ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৈলাশটিলা ৮ নং গ্যাসকূপ

দিনে উৎপাদন হবে ২১ মিলিয়ন ঘনফুট

স্বপ্না চক্রবর্তী, সিলেট থেকে

প্রকাশিত: ০০:১০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দিনে উৎপাদন হবে ২১ মিলিয়ন ঘনফুট

দেশে মোট গ্যাসের ৭০ শতাংশই উৎপাদিত হয় বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন কূপ থেকে

দেশে মোট গ্যাসের ৭০ শতাংশই উৎপাদিত হয় বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন কূপ থেকে। এর পরিমাণ বাড়াতে এই বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় খনন করা হবে আরও অন্তত ৬টি কূপ। সদ্য উৎপাদন শুরু হওয়া কৈলাশটিলা-৮ নং কূপ থেকেও আগামী এপ্রিল মাস থেকে উৎপাদিত হবে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর গত বছরের শেষে সন্ধান পাওয়া সিলেট ১০ নম্বর কূপে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান তৎপরতা তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে আসন্ন গ্রীষ্মে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চাহিদা মেটাতে সিলেটের এই কূপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে সিলেট-১০ নং কূপে পাওয়া তেল দেশের জ্বালানি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলেও মনে করছেন তারা।

শনিবার সরেজমিনে কৈলাশটিলা-৮ এবং সিলেট-১০ নং কূপ এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, দুই কূপেই চলছে অনুসন্ধান কাজ। বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে দেশী বিদেশী কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি কাজ শুরু হওয়া কৈলাশটিলা-৮ কূপটির কাজ ১২০ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির এই কূপটি খনন করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে বিদ্যমান পাইপলাইন ও আড়াই কিলোমিটার দূরত্বে ব্যবহার যোগ্য প্রসেস প্লান্ট রয়েছে।

ভোলা, জকিগঞ্জসহ অনেক এলাকায় গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এদিন কৈলাশটিলা কূপ এলাকা পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, কৈলাশটিলা ফিল্ডে আগে ৩ টিসিএফ মজুত ছিল। অনুসন্ধান কূপ খনন করায় মজুত আরও বাড়বে। দেশীয় ফিল্ড থেকে গ্যাস পেলে ৪ টাকায় পাওয়া যায়, একই পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে ৬০ টাকা খরচ হয়। মাত্র ২৩ শতাংশ গ্যাস আমদানি করতে না হলে অনেক সাশ্রয় হতো। তিনি বলেন, আশা করা যাচ্ছে এ বছরের এপ্রিল মাস এর শেষ নাগাদ এ কূপ হতে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
এ সময় সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কৈলাশটিলায় এর আগে ৭টি কূপ খনন করা হয়েছে প্রতিটা কূপেই গ্যাস পাওয়া গেছে। ৩৫০০ মিটার খনন করা হবে ১ টিসিএফ এর ওপরে গ্যাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
একই দিন সিলেট-১০ নং কূপ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে নসরুল হামিদ জানান, এ কূপে ৪টি স্তরে গ্যাস ও ১টি স্তরে ক্রুড অয়েল পাওয়া গিয়েছে।

২৫৪০ থেকে ২৫৬৫ মিটার গভীরতায় ডিএসটি চলাকালীন দৈনিক ২২-২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস প্রবাহের বিপরীতে এখানে ওয়েলহপড প্রেসার ৩২৫০পিএসআইজি পাওয়া গেছে। এ স্তর থেকে দৈনিক ২০মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়াও ১৩৯৭ থেকে ১৪৪৫ মিটার গভীরতায় টেস্ট করে ক্রুড অয়েল পাওয়া যায়। যার এপিআই গ্রাভিটি ২৯.৫ ডিগ্রি। সেলফ প্রেসারে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল হারে তেল প্রবাহিত হয়। প্রাথমিক স্তরে তেলের মজুত প্রায় ৮ মিলিয়ন ব্যারেল যার মূল্য ৭০০০ কোটি টাকা।
এ সময় জানানো হয়, এখানে আরও ১টি কূপ ও ১টি তেল কূপ খনন করা হবে। এ বছরের মধ্যে নতুন গ্যাস কূপটির খনন কাজ সম্পন্ন হবে। এখান থেকে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে। কূপটিতে মজুত রয়েছে ৪৩ বিসিএফ গ্যাস। যার ভারিত মূল্য প্রায় ৩২৭৩ কোটি টাকা। আর আমদানি মূল্য বিবেচনায় এর দাম ৮১২৮ কোটি টাকা। কূপ দুটির মাধ্যমে দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা হলে ৮-১০ বছরের বেশি স্থায়িত্ব থাকবে বলে জানানো হয়।
একই দিন জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন শেষে নসরুল হামিদ ঘোষণা দেন আগামী ৪ বছরের মধ্যে ৮০ ভাগ গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে। 
প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের ডাটা সেন্টার উদ্বোধন প্রক্রিয়া শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস মিটার স্থাপন করলে অপচয় কমে যাওয়াসহ অনেক সুবিধা রয়েছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব প্রিপেইড মিটার স্থাপন শেষ করতে। অনেক দিন ধরেই চাপ দিয়ে যাচ্ছি কোম্পানিগুলোকে। এখন বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অনেকে অর্থায়ন করতে চায়। তারা প্রায় ৩০ লাখ মিটার কানেক্ট করবে। তিনি বলেন, জালালাবাদের সার্ভিস দেখে আমি খুশি। তাদের কোনো সিস্টেম লস নেই, কোনো অবৈধ সংযোগও নেই। ডাটা সেন্টার দেখলাম চমৎকার মনে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের মোট গ্রাহক রয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ১৪৫। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক রয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৫। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেওয়া হয়েছে। আরও দেড় লাখ মিটার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

×