ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘবদ্ধ ১০ সিন্ডিকেট, নির্বিকার পাউবো

কুমিল্লায় নদীতীরের মাটি লুট

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ২১:১৯, ১৩ মার্চ ২০২৪

কুমিল্লায় নদীতীরের মাটি লুট

ডাকাতিয়া নদীর চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাহাপুর এলাকায় এভাবেই কেটে নেয়া হচ্ছে নদীর মাটি

এক শ্রেণির দুর্নীতিপরায়ণের যোগসাজশে খরস্রোতা কাঁকড়ি, নতুন-পুরাতন ডাকাতিয়া ও বোয়ালজুড়ি নদীর তীর ও তৎসংলগ্ন স্থানের মাটি লুটে বিক্রি করছে সংঘবদ্ধ অন্তত ১০টি সিন্ডিকেট। দিন-রাত ভেকু লাগিয়ে মাইলের পর মাইল এলাকার মাটি কেটে ড্রামট্রাক-ট্রাক্টর ভর্তি করে গ্রামীণ জনপদকে ধুলায় মিশিয়ে অন্যত্র বিক্রি অব্যাহত থাকলেও রহস্যজনক কারণে পাউবোসহ স্থানীয় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা রয়েছেন নির্বিকার। 
সরেজমিন ঘুরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা খর¯্রােতা কাঁকড়ি, নতুন-পুরাতন ডাকাতিয়া, বোয়ালজুড়ি নদীর তীর, চর ও আশপাশের কৃষি জমিসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত ১০টি সিন্ডিকেট ভেকু ও শ্রমিক লাগিয়ে দিন-রাত মাটি কেটে স্থানীয় ব্রিকফিল্ড ও কনস্ট্রাকশন সাইডে বিক্রি করছে।

অনুসন্ধানকালে সূত্রগুলো জানায়, কাঁকড়ি নদীর শ্রীমন্তলা-অলিপুর, বারইয়া, কলাবাগান-রামচন্দ্রপুর ব্রিজ এলাকায় মাটিকাটা সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা হলেন- মোতালেব, তুহিন, জামাল, সোহাগ, ফয়েজ, লাল মনির। এ নদীর উত্তর যাত্রাপুর এলাকায়- পার্থ, রতন, মনির। পুরাতন ডাকাতিয়ার হিলাল নগরে- শাহজাহান, কালাম, কাতালিয়া-ধর্মপুর- এলাকায় আবদুল মজিদ মেহেদী, রাণীর বাজার-সাহাপুর এলাকায়- আমির হোসেন, সাইফুল, লেংড়া আমির, আমু, নেছার, অশ্বদিয়ায়- সুমন, রহিম, রাসেল।

নতুন ডাকাতিয়া (পাগলি গাঙ) নদীর নিলক্ষ্মী-বিষ্ণপুর ও দৌলসমূদ্র এলাকায় কামাল মেম্বার। বোয়ালজুড়ি নদীর জুগিরকান্দিতে- শাহাদাৎ, এরশাদ ও জয়মঙ্গলপুরে আজাদ। এসব সিন্ডিকেট সদস্যরা মাটি কাটা চক্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের ছত্রছায়ায় এসব সিন্ডিকেট মাটি কাটা অব্যাহত রাখলেও তাদের দাপটে প্রতিবাদীরা অসহায়। সূত্র জানায়, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এতদাঞ্চলের ফসলি জমি ও স্থানীয় জনগণকে নদীগুলোর ভাঙন ও বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে নদীর বাঁধ রক্ষার নামে সরকার মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে।

এর মধ্যে বোয়ালজুড়ি নদী পুনর্খনন করে নদীরক্ষা বাঁধ মজবুদ করা হয়েছিল। তবে এবার শুষ্ক মৌসুমে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি পরায়নদের যোগসাজশে ওইসব সিন্ডিকেট ফের নদী রক্ষা বাঁধের মাটিসহ আশপাশের সরকারি সম্পত্তি ও সাধারণ মানুষের কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দেয়। রহস্যজনক কারণে মাটিখেকো ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। তবে পাউবোর সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান হোসেন জানান, নদীর ভেতরে-তীরে ও সরকারি সম্পত্তিতে মাটি কাটার অনুমতি নেই।

তারপরেও এদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাটি কাটার ভেকু আটক কিংবা জড়িতদের কারও বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে জেল খাটানো বা শাস্তি দেওয়ার মতো কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।
পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়ালি-উজ-জামান বলেন, যারা মাটি কাটছে তারা ভূমিদস্যু। আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করি। থানা ও উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে অবহিত করি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারও নামে থানায় মামলা রেকর্ড হয়েছে কি না- এমন তথ্য আমার কাছে নেই, জেনে জানাব।

মাটি কাটা চক্রের সঙ্গে পাউবোর কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পাউবোর। তারা সহযোগিতা চাইলে কিংবা সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই এসব চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×