ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টানা বৃষ্টিতে নবীনগরে বেড়েছে ছাতা কারিগরদের ব্যস্ততা।

কাউছার আলম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ০০:৫১, ৪ জুন ২০২৫

টানা বৃষ্টিতে নবীনগরে বেড়েছে ছাতা কারিগরদের ব্যস্ততা।

ছবি: জনকন্ঠ

পঞ্জিকার পাতা অনুযায়ী এখন বর্ষাকাল। প্রতিদিনই চলছে রোদ আর বৃষ্টির খেলা। এই সময়ে ছাতা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কার ছাতা কে আগে মেরামত করে নেবেন তার জন্য শুরু হয় প্রতিযোগিতা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিকে ঘিরে যেন উৎসবের আমেজ বইছে ছাতা কারিগরদের মাঝে। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ফুটপাতের ছাতা কারিগরদের এখন ব্যস্ততা বেড়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে কথা হয় বাঙ্গরা বাজারের বেশ কয়েকজন ছাতা কারিগরদের সাথে। তাদের মধ্যে একজন ৭০ বছর বয়সী মো. নান্নু মিয়া। বিগত ৪০ বছর ধরে বর্ষার মৌসুমে ছাতা মেরামত করছেন তিনি। বৃদ্ধ মো. নান্নু মিয়া পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধইর এলাকার বাসিন্দা।

মো. নান্নু মিয়া জনকণ্ঠ প্রতিবেদককে জানান," প্রায় ৪০ বছর ধরে ছাতা মেরামত করছি। বর্ষার মৌসুমে কাজ বেশি থাকে। গত কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় কাজ কিছুটা বেড়েছে। এ কারণে আয়ও বেড়েছে। এতে করে বর্তমানে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছি। সামনে যখন পুরোপুরি বর্ষা শুরু হবে তখন কাজ আরও বাড়বে। বর্তমানে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাঙ্গরা বাজারে ফুটপাতে বসে গড়ে ১৫ থেকে ২০টি ছাতা মেরামত করতে পারি। এতে প্রতিদিন আমার প্রায় ৩শ থেকে ৫শ টাকার কাজ করতে পারি।"

তিনি বলেন, "বৃদ্ধা স্ত্রীসহ পাঁচ ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে আমার সংসার। তবে বর্ষার মৌসুম ছাড়া অন্য সময় তেমন কাজ থাকে না। তখন অলস সময় পার করি। তিনি আরও জানান, আমার তেমন কোনো সম্পত্তি নেই। এ ছাড়া আমার ৫ ছেলে থাকলেও ২ ছেলে তারা বিয়ে করে আলাদা সংসার করে। আর ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারা শ্বশুর বাড়িতে থাকে। বাকি তিন ছেলে লেখাপড়া করে। তাই এই বৃদ্ধ বয়সেও ছাতা মেরামতের কাজ করি। বয়স হওয়ায় এখন শরীরটাও ঠিক মতো চলছে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই পেটের দায়ে এই কাজ করছি। যেহেতু বয়স হয়েছে তাই আর কয়দিনই বা এই কাজ করতে পারবো।"

এক পর্যায়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, "আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট কোন দফতর থেকেও এ পর্যন্ত কোন সহযোগিতা পাইনি। সরকারের সহযোগিতা পেলে হয়তো জীবনের শেষ সময়টাতে কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারতাম।"

উল্লেখ্য, ছাতা কারিগররা অন্যের দোকানের সামনে নামমাত্র ভাড়ায় কিংবা বিনা ভাড়ায় বসে কাজ করে থাকেন। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ ছাতা কারিগরেরা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে ছাতা মেরামত করেন। তবে বছরের শুধু বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়টাতে তেমন আয় করা সম্ভব হয় না বলে এ পেশা থেকে ছাতা কারিগররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

Mily

×