
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এবার প্লাস্টিকমুক্ত হাজারো কৃষি উপকরণ
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এবার রাজশাহীর পবা উপজেলার বিলনে পালপাড়া গ্রামে আয়োজিত একটি মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে প্লাস্টিকমুক্ত হাজারো কৃষি উপকরণ। বুধবার এ মেলার আয়োজন করে স্থানীয় কৃষিপ্রতিবেশ কেন্দ্র এবং উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক। মেলায় পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ জন কৃষক ও কৃষাণি তাঁদের ব্যবহৃত কৃষি উপকরণ প্রদর্শন করেন এবং নতুন প্রজন্মকে সেগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এর মূল লক্ষ্য-প্লাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা এবং প্লাস্টিকমুক্ত পরিবার গড়ে তোলা।
মেলায় কৃষক-কৃষাণিরা যেসব প্লাস্টিকমুক্ত কৃষি ও গৃহস্থালি উপকরণ প্রদর্শন করেন তার মধ্যে ছিল-মাথল, থলে, মাছ ধরার বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম, গুমাই, সাব্বল, দাউলি, বেকি, কাতা, লিহান, ছুরি, কুপা, দা, কাঁচি, হাসা, ছোট-বড়-মাঝারি ডালি, নানা রকম কুরা, বিভিন্ন ধরনের নিড়ানি, ডই, কারোল, শিকা বাহুক, আম নামানোর ঝোপা, কাড়ল, পানি সেত টবকা, ধান মাপার হাটা, খই চালা চালন, ঝাঁকা, সাজি, সরপেস, চাল ঝাড়ার কুলা ইত্যাদি।
মেলায় এসে স্থানীয় প্রবীণ কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, এক সময় ঘরে প্লাস্টিক ছিল না, ছিল মাটির হাঁড়ি-কলস, পিতলের থালা। বাজারে গেলে সঙ্গে থাকত কাপড়ের তৈরি ব্যাগ। এমনকি কারও বাড়িতে বেড়াতে গেলেও পকেটে করে কাপড়ের সেলাই করা থলে নিয়ে যেতাম। এখন তো ঘরে-বাইরে সবখানেই প্লাস্টিক। তিনি বলেন, এক সময় নিড়ানি ছিল সাত-আট রকমের। যেমন, ‘চাচানি’ দিয়ে পটোল, করলা জাতীয় লতানো সবজিতে নিড়ানি দেওয়া হয়। ‘আঁকা’ দিয়ে পেঁয়াজ-রসুনে, ‘ভুকচা’ দিয়ে জমির ঘাস তুলি, ‘বেকি’ দিয়ে রসুন তোলাই। কোদালও বিভিন্ন রকমের। যেমন, ‘কামরি কোদাল’ দিয়ে বেশি পরিমাণে মাটি খোঁড়া যায়, ‘চিকন কোদাল’ আলুর জমিতে ব্যবহার করি।
আবার ‘চায়না কোদাল’ সরু ড্রেন তৈরিতে উপযোগী।’ কৃষক লুৎফর রহমান (৫৫) মেলায় নিয়ে এসেছিলেন ১৮ ধরনের কৃষি উপকরণ। এর মধ্যে ছিল দুই ধরনের মাথাল। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে ‘পইচা মাথাল’ ব্যবহার করি, আর রোদে ‘দেশি মাথাল’-এটা সব সময়ই কাজে লাগে। কৃষাণি হীরামনি মেলায় এনেছিলেন দুই ধরনের কুলা, রুটি তৈরির বেলুন, লাকড়ি, হাতুড়, দাউলি, বেকি, তিন ধরনের বঁটিসহ আরও নানা কিছু। মেলায় অংশ নিয়ে মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো-ঘরে, মাঠে, কৃষি কাজে আর কোনো প্লাস্টিক ব্যবহার না করা।
আমরা চাইলে পারি প্লাস্টিক বাদ দিয়ে চলতে। মেলায় প্লাস্টিকমুক্ত মেলার ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্লাস্টিক মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, পোকামাকড় ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ে। মাইক্রোপ্লাস্টিক ফসলের মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।