মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মির ক্রমাগত আক্রমণের মুখে
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মির ক্রমাগত আক্রমণের মুখে পলায়নপর অবস্থা সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির। লড়াইয়ে টিকতে না পেরে বিজিপি সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছোট ছোট গ্রুপে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন পাহাড়ে। কিন্তু সেখানেও চলছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির আক্রমণ। প্রাণে বাঁচতে তাই অনেকেই পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আশারতলী-জামছড়ি সীমান্তের ওপারে বিভিন্ন ক্যাম্প ও সীমান্ত চৌকিগুলাতে ফের তীব্র গোলাগুলি চলছে।
এদিকে সর্বশেষ সোমবার দুইধাপে আসা ১৭৯ বিজিপি সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড প্রাইমারি স্কুলে স্থাপন করা অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তারা রাখাইনের অংথাপায়া ক্যাম্প থেকে পালিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী-জামছড়ির সীমান্তপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। পালিয়ে আসা এই বিজিপি সদস্যরা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিজিবির কাছে। সোমবার দুপুরে ২৯ জন বিজিপি সদস্য আসে। পরে রাত পর্যন্ত আরও ১৫০ জন বিজিপি সদস্য আশ্রয় নেন।
নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প এবং ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকিসহ প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ইতোমধ্যে দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। বাকি দুটি সীমান্তচৌকিতে সোমবার হামলা চালিয়ে দখলে নেয় তারা। এ লড়াইয়ে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা ছোট ছোট দলে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। ওই বিচ্ছিন্ন দলগুলোর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি অভিযান শুরু করে। এতে আরাকান আর্মির তৎপরতা, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে টিকে থাকতে না পেরে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বিজিবির কাছে আশ্রয় নেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত মিয়ানমারের ১৭৯ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কয়েক জনপ্রতিনিধি জানান, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তুমব্রু রাইট ক্যাম্প এবং ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকিসহ প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ইতোমধ্যে দখলে নিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।
বাকি দুটি সীমান্তচৌকিতে সোমবার হামলা চালিয়ে দখলে নেয় তারা। এ কারণেই আরাকান আর্মির গোলাগুলোর মুখে টিকতে না পেরে সেখান থেকে পালিয়ে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গত সোমবার সন্ধ্যায় সাবের হোসেন নামে ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি জামছড়ি সীমান্তচৌকি এলাকায় ওপার থেকে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড বিজিপি সদস্যদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে কথা বলার সময় হঠাৎ একটি গুলি এসে তার বাঁ পায়ের হাঁটুতে লাগে। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। পরে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার (ইমন) জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সরকারি জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সে দেশের বিদ্রোহীদ গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) চলমান ক্ষমতা দখলের যুদ্ধে বিজিপি সদস্যরা টিকতে না পেরে সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত জামছড়ি সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের বিজিবির কাছে তারা আশ্রয় নেন। এ নিয়ে দুপুরের পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, মিয়ানমার সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও ইমিগ্রেশনের সদস্যরা অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের প্রথমে নিরস্ত্র করে জামছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের হেফাজতে রাখা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের বর্ডার গার্ড প্রাইমারি স্কুলে রাখা হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের পুনরায় ফেরত পাঠানো হবে। সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি, প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি (এএ) দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলে আসছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) ৩৩০ জন। পরে গত মাসের ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়া নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট থেকে জাহাজে করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত দেওয়া হয়।
এ ঘটনার এক মাসের মাথায় আবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী-জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ১৭৯ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এতে সীমান্তবাসীদের মশেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।