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর পাকিস্তান জাতীয় দলে ফিরেছেন দেশটির আলোচিত পেসার মোহাম্মদ আমির। ২০১০ সালে আরও দুই ক্রিকেটারসহ স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে যিনি বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন। জেল-জরিমানা-সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তানের নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য ঘোষিত ওয়ানডে ও টি২০ দলে সুযোগ হয়েছে আমিরের। তাকে দলে নেয়া নিয়ে শেষ মুহূর্তেও নাটক কম হয়নি। কার্যত দলের খেলোয়াড় এবং ম্যানেজমেন্ট দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল। প্রত্যাবর্তনের পর সেই আমির জানিয়েছেন, তার জীবনে এখন দুটিই লক্ষ্য, প্রথমত মাঠে উইকেট শিকার করে পাকিস্তানকে জেতানো এবং পুনরায় ভক্ত হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া। ওদিকে এক সময়ে বিরোধিতা করা টি২০ অধিনায়ক আফ্রিদিও তাকে স্বাগত জানিয়েছেন, বিশেষ করে বিনয়ের অবতার হয়ে ফিরে আসা ‘অন্য আমিরকে’ দেখে কিছুটা যেন মুগ্ধ আধুনিক পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় এই অলরাউন্ডার। ‘আমি নিশ্চিত ভক্তরা আমাকে আবার আগের মতো ভালবাসবে। এ জন্য আমাকে মাঠেই প্রতিদান দিতে হবে। যে উদ্দ্যেশ্যে দলে নেয়া হয়েছে সেটি পূরণ করতে চাই। চাই উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের জয়ে ভূমিকা রাখতে। আমার বিশ্বাস উইকেট এবং ভালবাসা দুই-ই আসবে।’ দলে ডাক পাওয়ার পর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন ২৩ বছর বয়সী আমির। দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়া মোটেই সহজ ছিল না বলে উল্লেখ করে তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটি ছিল আমার জীবনের কঠিনতম সময়। পুনর্জন্মের সুযোগ করে দেয়ায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), দেশবাসী এবং ভক্তদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের চাওয়া ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। দেশের ক্রিকেটের জন্য আমি আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করব। এই কঠিন শিক্ষাটাই আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায়।’ উইকেট এবং ভালবাসা দুই-ই জয় করতে চাইÑ আমিরের এই বাক্যের ঢের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রয়েছে। যা বুঝতে খুব পেছনে যেতে হবে না। সাম্প্রতিক উদারণই যথেষ্ট। আমির যখন জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পান তখন তার সঙ্গে অনুশীলনে অনীহা জানিয়ে ক্যাম্প ছেড়ে যান আজহার আলি ও মোহাম্মদ হাফিজ। এমন কি আমির থাকলে নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন মর্মে পিসিবির কাছে চিঠি লেখেন ওয়ানডে অধিনায়ক আজহার! পিসিবি প্রধান শাহরিয়ার খানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তারও আগে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে আফ্রিদি বলেছিলেন, আমিরের উপস্থিতি ড্রেসিং রুমের পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সেই আফ্রিদি এখন খুশি। খুশি আমিরের আচরণে। তিনি তার টুইটারে লিখেছেন, ‘আমির দলে ফেরায় আমি খুশি। আমি যখন প্রথম ইংল্যান্ডে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে সত্য বলেছিল। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। তাই দলে নেয়া হয়েছে।’ আফ্রিদি অবশ্য হাফিজ ও আজহারের আবেগের জায়গাটাও বুঝতে পারছেন, ‘স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনা গোটা পাকিস্তান ক্রিকেটকে ল--ভ- করে দিয়েছিল, আমাদের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছিল। তাই ওরা অমনটা বলেছে। তখন ওর বয়স খুব কম ছিল। এখন সে ব্যবহার ও মাঠের পারফর্মেন্স দিয়ে সব কিছু জয় করার সুযোগ পাচ্ছে।’ ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে লর্ডস টেস্টে অভিনব স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়েন তৎকালীন অধিনায়ক সালমান বাট, অপর পেসার মোহাম্মদ আসিফ ও আমির। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জেল-জরিমানার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন তারা। গত সেপ্টেম্বরে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান আমির। সুযোগটাকে দারুণভাবে কাজে লাগান। বল হাতে দুরন্ত পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেন। বাংলাদেশের বিপিএলেও যথারীতি ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে ফের পাকিস্তান দলে জায়গা করে নেন। অন্য দুজনের সঙ্গে আমিরের মূল পার্থক্য তিনি শুরু থেকেই অপরাধ শিকার করে আসছিলেন। এ প্রসঙ্গ টেনে আফ্রিদি বলেন, ‘আমির যেহেতু পাকিস্তানের আদালত, জনগণ সবার সামনেই নিজের দোষ স্বীকার করেছে, তাই সে আরও একটি সুযোগ পেতেই পারে। ওতো সত্য কথা বলেছে, অন্য দুজন (আসিফ ও বাট) ঘটনার দুই তিন বছর পরও মিথ্যে বলে গেছে। আশা করছি আমির এবার সুন্দর ভবিষ্যত ফিরে পাবে।’
×