কুমিল্লায় মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও ডা. তাহসিন বাহার গণসংযোগ করেন
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। আর মাত্র তিনদিন পর ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মেয়র পদের এই উপনির্বাচন। দেশের প্রাচীন জেলা কুমিল্লা সিটির এ নির্বাচনে কে হচ্ছেন নগরপিতা তা জানতে ও বুঝতে দেশের আপামর মানুষজনের দৃষ্টি এখন কুমিল্লার দিকে। কুমিল্লা সিটির গত ৩টি নির্বাচনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু টানা দুইবার জয়লাভ করলেও তৃতীয়বার তারই দলের বহিষ্কৃত আরেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দুই জনই ভোটের ভাগাভাগিতে পরাজিত হন।
জয় লাভ করেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। এ নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু রিফাতের থেকে ৩৪৩ ভোট কম পেয়ে পরাজিত হন। রিফাতের মৃত্যুজনিত কারণে এ উপনির্বাচনে আবারও প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি ঘরানার মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা ডা. তাহসিন বাহার সূচনা।
এবারের উপনির্বাচনেও বিএনপি ও তাদের অনুসারীদের ভোট সাক্কু-কায়সারের মধ্যে ভাগাভাগির কারণে সুযোগ নিতে পারেন নগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। আলাপ প্রসঙ্গে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সাড়ে ৩ বছরের মেয়র পদের জন্য এবারের নির্বাচনে আমি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে না করে আমাকে ছাড় দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সে কথা রাখেনি।
রাজনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, কুমিল্লা সিটির প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে নিজের দলের বাইরেও ভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কাজ করলেও তৃতীয় নির্বাচনের মতো এবারের উপনির্বাচনের চিত্রও ভিন্ন। এবারের উপনির্বাচনে দলে তার অনুসারী ও হিতাকাক্সক্ষী ভোটাররাই তার ভরসা।
তবে অপরদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক হিসেবে কায়সারের পক্ষে দল ও অঙ্গসংগঠনের প্রভাবও কিন্তু কম নয়। তাদের দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও ইতোমধ্যে কায়সারের পক্ষে মাঠে নেমেছেন দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী। এ ছাড়া বাড়তি সুবিধা রয়েছে তাদের শিল্প কারখানার বিপুলসংখ্যক শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ভোট ব্যাংক।
কায়সার ও তার অনুসারীরা ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে সাক্কু-সূচনা-তানিমকে পরাজিত করে মেয়র পদে পরিবর্তন ঘটাতে চান। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট ব্যাংকে সাক্কু-কায়সারের ভোট ভাগাভাগিতে এ যখন অবস্থা তখন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
এছাড়া কুমিল্লা শহরে বসবাস করা জেলার বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীরাও বাস প্রতীকের প্রার্থী সূচনার পক্ষে একাট্টা। রবিবার রাতে কুমিল্লা টাউন হলে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামবাসী ব্যানারে একটি সভায় বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ভোটার উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে দেবিদ্বার, চান্দিনা, লাকসাম উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এখন নগরীতে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন কেন্দ্রিক সূচনার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সবকিছু মিলিয়ে বিএনপি ও তাদের অনুসারীদের ভোট এবারও সাক্কু-কায়সারের মধ্যে ভাগাভাগি হলে লাইমলাইটে চলে আসতে পারেন এমপি বাহারকন্যা তাহসিন বাহার সূচনা। এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম। নগর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে তার প্রতি সমর্থন না দিলেও তার অনুসারীদের ভোটও একই দলের বাস প্রতীকের প্রার্থীর সার্বিক ভোটে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে।
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, বিএনপির সাক্কুর ভোট ভাগাভাগির সুযোগ কাজে লাগিয়ে, নগর আওয়ামী লীগের সমর্থিত বাস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে সূচনা তথা বাস প্রতীকের জয় অবিসম্ভাবী। এদিকে নির্বাচনী প্রচার অভিযানে সাবেক মেয়র সাক্কু উন্নয়ন, বাস প্রতীকের প্রার্থী সূচনা আধুনিক নগর গড়ার, ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী কায়সার পরিবর্তনের অঙ্গীকার ও হাতি প্রতীকের প্রার্থী ভালোবাসার শহর গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ভোট চাওয়া অব্যাহত রেখেছেন।
প্রার্থীদের গণসংযোগ ॥ বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা ও তার পক্ষে নেতাকর্মীরা নগরীর দিশাবন্দ, রাজাপাড়া, বিষ্ণুপুর, কালিয়াজুড়ি, রামঘাটলা, দ্বিতীয় মুরাদপুর, হজরতপাড়া, জয়পুর, শালবন বিহার প্রাথমিক বিদ্যালয়, দয়াপুর মাদ্রাসা মাঠসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক করেন। এ সময় বিপুল নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে।
মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু ও তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলিসহ নেতাকর্মীরা নগরীর নতুন চৌধুরীপাড়া, লক্ষ্মীপুর, নূরপুর, শাকতলা, রাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর গোবিন্দপুর, জয়পুর, বাতাবাড়িয়া, গন্ধমতিসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। মেয়র পদে হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম ও তার নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন।