
জেলার বিভিন্ন স্থানে সমলয় ভিত্তিতে আবাদকৃত ধান কাটা উৎসব
‘হাতিকে ঠেলা যায়- কিন্তু কার্তিককে ঠেলা যায় না’। ইতিহাসের সেই প্রবাদ বাক্যটি বর্তমানে হারিয়ে গেছে। বাংলা পঞ্জিকায় কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। এক সময় অভাবের মাস বলে খ্যাত ছিল কার্তিক। কার্তিক মাস এলেই উত্তরবঙ্গে বলা হলো এই এলো মরা কার্তিক। মানে কাজের অভাবে মানুষজন অভাবে পড়ত খাদ্যের অভাবে মানুষ মারা যেত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি সেক্টরসহ বিভিন্ন সেক্টরের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে বেকারত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ায় ‘উত্তরের মরা কার্তিক আজ ভরা কার্তিকে পরিণত হয়েছে। কার্তিক যেন হয়ে এসেছে নতুন ধানের নবান্নের ঘ্রাণ। তাই ফুরফুরে মেজাজে কৃষক ফসল যেমন ঘরে তুলছে, তেমনি নতুন ফসল চাষাবাদে জমিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।’
শনিবার নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের কৃষক আলম হোসেন বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের কাছে শ্রেষ্ঠ যাদুকর। তিনি প্রধানমন্ত্রী হবার পর থেকে কৃষি সেক্টরে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এমন সরকার প্রধান আমাদের সারা জীবনের জন্য প্রয়োজন। গ্রামীণ জনপদে বইছে এখন উৎসবের আমেজ। গ্রামে যাদের শিকড় কেবল তারাই এ উৎসবের মর্মার্থ অনুধাবনে সক্ষম। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দই আলাদা। এ সময় কৃষকদের চোখে ভাসতে দেখা যায় হাসির ঝিলিক।
কিশোরীগঞ্জ উপজেলার পুঁটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম (৪৭) বলেন, মঙ্গা দূরীকরণে শেখ হাসিনা আমাদের কাছে মহান। তার কারণেই আজ কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় আমন ধানে স্বল্পমেয়াদি জাতের উদ্ভাবন ও দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে কার্তিক মাসেই কৃষকের ঘরে উঠছে সোনালি ধান।
এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি কৃষক মঙ্গা দূরীকরণে স্বল্পমেয়াদি ধান আবাদ করে সেখানে আলু চাষ করছে। পানিয়ালপুকুর এলাকার কৃষক মোছারুল (৪৫) বললেন, অন্যান্য বছরের নতুন এবার আগাম আমন ধানের মতো এবার আলু আবাদও বিপ্লব ঘটাবে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের গ্রানুলা, সেভেন জাতের আলুই বেশি লাগাচ্ছে। কৃষিশ্রমিক জিয়ারুল, শাবুল, বেলাল, টিটো, জহুরুল, খোকন, মানিক, গোলাপ, রঞ্জিত বলেন, আগাম জাতের আমন ধান কাটার পর তারা এখন আলুখেতে কাজ করে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ৫০০ টাকা। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। দোআঁশ মাটিতে ৫০-৫৫ দিনে উত্তোলনযোগ্য সেভেন জাতের আগাম আলুর বীজ রোপণ করা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে নতুন আলু ভোক্তাকে দিতে পারলে ভালো বাজারমূল্য পেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হবেন চাষিরা। নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় আলু চাষ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচুজমিতে আলু চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিচু জমিতে আবহাওয়া দেখে রোপণের কথা বলা হচ্ছে।
মাগুরায় আমন ধান কাটা উৎসব
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, মাগুরা শ্রীপুরের মধুপুর গ্রামে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে সমলয় ভিত্তিতে আবাদকৃত ধান কাটা উৎসব। মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর শনিবার দুপুরে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। মধুপুরের স্থানীয় একটি মাঠে ৭৫ জন কৃষক সমলয় (সিংক্রোনাইজ) ভিত্তিতে বারি-৭৫ জাতের এই ধান চাষ করেছে। এখানে হেক্টরপ্রতি ৫.১০ টন ধান ও ৩.৩৫ টন চাল উৎপন্ন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সমলয় ভিত্তিক ধান চাষাবাদের সুবিধা হচ্ছে ধানের বীজ থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক ও অন্যান্য উপকরণ বিনামূল্যে কৃষি বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। হারভেস্টিং মেশিনের মাধ্যমে দ্রুত ধান কেটে কৃষকের ঘরে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ ছাড়া চারা উৎপাদন থেকে শুরু করে চারা রোপণ পর্যন্ত সব কাজ হয় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। কৃষি বিভাগ এখানে কৃষকের সহযোগিতায় নিবিড় পরিচর্যা করে। ফলে ফলন হয় ভালো। কৃষক বিনামূল্যে ধান ঘরে তুলতে পারে। তেমন একটা শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি ধানগুলো একসঙ্গে একই মাঠে একইসঙ্গে রোপণ হওয়ায় একই সময়ে সার সেচ ও অন্যান্য পরির্চযা করা সহজ হয়। ধান ওঠে একই সময়ে। উন্নত জাতের ধান হওয়ায় ভালো ফলনের পাশাপাশি আগামীর মৌসুমে ধান রোপণের আগে স্বল্প জীবনকালীন উচ্চ ফলনশীল এই ধান চাষে অন্তত দুই মাস সময় বাঁচে। যেখানে কৃষক রবি মৌসুমের আর একটি ফসল ঘরে তুলতে পারে।
জেলায় এবার ৬২ হাজার ১০১ হেক্টর রোপা আমন ধান জমিতে চাষ হয়েছে। আমন ধান কাটা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহল, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন রশিদ মুহিত উপস্থিত ছিলেন।