ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিমগাছ বেয়ে পড়ছে খেজুরের রস, কৌতূহল মানুষের ভিড়

জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ 

প্রকাশিত: ১৪:১০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নিমগাছ বেয়ে পড়ছে খেজুরের রস, কৌতূহল মানুষের ভিড়

 নিমগাছ বেয়ে পড়ছে খেজুরের রস

একটি নিমগাছকে ঘিরে কৌতূহল মানুষের। তিতা রসের পরিবর্তে এই ওষধি গাছ থেকে মিষ্টি রস পড়ছে এমন খবরে ছুটে আসছেন মানুষ। গাছের গা বেয়ে পড়তে থাকা রস সংগ্রহে ভিড় করছেন তারা। গ্রামের অনেকেই বিভিন্ন পাত্র গাছে ঝুলিয়েছেন রস সংগ্রহ করতে। ছোট ছেলেমেয়েরা হাতে নিয়েই চেটে চেটে খাচ্ছে রস। এমনটা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গড়াইপাড়া গ্রামে। মৃত কালু আলীর ছেলে নাসির আলীর বাড়ির গলিতে থাকা নিমগাছ থেকে পড়ছে খেজুরের রসের মতো মিষ্টি রস। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তির আশায় এই গাছ থেকে রস সংগ্রহে হিড়িক পড়েছে গ্রামবাসীর।
 
স্থানীয়রা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে গাছ থেকে অল্প অল্প রস বের হলেও তিন দিন আগে থেকে এর পরিমাণ বেড়েছে। গ্রামের এক ব্যক্তি মুখে নিয়ে নিমগাছের রসের মিষ্টতা পান। এ খবর ছড়িয়ে যায় পুরো গ্রামে। এরপর থেকেই গাছ দেখতে ছুটে আসছে উৎসুক জনতা। নিমগাছের পাতা, কাঁচা ফল, বীজ, কাণ্ড ও রস স্বাভাবিকভাবে তিতা হলেও এই গাছের রস মিষ্টি হওয়ায় অবাক গ্রামবাসী ও পথচারী।
 
চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দুই সপ্তাহ থেকেই হঠাৎ করেই গাছটি দিয়ে ফেনাযুক্ত রস বের হতে দেখা যায়। কিন্তু গত তিনদিন ধরে এর পরিমাণ বেড়েছে। কেউ একজন মুখে মিষ্টি বলার পর সবাই এসে মুখে নিয়ে বিশ্বাস করছে। কেউ কেউ আবার দূর দূরান্ত থেকে নিমগাছের এমন অদ্ভুত কার্যক্রম দেখতে সরেজমিনে আসছেন। কেউ কেউ এসে ছবিও তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের অনেক মানুষের মনে বিশ্বাস, এটি মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ। তাই নিমগাছটির রস খেলে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, এমন বিশ্বাস থেকে রস সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাচ্ছেন। তবে গ্রামে এখন পর্যন্ত এই রস খেয়ে কেউ সুস্থ হয়েছেন বলে জানা যায়নি।’
 
ষাটোর্ধ্ব মোবারক আলী বলেন, ‘আমার ৬৫ বছরের জীবনে কখনো এমন অদ্ভুত ব্যাপার দেখিনি। আমরা জানি, নিমগাছের পাকা ফল ছাড়া বাকি সবকিছুই তিতা। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে গত কয়েকদিন থেকে আমাদের গ্রামের একটি নিমগাছ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে রস বের হচ্ছে, এর স্বাদ মিষ্টি। আমি নিজেও খেয়ে দেখেছি। খেতে হুবহু খেজুরের রসের মতো লাগল।’
 
কলেজছাত্র ওসমান আলী বলেন, ‘শুধু স্বাদই নয়, নিমগাছটি থেকে বের হওয়া রসের গন্ধও খেজুরের রসের মতো। খেলে রোগবালাই ভালো হবে এই বিশ্বাস করে অনেকেই গাছের বিভিন্ন স্থানে বোতল লাগিয়ে রেখেছে রস সংগ্রহের জন্য। এমনকি রস বের হওয়ার ধরনটিও খেজুরের গাছের মতোই ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছে। তবে দিনের থেকে রাতে বেশি পরিমাণে রস বের হচ্ছে। এছাড়াও এতো বেশি রস প্রবাহিত হচ্ছে যে গাছের গোঁড়া ভিজে থাকছে সবসময়ই।’


 
আকতারা বেগম (৫০) পাশের একটি গ্রাম থেকে বড়াইপাড়ার নিমগাছটিতে এসেছিলেন রস নিতে। স্থানীয় এক যুবককে বলে বোতলে করে রস নেন তিনি। আকতারা বলেন, ‘আমার ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘদিন ধরে মাজা ও পায়ে ব্যথা রয়েছে। আজ শুনেছি এই গাছ দিয়ে নাকি মিষ্টি রস বের হচ্ছে এবং তা খেলে বিভিন্ন রোগবালাই ভালো হচ্ছে, তাই নিতে এসেছিলাম। আল্লাহ’র নাম নিয়ে ভালো নিয়তে রস খাবো। আশা করি, সুস্থ হয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।’
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে মৃত বাবা-মায়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রায় ২৪ বছরের নিমগাছটি গড়াইপাড়া জামে মসজিদের নামে দান করেছেন গাছের মালিক নাসির আলী। তিনি বলেন, ‘গাছটি দান করা হয়েছে। তবে এর আগে থেকেই রস বের হচ্ছে। এমনকি মসজিদ কমিটিও গাছটি বিক্রি করেছে। কখন কাটা হবে তা জানা নেই। এরমধ্যেই গাছ থেকে রস বের হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে এবং তা সংগ্রহ করার হিড়িক পড়েছে।’
 
বড়াইপাড়া জামে মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মহসীন আলী বলেন, ‘গাছটি দান পাওয়ার পর মসজিদ কমিটি ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। ক্রেতা ২ হাজার টাকাও দিয়েছে। গাছ যেদিন কাটবে, সেদিন বাকি টাকাও পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরমধ্যেই গাছ নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড পড়ে গেছে। রস সংগ্রহ করতে গাছের যেকোনো অংশে বোতল লাগাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।’
 
নিমগাছটির রসের স্বাদ খেজুরের রসের মতো হলেও এর আশপাশে মেহগনি ছাড়া আর কোনো গাছ নেই। গাছের নিচে থাকা মাটির গুণাগুণ ও আশপাশের বিভিন্ন পরিবেশের কারণে নিমগাছের রসের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ কে এম শফিকুর রহমান বলেন, ‘এমন ঘটনা খুব কম দেখা গেলেও একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। মাটির নিচের গুণাগুণসহ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে এমনটি হতে পারে। তবে এটি হয়ত কয়েকদিনের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।’ ফিজিও কেমিক্যাল কন্ডিশনের কারণ হতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গাছের শিকড় মাটির নিচে যেখানে গেছে, হয়ত সেখানে এমন কোনো পদার্থ রয়েছে যার সংস্পর্শে এসেও নিমগাছটিকে আঘাত করার পর বের হওয়া রসের স্বাদে মিষ্টতা আসতে পারে। 

তাসমিম

×