ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফুলবাড়ীতে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।।

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ১০ জুন ২০২৫

ফুলবাড়ীতে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গত চার দিন ধরে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। পবিত্র ঈদুল আজহার আগের দিন থেকে বৃষ্টির দেখা নেই। জেলা জুড়ে বিরাজ করছে মৃদু তাপপ্রবাহ। গরমের কারণে জনজীবন অস্বস্তিতে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে তেমন কেউ বের হচ্ছে না। গরমে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। শুধু মানুষই নয়, গরমে হাঁসফাঁস করছে পশুপাখিরাও।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রোদ আর গরমের কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। বন্ধ রয়েছে হাটবাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন, তাদের কাহিল অবস্থা। পথের ধারে গাছতলায় ছায়ায় বসে মানুষজন বিশ্রাম নিচ্ছেন। গবাদিপশুদের গাছের ছায়ায় বেঁধে রাখলেও গরমে তারাও কষ্ট পাচ্ছে। এদিকে অত্যধিক গরমে মাঠের কাজে গিয়েও টিকতে পারছেন না দিনমজুর ও কৃষকরা।

উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক বাদল সরকার জানান, এখন আমনের বীজতলা তৈরির সময়। সকালে বীজতলার জমিতে পানি দিয়েছেন। পাওয়ার টিলার নিয়ে জমি চাষ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তীব্র রোদ আর গরমে জমিতে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হয়নি। পরে টিলার নিয়ে ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেন তিনি।

একই এলাকার দিনমজুর জাইদুল হক জানান, পাশের এক কৃষকের হলুদের খেতে নিড়ানি দিতে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ কাজ করার পরই তার জামা-লুঙ্গি ঘামে ভিজে যায়। প্রচণ্ড গরমে আর জমিতে কাজ করা সম্ভব হয়নি।

শাহ বাজারের ধান ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল বলেন, “বেশকিছু গেরস্ত বাড়িতে ধান কিনে রেখেছি। সেসব ধান গুদামে আনার জন্য গতরাতে কয়েকজন ভ্যানচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু আজ মাত্র একজন ভ্যান নিয়ে এসেছে। সেও বাজারের কাছাকাছি একটি বাড়ি থেকে সামান্য কিছু ধানই গুদামে আনতে পেরেছে। গরমে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারেনি। ব্যবসাও ঈদের পর থেকে অনেকটা থমকে গেছে।”

ভ্যানচালক কালু মিয়া বলেন, “সকালে গাছের গুঁড়ি নিয়ে স’মিলে ফারাই করতে এসেছিলাম। তীব্র গরমে গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এত গরমে কাজ করা দুঃসাধ্য। তবুও গাড়ি নিয়ে বের হতেই হয়। কাজ না করলে খাবো কী?”

উত্তর বড়ভিটা গ্রামের অটোরিকশাচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, “ঈদের সময় সাধারণত রাস্তায় যাত্রী বেশি থাকে। কিন্তু এবার গরমের কারণে উল্টো ঘটনা ঘটেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা, মানুষ ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। আমাদের আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে।”

আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে জেলার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। জেলাজুড়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফলে গরম অনুভূত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও একই পরিস্থিতি বিরাজমান থাকবে বলে জানান তিনি।
 

সজিব

×