
ঈদ উৎসবে দর্শনার্থীদের মন রাঙাতে প্রস্তুত শ্যামলীর শিশুমেলা
ফুরিয়ে আসছে সময়। সেই সুবাদে যেন শোনা যাচ্ছে উৎসবের আগমনী ধ্বনি। বারো মাসের তেরো পার্বণের এই বাংলাদেশে আনন্দের উপলক্ষটি হাজির হতে বাকি মাত্র একটি দিন। অর্থাৎ কাল শুক্রবার পেরুলেই শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এই ঈদকে ঘিরেই বয়ে যাবে রাশি রাশি আনন্দ। উচ্ছ্বাসে ভাসবে নাগরিক মন। শত রঙের ফোয়ারা বইবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। ধর্মীয়ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও সম্প্রীতির এই দেশে সকলেই শামিল হয় একে অপরের উৎসবে। সেথায় মুছে যায় ধর্মীয় বিভেদরেখা। তাই তো আসন্ন উৎসবকে বরণের অপেক্ষায় রয়েছে নগরবাসী।
যদিও ঈদুল আজহায় অধিকাংশ মানুষের প্রথম দুই দিন কেটে যায় কোরবানিনির্ভর ব্যস্ততায়। মুসলিমরা মনের পশুকে জবাই দিয়ে ত্যাগের মহিমায় শাণিত করে নিবে আপন সত্তাকে। এরপর পরিবার-পরিজন থেকে স্বজন, প্রিয়জন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে কাটবে আনন্দময় সময়। আর এবার উৎসবের সরকারি ছুটি দীর্ঘ দশদিনের হওয়ায় আনন্দের মাত্রাটাও হবে অনেক বেশি বর্ণিল। হৃদয় রাঙাতে রাজধানী ঢাকাসহ নিকটবর্তী বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় বাড়বে মানুষের পদচারণা। উৎসর উদ্যাপনকারীদের সেই আনাগোনায় রচিত হবে সুন্দরতম দৃশ্যকল্প।
প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখা, থিম পার্কের রাইডে চড়া, বৃক্ষ ও লতাপাতায় শোভিত সবুজ উদ্যানের ঘাসে পা ডুবিয়ে হেঁটে বেড়ানোÑএমন নানামুখী প্রাণবন্ত তৎপরতায় মেতে উঠবে ঢাকাবাসী। রঙিন মন নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে রাজপথে। যানজটমুক্ত নিরিবিলি শহরে ঘুরে বেড়াবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। রমনা পার্কসহ বিভিন্ন উদ্যানের সবুজ-শ্যামল আঙিনা কিংবা নয়ন জুড়ানো হাতিরঝিলের পাশাপাশি শহরের নিকটবর্তী বিনোদন কেন্দ্রগুলো হয়ে উঠবে সরগরম।
সেই বাস্তবতায় ঈদের লম্বা ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত হচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি রঙের প্রলেপে সেজেছে নবরূপে এসব কেন্দ্র। একইভাবে বিভিন্ন রাইডের ছোটখাটো ত্রুটিগুলো মেরামত করে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে নগরবাসীকে কাছে টানতে পুরোদমে প্রস্তুত হচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
ঢাকাবাসীর পছন্দের বিনোদন কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন, শ্যামলীর শিশু মেলা, পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা ও আহসান মঞ্জিল, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, উত্তরার দিয়াবাড়ী, সংসদ ভবন এলাকার জিয়া উদ্যান, শ্যামপুরের বুড়িগঙ্গা ইকো পার্ক, যমুনা ফিউচার পার্ক, সাভারের ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক, ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক, হাতিরঝিল ও ৩০০ ফুট সংলগ্ন পূর্বাচল বাজার ইত্যাদি।
তবে এবার ঈদের ছুটিতে বন্ধ থাকবে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষ্যবহ পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল ও শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর। জাতীয় জাদুঘর সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ঘুরে বেড়ানোর বাইরে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় মজাদার খাবার খেয়ে কিংবা বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন ছবি দেখে কেটে যাবে দুরন্ত সময়। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে ঘুরে বসেও বিনোদিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনাময় টিভি অনুষ্ঠানের পরিবর্তে বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ঈদ উপলক্ষে মুক্তি মুভি বা সিরিজ দেখেও কেটে যাবে স্বস্তির সময়।
জাতীয় চিড়িয়াখানা ॥ বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষকে কাছে টানে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। ৫০ টাকার টিকিট কেটে এখানে প্রবেশের পর দেখা মিলবে ১৩৬ প্রজাতির তিন হাজার ৩০০ পশুপাখি। স্বভাবতই ঈদের ছুটিতে এই পশু-পাখির প্রদর্শনালয়ে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। প্রাণীরাজ্যে প্রবেশে রীতিমতো লম্বা লাইন পড়ে যায়। প্রবেশ পথে প্রচ- ভিড় পরিলক্ষিত হয়।
এমন বাস্তবতায় এবার চিড়িয়াখানায় ঘোরাঘুরি স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সার্বিক বিষয় তুলে ধরে চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জনকণ্ঠকে জানান, কোরবানির ঈদে প্রথম দুই কম-বেশি লোক হলেও সাধারণত তৃতীয় দিন থেকে জনসমাগম বাড়ে। প্রতিদিনের মতোই ঈদে চিড়িয়াখানা সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এবার ২৯টি পয়েন্ট থেকে টিকিটি বিক্রি করা হবে। ভেতরে প্রবেশের জন্য থাকছে ১৬টি প্রবেশদ্বার। এমনকি গাড়ি পার্কিংয়ের টিকিটের জন্য পৃথক বুথ হবে। এ ছাড়া সনি সিনেমা হলের সামনে থেকে শুরু হওয়া যানজট এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গক্রমে রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ইতোমধ্যে ভেতরের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার নাগাদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ চিড়িয়াখানাকে পরিপাটি করে তোলার কর্মযজ্ঞ শেষ হবে। দর্শনার্থীরা কোন দিক থেকে কোন দিকে যাবেন, সেই সংক্রান্ত নির্দেশনা বোর্ড বসানো হয়েছে। ভেতরে খাবারের বিষয়টি সামাল দিতে পর্যটন করপোরেশনের দু’টি রেস্তোরাঁর সঙ্গে এবার আরেকটি অস্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র বসানো হবে। একইভাবে দুটি পৃথক স্থানে পানির ব্যবস্থা থাকবে। অন্যদিকে দর্শনার্থীদের স্বা”চ্ছন্দ্যে চলাফেরা ও নিরাপত্তা রক্ষায় চিড়িয়াখানার কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটির দিনগুলোয় কর্মচারীদের কোনো ছুটি থাকবে না। তারা রোস্টার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন।
শিশু মেলা ॥ ঈদ উৎসবে সোনামণিদের জন্য যেন এক তীর্থকেন্দ্র হয়ে ওঠে শ্যামলীর শিশু মেলা। এখানকার মজার মজার রাইডে চড়ে কেটে যায় ছোট্ট বন্ধুদের দুরন্ত সময়। শহরের নানা প্রান্ত থেকে আসা শিশুদের সমাগম ঘটে শিশু মেলায়। এখানে রয়েছে রয়েছে বাম্পার কার, কার রাইড, ড্রাগন রোলার, নাগরদোলাসহ ৪০টির মতো রাইড। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচালনাধীন এই কেন্দ্রের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। অন্য সময়ের মতোই ঈদ উৎসবে সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকবে শিশু মেলা।
লালবাগ কেল্লা ॥ উৎসব উদ্যাপনে অনেকেই ছুটে যায় পুরান ঢাকার দুই ঐতিহাসিক স্থাপনা লালবাগ কেল্লায়। এই ভূখ-ের পেছনের ইতিহাসের কথা জানান দেয় মুঘল আমলে নির্মিত দুর্গ লালবাগ কেল্লা। মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অলংকৃত দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনায় রয়েছে দরবার হল ও হাম্মামখানা, পরীবিবির সমাধি এবং শাহী মসজিদ। প্রবেশ মূল্য দশ টাকা। খোলা থাকবে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।
ফ্যান্টাসি কিংডম ॥ ঈদ উৎসবে উদ্যাপনকারীদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে ওঠে সাভারের থিমপার্ক ফ্যান্টাসি কিংডম। এখানে একইসঙ্গে রয়েছে জল ও স্থলের মজাদার নানা রাইড। ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকবে ফ্যান্টাসি কিংডম। এবারে ঈদ আকর্ষণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ড্রপ ইন টুইস্ট টাওয়ার, স্কাই হুপার ও টপ স্পিন নামের তিনটি নতুন রাইড। এ ছাড়া এক্সট্রিম রেসি, রোলার কোস্টার, ওয়েভপুল, লেজি রিভার, টিউব সøাইড, ওয়াটারপুলসহ নানা মজার রাইডে চড়ে উপভোগ্য সময় কাটাতে পারবেন দর্শনার্থীরা। ১২৫০, ১৪০০ ও ১৫০০ টাকার তিনটি প্যাকেজে উপভোগ করা যাবে এসব রাইড।