
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও বসে নেই রাজনৈতিক দলগুলো
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও বসে নেই রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এর মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি কিছু তরুণ নেতাও মনোনয়নের আশায় নির্বাচনের মাঠ গরম করছেন। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন, এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহলের যেন শেষ নেই।
এক সময় জাতীয় পার্টির দুর্গ বলা হলেও গাইবান্ধার পাঁচটি আসনের চারটিই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। ভোটের আনুষ্ঠানিকতা শুরু না হলেও গাইবান্ধায় তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী হাওয়া এখন তুঙ্গে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী সরকারের উন্নয়ন প্রচারের মাধ্যমে জোরেশোরেই নির্বাচনী গণসংযোগে মাঠে নেমেছেন। তবে প্রতিটি আসনেই মনোনয়ন কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এর আগের নির্বাচনগুলো আওয়ামী লীগের অনুকূলে থাকলেও সাম্প্রতিককালে স্থানীয় রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষ গ্রুপ হওয়ায় আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তবে, সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা এসব অপপ্রচারে কান না দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধ করেছেন।
গত নির্বাচনে চারটি আসন পেলেও এবার একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আসন ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হবে ক্ষমতাসীনদের। তারপরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার চালিয়ে মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। বিএনপিতে বিদ্রোহী না থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে তারা। জেলার পাঁচটি আসনে জামায়াত ও জাতীয় পার্টি (জাপা) ভোটের হিসাব-নিকাশ বদলে দিতে সক্ষম বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দল দুটির মনোনয়ন ও সমর্থনপ্রত্যাশীরাও ভোটারদের মন জয় করতে উপজেলা থেকে গ্রামে জনসংযোগ চালাচ্ছেন।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) ॥ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-১ আসন গঠিত। ২০১৭ সালের উপনির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফরুজা বারীকে পরাজিত করে জয়ী হন জাপার ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এরপর ২০১৮ সালে মহাজোটের শরিক হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। জামায়াত-অধ্যুষিত এ আসনটি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ উদ্ধার করায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা এবার দলীয় প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াতের ভোটব্যাংক ও বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের নিয়ে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে গোপনে কাজ করছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান। বিএনপির কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও নেই এখন পর্যন্ত দলটির তেমন তৎপরতা।
আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বোন আফরুজা বারী, যিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতিও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবুও মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাপার বর্তমান এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাপা নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মোহসীন সরদার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে।
এ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাপার হাফিজুর রহমান, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাপার ওয়াহেদুজ্জামান সরকার, ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের মাওলানা আব্দুল আজিজ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাপার আব্দুল কাদের খান, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মঞ্জুুরুল ইসলাম লিটন নির্বাচিত হন।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে আততায়ীর গুলিতে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম নিহত হলে ২০১৭ সালে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা নির্বাচিত হন। পরে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে আবারও উপনির্বাচনে জাপার আইন ও বিচার বিষয়ক উপদেষ্টা ও উপজেলা জাপা সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালেও নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
গাইবান্ধা-২ (সদর) ॥ একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-২ (সদর) গঠিত। এই আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগের এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি। তিনি এই আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। তবে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের কাছে হারানো আসনটি এবার কব্জায় নিতে মরিয়া জাপার নেতাকর্মীরা।
এ আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাপার আব্দুর রশিদ সরকার, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লুৎফর রহমান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা গিনি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরপর দুবার আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা বেগম গিনি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান এমপি মাহাবুব আরা বেগম গিনি, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ শামস উল আলম হিরু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক মণ্ডল, গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম ¯িপকার শাহ আব্দুল হামিদের নাতি শাহ সারোয়ার কবীর, সাবেক সাংগঠনিক স¤পাদক পিয়ারুল ইসলাম ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ স¤পাদক আমিনুর জামান রিংকু।
রাজনীতির মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় আওয়ামী লীগ ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে পাওয়া, না পাওয়া থেকে ক্ষোভ-মতবিরোধ এবং তীব্র অন্তর্কলহ রয়েছে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটির নেতাকর্মীরা এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। একপক্ষ আরেকপক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও কাদা ছোড়াছুড়ির সঙ্গে মাঠ দখলের লড়াইয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে একে দলীয় কোন্দল-বিভক্তি নয় বরং নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা হিসেবেই দেখছেন দলটির জেলা নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত না নিলেও রাজপথের আন্দোলন জোরদারের মাধ্যমে দাবি আদায় করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। জেলায় দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কেবল কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো পালন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অন্যদিকে জাপার স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। এ ছাড়া দলের দুই শীর্ষ নেতা রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদেরের ঐক্যে ফাটল ধরায় জাপার জেলা নেতৃত্বের মাঝেও এর প্রভাব পড়েছে।
নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকারবিষয়ক স¤পাদক আনিসুজ্জামান খান বাবু, জেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদক মাহমুদুন নবী টিটুল ও পৌর বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল আরজু।
সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা জাপার আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ সরকার ও সদস্য সচিব সরোয়ার হোসেন শাহীন এবার দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এবারও জোটগত নির্বাচন হলে এ আসনটি জাপা দাবি করবে বলে জানান নেতারা। অন্য দলগুলোর মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ স¤পাদক মিহির ঘোষ মনোনয়নপ্রত্যাশী।
গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী) ॥ পলাশবাড়ীর নয়টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও সাদুল্যাপুরের ১১টি ইউনিয়নসহ মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-৩ আসন গঠিত। জাপার পুরনো ঘাঁটি হলেও বর্তমানে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। যদিও দলটিতে রয়েছে একাধিক প্রার্থী ও সাংগঠনিক গ্রুপিং। সেটা কাজে লাগিয়ে আবারও আসনটি উদ্ধারের চেষ্টা করবে জাপা। মহাজোটে থাকায় আসনটি তাদের বাইরে চলে গেছে দাবি করে এবার নিজেদের প্রার্থী দিয়ে আসন উদ্ধার করবে বলে জানান তারা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল থেকে এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতি, পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও সাদুল্যাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহারিয়ার খান বিপ্লব, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ জাকারিয়া খন্দকার, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সরকার লিপন ও সাধারণ স¤পাদক তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা (অব) মেজর মফিজুল হক সরকার ও মাজেদুর রহমান দুলু।
নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক ও সাবেক পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আবুল কাশেম মো. নজরুল ইসলাম লেবু। জেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদক মাহামুদুন নবী টিটুল বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গাইবান্ধায় বিএনপি অনেক বেশি সংগঠিত। পার্টিতে কোনো বিভেদ-কোন্দল নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রয়াত সংসদ সদস্য ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর ছেলে জেলা জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বী চৌধুরী, জাপা নেতা মমতাজ উদ্দিন, জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদের সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পী।
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) ॥ জেলার সবচেয়ে বড় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৪ আসন। একটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসন। গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী নবম সংসদ নির্বাচনে এবং অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ (স্বতন্ত্র, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন।
তবে রংপুর চিনিকলের বাগদা ফার্মের সাঁওতাল পল্লিতে হামলা মামলায় বিতর্কিত হয়ে মনোনয়নবঞ্চিত হন অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। মনোনয়ন দৌড়ে মাঠ গরম করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের কাছে। মনোনয়ন পেতে নিয়মিত করছেন সাংগঠনিক কার্যক্রম।
তবে এলাকার বাইরে ঢাকায় থাকায় তেমন সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেই বর্তমান সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও জনসাধারণের সঙ্গে মিশে চলায় হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ প্রধান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক মোকাদ্দেস আলী বাদু এবং সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আতাউর রহমান সরকারও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
আসনটিতে বিএনপির উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন রয়েছে। প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মোত্তালেব আকন্দ বিএনপিকে গোবিন্দগঞ্জ আসনে শক্ত গণভিত্তি দেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভালো ফল অর্জন করে। তবে এই আসনে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাওয়া প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। ভোটে অংশ নিলে আব্দুল মোত্তালেব আকন্দের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিংকন থেকে শুরু করে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক কবির আহমেদ, পৌর বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমেদ ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম।
অন্যদিকে, জাপার উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ কাজী মো. মশিউর রহমান, জামায়াতের সাবেক জেলা আমির মো. আব্দুর রহিম সরকারের নাম শোনা যাচ্ছে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা সভাপতি আব্দুল মতিন মোল্লা ও সিপিবির উপজেলা সভাপতি অশোক আগারওয়াল ও সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলামও প্রার্থী হতে পারেন।
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি ও সাঘাটা) ॥ ফুলছড়ি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও সাঘাটা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। বছরের শুরুতে ৪ জানুয়ারির উপনির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলের নেতাকর্মীসহ এলাকার ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। গাইবান্ধা-৫ আসন জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন নিজেদের দখলে থাকলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে আসনটি হারায় জাপা। তাই আবারও আসনটি দখলে নিতে মরিয়া জাপা। দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে যোগাযোগ শুরু করেছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান রিপন ও জাপার এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জুকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন স্থানীয়রা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন আলোচনায় আরও আছেন ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক প্রয়াত সংসদ সদস্য এবং সাবেক ডেপুটি ¯িপকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী, ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ ও যুবলীগ নেতা সুশীল চন্দ্র সরকার।
জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাঘাটা উপজেলা সভাপতি এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু, গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আতাউর রহমান আতা। অন্যদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়ন দৌড়ে থাকবেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার ও জেলা বিএনপির সদস্য সোহাগ খান। সিপিবির প্রার্থিতা চাইবেন সাঘাটা উপজেলা শাখার সাধারণ স¤পাদক যোগেশ্বর বর্মণ। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. একরাম হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী।