ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বোড়াগাড়ী-চিলাহাটি ভাউলাগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প

বেশি ক্ষতিপূরণের আশায় স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

বেশি ক্ষতিপূরণের আশায় স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

সড়ক সোজা ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পে অধিগ্রহণের নোটিস দেওয়া জমিতে রাতারাতি গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা

ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ সড়ক সোজা ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পে অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দেওয়া জমিতে রাতারাতি গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। এর মধ্যে দুই থেকে তিনতলা ভবনও করা হয়েছে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট। বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাপনা থাকলে সেই জমি রাস্তার কাজে অধিগ্রহণ করলে বেশি টাকা দেবে সরকার।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, অধিগ্রহণের নোটিস দেওয়া জমিগুলোতে ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী আর রডের পরিবর্তে বাঁশ। ইটের গাঁথুনিতে সিমেন্টের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে কাদা-মাটি। এদিকে আবার ভবিষ্যতে চিলাহাটি স্থলবন্দরে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ৭০ ফুট। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে আটকে আছে ভূমি অধিগ্রহণ। অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দেওয়া এ ৭০ ফুট জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে অবৈধ অবকাঠামো। যাতে অধিগ্রহণ মূল্য বেশি পাওয়া যায়।  
জানা যায়, নীলফামারীর ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ সড়ক ধরেই ডোমারের বোড়াগাড়ি হয়ে চিলাহাটি পৌঁছানোর অন্যতম পথ এটি। আবার এ পথে যাওয়া যায় পঞ্চগড়ের ভাউলাগঞ্জে। তবে সড়কটিতে অসংখ্য বাঁক থাকায় আর সড়কটি সরু হওয়ায় সোজাকরণ ও প্রশস্তকরণের প্রকল্প হাতে নেয় নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে সড়কের দুপাশে ৮৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেজন্য ৪ ধারার নোটিস দেওয়া হয় জমির মালিকদের। নোটিস পাওয়ার পরও কিছু অসাধু মহল বেশি দামে জমি কিনে তৈরি করছে অসংখ্য ভবন আর দোকানপাট। 
নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ৪৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিগত ২০১৯ সালে বোড়াগাড়ী-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১২ ফুট প্রস্থের সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ শুরু না হওয়ায় থমকে আছে সড়কের কাজ। এ কাজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসে।
ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের  সেলিম সরকার বলেন, আমাদের এখানকার প্রায় ১৫-২০ পরিবারের ঘর-বাড়ির জমি রাস্তায় চলে গেছে। আমাদের আর কোনো জমি নাই, তাই আমরা অন্যত্র চলেও যেতে পারছি না।  
বোড়াগাড়ী এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, সরকার  জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দিয়েছে। নোটিস পাওয়ার পর সেই জমিতে অসংখ্য অবৈধ ঘরবাড়ি, দোকানপাট গড়ে উঠেছে। যা আগে ছিল না। তারা আসলে চান না, সড়কটি প্রশস্ত হোক। এ কাজের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত।
নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, ভাউলাগঞ্জ থেকে বোড়াগাড়ী পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত ১২ ফুট। এখন রাস্তাটি ১২ ফুট থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ ফুট  প্রশস্ত করা ও সোজা করার জন্য ৪৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দে ২০১৯ সালে কাজ শুরু করা হয়। কাজ চলছে। 
এ কাজের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে। বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কটি আঁকাবাঁকা থাকায় রাস্তা সোজা করা হবে। অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়াধীন জমিগুলো মাপজোক করার সময় ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করে রাখা হয়েছে। 
এরপর জমির মালিকদের নোটিস করা হলে অসংখ্য অবৈধ অবকাঠামো গড়ে উঠতে থাকে। তাদের ধারণা, অবকাঠামো থাকলে জমির মূল্য বেশি পাওয়া যাবে। কিন্তু তার পূর্বেই জমির হালনাগাদ আমরা সরেজমিনে সম্পন্ন করি। এখন জমি অধিগ্রহণ করা হলে ভিডিও ও স্থিরচিত্র দেখেই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

×