
ছবিঃ দৈনিক জনকণ্ঠ
বান্দরবানের থানচি উপজেলার সদর ইউনিয়নের টিঅ্যান্ডটি পাড়ায় পানির অভাবে ৬০ মুসলিম পরিবারের এবার ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। ঝিরি থেকে গ্রামে পানি সরবরাহের (জিএফএস) পাইপগুলো রাতের অন্ধকার কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফলে পানির অভাবে হতদরিদ্র এসব পরিবারের প্রায় ৩০০ সদস্য ঈদের দিন কোরবানির গরুর মাংস ধোয়া, রান্না সহ নিত্যদিনের কাজে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। সোমবার দুপুরে থানচি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন পাড়াবাসীরা।
স্থানীয়রা জানায়, বিগত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নের টিঅ্যান্ডটি পাড়া থেকে পূর্ব-দক্ষিণের তিন কিলোমিটার দূরত্বে ছাংদাক ঝিরি থেকে ৮ হাজার বর্গফুট লম্বা জিএফএস পাইপের মাধ্যমে এসব পরিবারের জন্য পানির সুব্যবস্থা করা হয়। কয়েক দিন আগে ভারী ও অবিরাম বৃষ্টিতে জিএফএস পাইপে ফাটল ধরলে ঈদের আগেই গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তা মেরামত করেন। কিন্তু গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা পাইপটি টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে। এতে ঈদুল আজহার দিনে গরুর মাংস ধোয়া, ছেলে-মেয়েদের গোসল করা, ঈদের নামাজের অজু করা সহ নিত্যদিনের কাজের পানি পাওয়া যায়নি। টিঅ্যান্ডটি পাড়া থেকে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে থানচি বাজার থেকে পানি সংগ্রহ করে আনতে হয়েছে বলে গ্রামবাসী জানান।
ঈদের দ্বিতীয় দিন রবিবার উপজেলা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে টিঅ্যান্ডটি পাড়া গ্রামটি ঘুরে দেখা যায় সেখানে সবাই মুসলিম পরিবার। গ্রামটি থেকে পূর্ব-দক্ষিণে ছাংদাক ঝিরির প্রায় তিন কিলোমিটার ঝিরিতে ৫-৬ হাজার বর্গফুট লম্বা জিএফএস পাইপের কাটা অংশগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।
টিঅ্যান্ডটি পাড়ার বাসিন্দা মো. ইউছুপ জানান, পাড়া স্থাপনের পর থেকে শঙ্খ নদের পানি ব্যবহার করে আসছেন তাঁরা। সরকার আমাদের গ্রামে ছাংদাক ঝিরি থেকে জিএফএস পাইপের মাধ্যমে ফিল্টারিং করে বড় সাইজের দুটি টাংকিসহ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে দেয়। আমরা সবাই দীর্ঘ সাত-আট বছর ধরে এই পানি ব্যবহার করে আসছি। এবার ঈদের আগের দিন পাইপ ঠিকও করেছি। কিন্তু ঈদের সকালে দেখি পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ঝিরিতে গিয়ে দেখি কে বা কারা পাইপগুলো টুকরা টুকরা করে কেটে ফেলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. গফুর ও মো. এরশাদ বলেন, "আমরা দিনমজুরি করে পেট চালাই। নতুন করে পাইপ কিনে ঠিক করা আমাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। ঈদের তিন দিন যে পরিমাণ পানির জন্য কষ্ট করেছি, সেটি চোখে না দেখলে বোঝা সম্ভব না। আমাদের ছেলে-মেয়েদের ওপর সহানুভূতি রেখে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বলে জানান তাঁরা।"
এ বিষয়ে থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অংপ্রু ম্রো বলেন, "বর্তমানে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামীণ অবকাঠামোগত মেরামত সংস্কার, নির্মাণসহ টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), থোক বরাদ্দ সহ সব বরাদ্দের ওপর ২০২৪-২৫ সালে গৃহীত প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে ফেলেছি। ভবিষ্যতে বরাদ্দ পেলে প্রথম বিবেচনা রাখব টিঅ্যান্ডটি পাড়ার মানুষের জন্য।"
জানতে চাইলে উপজেলার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী (অ.দা.) স্বপন চাকমা বলেন, "আমি এখন ঈদের ছুটিতে আছি। ছুটি শেষ করে আগামী ১৫ জুন পরিদর্শন করে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
এ বিষয়ে থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, "পানির পাইপলাইন যেই কাটুক দোষীদের আইনে আওতায় আনার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
পৃথী