
দীর্ঘ ২৫ বছর থেকে আইসক্রিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের ৪৯ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম। পেশায় একজন আইসক্রিম বিক্রেতা৷ বিভিন্ন শহরে আইসক্রিম বিক্রি করে ৫ সদস্যের সংসারের ঘানি টানার পাশাপাশি টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন একটি ক্বওমী মাদ্রাসা, একটি মসজিদ ও একটি ঈদগাহ মাঠ করার জন্য।
একসময় তাঁর এই স্বপ্ন পূরণও হয়। তিনি প্রতিদিন রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন শহরে নিজের তৈরি আইসক্রিম বিক্রি করেন। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই ৫ সদস্যের সংসার কোনমতে চলে। এছাড়াও ছেলেমেয়েদের লেখা পড়ার খরচ যোগাতে হয় তাকেই। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি আইসক্রিম বিক্রির টাকা জমিয়ে রেখে সেই টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে নির্মাণ করেছেন একটি মসজিদ, একটি এয়াতিমখানা ও ক্বওমী মাদ্রাসা এবং ঈদগাহ মাঠ।
জানা যায়, উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের উত্তর তারাপুর গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর পৈত্রিক নিবাস রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায়। অভাবের তাড়নায় তাঁর পিতা মকবুল হোসেন শ্বশুর বাড়ি উত্তর তারাপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন৷ দারিদ্রতার জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ছেলেকে লেখা পড়া করাতে পারেননি তিনি। কিশোর বয়সেই জাহাঙ্গীর আলম বাবার হাত ধরেই দিনমজুরের কাজ করতেন। হঠাৎ করে তাঁর বাবা মকবুল হোসেন মারা যায়। তখন তার উপরেই আসে সংসারে ঘানি।
২৫বছর থেকে তিনি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজ, হাট-বাজারে নিজের তৈরি আইসক্রিম বিক্রি করেন। পরে বিভাগীয় শহর রংপুর, জেলা শহর গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন যায়গায় আইসক্রিম বিক্রি শুরু করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের উত্তর তারাপুর গ্রামে সাত শতাংশ জমি ক্রয় করে সেই জমিতে দারুল কুরআন ক্বওমী মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং নামের একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা এবং মসজিদ নির্মাণ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। একই গ্রামে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য দশ শতাংশ জমি ক্রয় করে ঈদগাহ মাঠ করে দেন তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, জাহাঙ্গীর আলম আইসক্রিম বিক্রেতা হলেও তিনি সবার আগে গরীব-অসহায়দের বিপদে এগিয়ে আসেন। আইসক্রিম বিক্রির টাকায় সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা দিয়ে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মাদ্রাসা করতে কারো কাছে কোন টাকা পয়সা নেয়নি। এছাড়াও ঈদগাহে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করে দিয়েছেন। অথচ থাকার ঘর দুটিও ভালো না। সামান্য বৃষ্টি আসলেই চাল বেয়ে পানি ঘরে আসে। নিজের বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কোন আবাদি জমি নেই৷
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, 'জাহাঙ্গীর আলমের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নিজের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে মাদ্রাসা, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ করেছে। কারো কোন অনুদান গ্রহণ করেনি। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে অবহেলিত এলাকায় দ্বীনি শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে।'
সমাজ সেবক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, 'জাহাঙ্গীর আলমের অদম্য ইচ্ছা ছিল নিজের টাকায় মাদ্রাসা মসজিদ করার। তিনি আইসক্রিম বিক্রি করে সে টাকা জমিয়ে রেখে প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছে, যা এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। আমি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো।'
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমি অভাবের তাড়নায় বেশি লেখা পড়া করতে পারিনি। আমার সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াচ্ছি ভালো মানুষ বানানোর জন্য। সেইসাথে আমি এলাকায় এতিম, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ২৩ বছরের আইসক্রিম বিক্রির জমানো টাকায় একটি ক্বওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন মাদ্রাসাটি এলাকায় দ্বীনি জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। এখানে অনেক শিক্ষার্থী পড়ছে। এখন মাদ্রাসাটি আমার একার পক্ষে চালানো খুব কষ্টসাধ্য। তাই সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।'
Jahan