ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

চার বছরে ২০০ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে বাতিঘর

শাহনেওয়াজ শাহ্, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ২৫ জুন ২০২৫

চার বছরে ২০০ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে বাতিঘর

নাম নেই, ঠিকানা নেই, কেউ ডাকে না, কাঁদে না— এমন শত শত অচেনা মানুষ মৃত্যুর পরেও যেন পান সম্মানের শেষ বিদায়। এই মহান দায়িত্ব নিঃশব্দে পালন করে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানবিক সংগঠন ‘বাতিঘর’। চার বছরে তারা দাফন সম্পন্ন করেছে ২০০টি বেওয়ারিশ মরদেহের।

সাম্প্রতিক সময়ে, গত মঙ্গলবার (২৪ জুন), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পূর্ব মেড্ডা এলাকার তিতাস নদীসংলগ্ন বেওয়ারিশ কবরস্থানে দাফন করা হয় এক অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ। আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী এই মহিলার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল গত শুক্রবার, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের খাড়েরা ইউনিয়নের দারোগাবাড়ি এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাঁশঝাড় থেকে। পরিচয় না মেলায় পুলিশ মরদেহটি বেওয়ারিশ ঘোষণা করে দাফনের দায়িত্ব দেয় বাতিঘরকে। আর এই দাফনের মধ্য দিয়ে বাতিঘর তাদের মানবিক যাত্রায় ছুঁয়ে ফেলে দুই শতকের এক অনন্য মাইলফলক।

এই মহৎ কার্যক্রমের নেতৃত্বে আছেন বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. আজহার উদ্দিন। তিনি জানান,“২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি একটি অচেনা মরদেহ দাফনের মধ্য দিয়ে আমাদের পথচলা শুরু হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক খরচে আমি নিজে ২০০টি বেওয়ারিশ লাশের দাফন করেছি। এই কাজ শুরু হয়েছিল করোনাকালে, এখন এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা টাকা-পয়সা নয়, হৃদয়ের সাহস আর মানবিকতা নিয়ে এগিয়ে যাই। প্রতিমাসে গড়ে ৫ থেকে ৭টি লাশ দাফন করি। যাদের পরিচয় নেই, তাদের দাফন যেন মর্যাদাহীন না হয়, সেটাই আমাদের অঙ্গীকার।”

বাতিঘরের সদস্যরা নিজের হাতে মরদেহ ধোয়ানো, কাফনের কাপড় প্রস্তুত, দাফনের সব উপকরণ সংগ্রহ এবং জানাজার নামাজ পর্যন্ত সব কাজই সম্পন্ন করেন নিঃস্বার্থভাবে। দুর্ঘটনায় পিষ্ট, অর্ধগলিত, ট্রেনে কাটা কিংবা পানিতে ডুবে যাওয়া মরদেহ— কোনোটিই তাদের এই মানবিক প্রয়াস থেকে বাদ পড়ে না।


যেখানে অধিকাংশ মানুষ মৃত্যু দেখলে দূরে সরে যায়, সেখানে বাতিঘর মৃত্যুতে জাগায় মর্যাদা ও শ্রদ্ধা। তাদের এই কাজ শুধু দাফনের সীমায় আবদ্ধ নয়— এটি এক মানবিক আন্দোলন, যা আমাদের সমাজে জাগিয়ে তোলে সহমর্মিতা ও মানবতার আলো।

বাতিঘরের এই নিঃস্বার্থ উদ্যোগ কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়, বরং ছুঁয়ে যায় দেশের প্রতিটি মানবিক হৃদয়কে।

Jahan

×