ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

২৬২ কোটি টাকার কপোতাক্ষ জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে 

কাজের ধীরগতিতে ফের ভরাট হচ্ছে খাল

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

কাজের ধীরগতিতে ফের ভরাট হচ্ছে খাল

টিআরএম সংলগ্ন পাখিমারা সংযোগ খাল পলি জমে ভরাট হচ্ছে

কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে  প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২৬২ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। সরকারের টিআর প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা ৮ বছরের ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছে না। জমির মালিকদের ১০ বছরের ক্ষতিপূরণ পাওনা হলেও তাদের মাত্র ২ বছরের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এই জমি চাষাবাদের অনুপযোগী অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। বাঁধ মেরামত করে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে বিলে টিআরএম চালু করা হবে কি না সে ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে কি সিদ্ধান্ত সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা জানেন না।  প্রকল্প শেষে এই বাঁধ অপসারণ করা হবে কিনা অথবা  বাঁধের মাটি কে এবং কীভাবে অপসারণ করবে সে বিষয়টিও অনিশ্চিত।

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে জমির মালিকরা পানি সম্পদ মন্ত্রণালযের সচিব বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। জমির মালিকদের দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, এ অঞ্চলের কপোতাক্ষ অববাহিকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে  প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ১ম পর্যায়’ প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারমূলক একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় সরকারের পক্ষ থেকে জমির মালিকদের  সব ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।  নদীর নাব্য বৃদ্ধির জন্য ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৬ বছর অধিগ্রহণকৃত পাখিমারা বিলের ১৫৬২ একর জমিতে জোয়ারাধার (টিআরএম) কার্যক্রম চললেও জমির ফসলের জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ সম্পূর্ণ দেওয়া হয়নি।   
তথ্যানুযায়ী, ১ম পর্যায় প্রকল্পে ৬ বছর টিআরএম চলাকালে পাখিমারা বিলের জমির মালিকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ  ২০১৫ থেকে ২০ সাল পর্যন্ত পাওয়ার কথা ছিল ৪০ কোটি ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১২ টাকা।  জমির মালিকদের দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি ১২ লাখ ৭২ হাজার ৭৬৪ টাকা। প্রথম ২ বছরের বকেয়া টাকাসহ পরবর্তী ৪ বছরের মোট ২৯ কোটি ৮৮ লাখ ৪ হাজার ১৪৮ টাকা  জমির মালিকরা এখনো পায়নি।  জমির মালিকদের অভিযোগ ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের জন্য সরকারের শর্তানুযায়ী এসএ খতিয়ানের পর্চা, নামপত্তন, ক্রয়ের দলিল, পিঠ দলিল, হাল জরিপের পর্চা, খাজনা প্রদানের হাল দাখিলা, প্রাপ্য জমির হিসাব বিবরণী, নাগরিক সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ (চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িত) ১২ রকমের কাগজ জেলা প্রশাসকের এলএ শাখায় জমা দিতে হয়।

এসব শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষে যাদের প্রথম বছরের টাকা ছাড় করা হয়েছে তাদের অনেকেই  ২য় বছর টাকা উত্তোলন করতে পারেনি বলে সচিব বরাবর অভিযোগ করেছেন।  এলাকার অধিকাংশ কৃষকদের প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী ৪ বছর (২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১) তারা ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি এবং তাদের জমিতে ফসলও ফলাতে পারেনি।
পাশাপাশি এই প্রকল্পের জন্য ২০১৫ সালে সংযোগ খাল নির্মাণের জন্য ১০.২৮ একর জমি স্থায়ী অধিগ্রহণ করা হয়। এই জমির মালিকরা এখনো কোন ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি। সংযোগ খালের জন্য ৩৪টি পরিবার বাস্তুচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। পেরিফেরিয়াল বাঁধ মেরামত করে টিআরএম চালু করাও হচ্ছে না। এতে একদিকে  জমির মালিকরা  ক্ষতির শিকার হচ্ছে, পাশাপাশি নদী ফের নব্য হারাচ্ছে। 
এদিকে কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প-২য় পর্যায় (জুলাই ২০২০ হতে জুন ২০২৪) ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দের ৪ বছর মেয়াদের কার্যক্রম শুরু হলেও জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো পায়নি। এ প্রকল্পে ১ম দুই বছরের জন্য একরপ্রতি প্রতিবছর ৫৩,৭১৩ টাকা হিসেবে মোট ১৬ কোটি ৭৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু সে অর্থ জমির মালিকদের দেওয়া হচ্ছে না  বলে অভিযাগ। সচিবের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের অভিযোগ, টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জলাবদ্ধতা থেকে সকল এলাকার মানুষ উপকৃত হলেও তারা সমস্যায় রয়েছেন।

সময়মতো পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পারা এবং এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাবে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। জীবনধারণের প্রয়োজনে অধিকাংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে। জীবিকার তাগিদে অনেকেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। স্মারকলিপিতে ১ম পর্যায় প্রকল্পের বকেয়া ক্ষতিপূরণের টাকা এবং চলমান ২য় পর্যায় প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের টাকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহজ উপায়ে পাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

×