
.
উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নীলফামারী, লালমনিরহাট দুই জেলায় তিস্তা তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলের শত শত বসতবাড়ি, ফসলি জমি, গ্রামের রাস্তাঘাট বানের পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এদিন সকাল ৬টা থেকে হঠাৎ করে উজানের ঢল বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ বন্যার আতঙ্কে পড়েছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ সূত্র মতে প্রবল বৃষ্টিতে ইতোমধ্যেই ভারতের তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক, সংকোশ, জলঢাকা, মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের দোমহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিকেলে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ধেয়ে আসছে। ফলে উজানের সঙ্গে সংযুক্ত তিস্তা নদীতে ঢল নেমে এসেছে বাংলাদেশে।
অপরদিকে উজানর ঢল অব্যাহত থাকায় তিস্তার বন্যায় নীলফামারী ও লালমনিরহাট দুই জেলায় আচমকা পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ৩০ গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ২০ হাজারের বেশি পরিবার ও তলিয়ে গেছে মৌসুমি ফসল ধান ও শাক-সবজি।
এদিকে তিস্তার চরগ্রামের মানুষজন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দুই জেলার জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিরা নজরদারি বৃদ্ধি করেছেন তিস্তা অববাহিকায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে শুক্রবার ভোর ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার (৫২.১৫) তিন সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও সকাল ৯টায় বিপৎসীমা বরাবর প্রবাহিত হতে থাকে। বেলা ১২টায় বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার, বেলা ৩টায় বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার (৫২.২৮) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। ফলে নীলফামারীর ডালিয়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখে ঢলের পানি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, তিস্তা ব্যারাজ দিয়ে প্রতিমিনিটে ৪ লাখ কিউসেক পানি ভাটিতে প্রবাহিত হচ্ছে।
সূত্র মতে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার কালীগঞ্জ, পূর্বছাতনাই, ঝাড়সিংহেশ্বর, খগার চর, বাংলাপাড়া, উত্তর খড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, ফরেস্টের চর, ভাবনচুর, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী, কইমারী; লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, রাজপুর এবং গোকুন্ড ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের শত শত বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে কাজ করছে। তিনি জানান তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত।
উল্লেখ, চলতি বর্ষায় গত ১৯ জুন প্রথমবার তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার উপর ওঠে। পানি বাড়া-কমার মধ্যে থেকে গত ১৫ জুলাই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। সেদিন তিস্তার পানি বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার নিচে নামার পর পর্যায়ক্রমে পানি কমে যায়। এর পর গত ১৪ আগস্ট সকালে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপরে ওঠে। আবার সেদিনই সন্ধ্যায় বিপৎসীমার নিচে নামে।