ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ডিমলায় নদী আগ্রাসন, প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে বালু বাণিজ্য, হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনজীবন

রিপন ইসলাম শেখ, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২৩:১২, ১৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৪, ১৬ জুন ২০২৫

ডিমলায় নদী আগ্রাসন, প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে বালু বাণিজ্য, হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনজীবন

ছবি:সংগৃহীত

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা, বুড়ি তিস্তা, কুমলাই, নাউতারা সহ একাধিক নদ-নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে। শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে নদীগুলোতে চর জেগে উঠলেই শুরু হয় বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য। প্রভাবশালী একটি চক্র প্রতিদিনই ট্রাক্টর দিয়ে অবৈধভাবে উত্তোলন করছে বিপুল পরিমাণ বালু ও মাটি। এতে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, ধসে পড়ছে তীর, হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

সরকার যেখানে বালু-মাটি উত্তোলনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে, সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় এই অবৈধ বালু ব্যবসা চলছে দিনের পর দিন।

স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন তিস্তা, বুড়ি তিস্তা ও নাউতারা নদীর বিভিন্ন ঘাট থেকে শতাধিক ট্রাক্টর বালু বহন করছে। নাউতারা ইউনিয়নের পূর্ব সাতজান, শালহাটি বাজার, খগাখড়িবাড়ীর পাগলপাড়া, টেপাখড়িবাড়ীর তেলির বাজার, তিস্তা বাজার, ডিমলা সদর ইউনিয়নের নটাবাড়ী, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা ও গয়াবাড়ীর কুমলাই নদীর ঘাট ঘুরে দেখা গেছে—গ্রামীণ পথঘাট পেরিয়ে নদী থেকে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে ট্রাক্টর।

এই চক্র বছরের পর বছর ধরে বালু উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে সব কিছু, এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর।

নদীর তীরবর্তী কৃষকরা জানান, বালু তোলার ফলে বর্ষায় নদী ধারে ধস নামে, জমি ও ফসল নদীগর্ভে বিলীন হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, তারা প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। কারণ ওই চক্রের পেছনে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছায়া।

স্থানীয় বাসিন্দা ওসমান গনি বলেন, “গুটিকয়েক লোকের ব্যক্তিগত লাভের জন্য পুরো পরিবেশ ও নদীব্যবস্থা ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রশাসন নিশ্চুপ। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইজারা নেওয়া এক ঠিকাদার গোলজার হোসেন বলেন, “বৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ অবৈধ বালুখেকোরা কম দামে বাজার দখল করে নিচ্ছে।” তার মতে, এভাবে চলতে থাকলে কেউ ইজারায় আগ্রহী থাকবে না এবং সরকারও রাজস্ব হারাবে।

২০২৩ সালে সংশোধিত বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, অবৈধ বালু উত্তোলনের শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছর জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা। পাশাপাশি ২০১৯ সালে হাইকোর্ট নদীকে "আইনি সত্তা" ঘোষণা করে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন, যা নদীর পক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে।

এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, “যারা অবৈধভাবে বালু বা মাটি উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।”

মারিয়া

×