ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জাহিদুল আলম জয়

খেলা ॥ দেশী ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ১ জানুয়ারি ২০১৬

খেলা ॥ দেশী ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য বিদায়ী ২০১৫ সালে নিজেদের ইতিহাসের সেরা সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। একের পর এক পরাশক্তিকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে বছরটিকে সোনার হরফে লিখেছেন মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মুস্তাফিজরা। সেই ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ থেকে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। ২৯ বছরের পথচলায় এবার সেরা সাফল্য পেয়েছে টাইগাররা। এ বছর ১৮ ম্যাচের ১৩টিতেই জিতেছে। তাও আবার ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে। টাইগারদের থাবায় ১৯৯৯ সালের পর দ্বিতীয়বার হেরেছে পাকিস্তান। প্রথমবারের মতো সিরিজ হারানোর পাশাপাশি পাকিদের বাংলাওয়াশও করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শুধু তাই নয়, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও প্রথমবারের মতো সিরিজে হারিয়েছে। অর্জনের ডালিতে আরও আছে। বিদায়ী বছরেই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার গৌরবে ভেসেছে বাংলাদেশ। বছরে একটি সিরিজেও হারেনি মাশরাফিবাহিনী। বিশ্বকাপ ক্রিকেট দিয়েই বছরে সাফল্যযাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে মিশন শুরু করে মাশরাফির দল। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। শ্রীলঙ্কার কাছে পরের ম্যাচটিতে হার ৯২ রানে। লঙ্কানদের কাছে নাকাল হওয়ার পরের ম্যাচেই ঘূরে দাঁড়ায় টাইগাররা। স্কটল্যান্ডকে হারায় ৬ উইকেট। এরপর এমন অবস্থা ছিল, কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে ইংল্যান্ডকে হারাতে হবে। সেই অসাধ্যই সাধন করে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের জনকদের হারিয়ে সেরা আট নিশ্চিত করে লাল-সবুজের দেশ। এরপর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হারলেও লড়াই করে বাংলাদেশ। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় মাশরাফির দল। কিন্তু ম্যাচটি ঘিরে ছিল তুমুল বিতর্ক। আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের কারণেই মূলত হারতে হয় বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতেও স্বর্ণালী সাফল্য পায় টাইগাররা। একের পর এক পরাশক্তিকে হারিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দেয় বাংলাদেশ। টাইগারদের প্রথম শিকার হয় পাকিস্তান। তাদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাওয়াশ করে। ফলে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে পূর্ণশক্তির কোন দলকে সিরিজে হারিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ। পাকিস্তান গো-হারা হেরে যাওয়ার পর এই জমিনে আসে ভারত। শুধু বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধই নেয়নি, সিরিজও জিতে নেয় বাংলাদেশ। আরেকবার বাংলাওয়াশের কাছাকাছি গিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিরিজ জয় করে ২-১ ব্যবধানে। এরপর আসে আরেক পরাক্রমশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। টি২০ সিরিজ অতিথিরা সহজেই জিতে নেয়। প্রথম ওয়ানডেও জেতে তারা। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে দুর্দান্তভাবে জিতে টাইগাররা সিরিজ জিতে নেয় ২-১ ব্যবধানে। এরপর নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে টালবাহানা করে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে খেলতেই আসেনি। যে কারণে জিম্বাবুইয়েকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের সহজেই ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বছরটা রঙিন করে শেষ করে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরিকীর্তি বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনের সিডন পার্ক হয়ে যায় বিশাল একটি ক্যানভাস। আর সেই ক্যানভাসে ব্যাটটাকে তুলি বানিয়ে দারুণ ছবি আঁকেন বাংলাদেশী তারকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি করেন। স্বপ্নের মতো ফর্মে থাকা মাহমুদুল্লাহ ঠিক পরের ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আরেকটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে পৌঁছে যান অনন্য উচ্চতায়। যে উচ্চতায় কেবল মাহমুদুল্লারই বসবাস। বিশ্বকাপের আগের চার আসরে (১৯৯৯-২০১১) টানা অংশ নিয়ে একাধিক ম্যাচ জিতলেও কোন সেঞ্চুরি ছিলনা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। পঞ্চম আসরে অধরা সেই সেঞ্চুরি রেকর্ড গড়ে মেটান রিয়াদ। মুস্তাফিজুরে মাত্্ বিশ্ব ওয়ানডেতে ২০১৫ সাল যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সোনালি বছর, তেমনি ‘বিস্ময়-বালক’ মুস্তাফিজুর রহমানের জন্যও স্বপ্নের বছর। এ বছরে অভিষেক হওয়ার পরই ক্রিকেটবিশ্বে হৈচৈ ফেলেন দেন চোখ ধাঁধানো বোলিং পারফরমেন্স প্রদর্শন করে। ১৮ জুন অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ ওয়ানডেতে ২৬ উইকেট কব্জা করেছেন সাতক্ষীরার এই যুবা। যে কারণে আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের তালিকায় প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে জায়গা করে নেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার। এর আগে ২০০৯ সালে সাকিব আল হাসান প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বর্ষসেরা তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। তবে সেটি ছিল টেস্ট ক্রিকেটে। ২০১৫ সালে যারা বল হাতে জ্বলে উঠেন তাদের মধ্যে মুস্তাফিজই ছিলেন সবচেয়ে বিধ্বংসী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই একের পর এক কীর্তি গড়েন এ পেসার। অভিষেকের পর নিজের প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। বিখ্যাত ‘কাটার’ দিয়ে পাকিস্তানকে টি২০ সিরিজে কাঁপিয়ে দেয়ার পর ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইনকে ধসিয়ে দেন এই বাঁ-হাতি পেসার। বিপিএলের সফল প্রত্যাবর্তন এক বছরের বিরতির পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) সফল প্রত্যাবর্তন ঘটে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিলে বিপিএলের তৃতীয় আসর দর্শকদের মন জয় করে। এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে তারা ৩ উইকেটে পরাজিত করে বরিশাল বুলসকে। শিরোপা জয়ের পর কুমিল্লা নগর-গ্রামজুড়ে আনন্দ উৎসব হয়েছে। যেন মিছিলের নগরী হয়ে যায় কুমিল্লা। নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দির পাড় হয়ে যায় জনসমুদ্র। এমন জয়ে ঘরে ছিল না কেউ। ছেলে-বুড়ো সবাই নেমে আসেন রাস্তায়। মিছিল আর আতশবাজিতে রঙিন হয়ে ওঠে নগরীর অলি-গলি। শিরোপা হাতছাড়া হলেও অখুশি নন বরিশালের সমর্থক, ক্রিকেটপ্রেমীরা। এবারের আসরে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন কুমিল্লার হয়ে খেলা পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অলরাউন্ডার আসহার জাইদি। একই দলের অলক কাপালি ফাইনালের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জয় করেন। আর সবচেয়ে মূল্যবান ক্রিকেটার নির্বাচত হন চ্যাম্পিয়ন দলের তরুণ উদীয়মান আবু হায়দার রনি। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ বছরের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল মাঠে গড়ায়। দুর্দান্ত খেলে স্বাগতিক বাংলাদেশ টুর্নামেন্টের ফাইনালেও পৌঁছে যায়। ৮ ফেব্রুয়ারি শিরোপানির্ধারণী ম্যাচে মালয়েশিয়া অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর একপর্যায়ে ২-২ ব্যবধানে সমতা ফেরায় লোডভিক ডি ক্রুইফের দল। কিন্তু ম্যাচের শেষ মুহূর্তে কর্নার থেকে দুর্দান্ত এক গোল করে শিরোপা জয় করে অতিথি মালয়েশিয়া। অবশ্য শিরোপা হাতছাড়া হলেও বঙ্গবন্ধু কাপের সেরা খেলোয়াড় হন বাংলাদেশের জামাল ভুইয়া। বার্সিলোনার পঞ্চমুকুট ডিসেম্বরে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে ২০১৫ সালটা স্বর্ণালী সাফল্য দিয়ে শেষ করে স্পানিশ পরাশক্তি বার্সিলোনা। এই বছরে মোট পাঁচটি শিরোপা শোকেসে ভরে ক্যাটালানরা। স্প্যানিশ লা লীগা, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, স্প্যানিশ কোপা ডেল রে, উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ। স্প্যানিশ সুপার কাপে না হারলে ২০০৯ সালে পেপ গার্ডিওলার পর আবারও এক বছরে ছয় শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ত লুইস এনরিকের দল। তা না হলেও ‘পঞ্চমুকুটে’ই মহাখুশি বার্সিলোনা। এ্যাথলেটিক্সে কলঙ্ক, বোল্টের কীর্তি বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সে ২০১৫ সাল স্মরণীয় করে রাখেন জ্যামাইকার গতিদানব উসাইন বোল্ট। চীনের বেজিংয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে তিনটিতেই স্বর্ণপদক জয় করেন বিশ্বের দ্রুততম মানব। কিন্তু এ বছরই এ্যাথলেটিক্স অঙ্গন বেশি সরগরম ছিল দুর্নীতি ও অনিয়মের কেলেঙ্কারিতে। ডোপিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন রাশিয়ান এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন।
×