ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়বে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে মৎস্য উৎপাদন

দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম হচ্ছে মহানন্দায়

জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:৫২, ১১ জুলাই ২০২৩

দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম হচ্ছে মহানন্দায়

রেহাইচর এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর ভাটিতে তৈরি করা হচ্ছে রাবার ড্যাম 

দেশের সবচেয়ে বড় ও দক্ষিণ এশিয়ার ১০ম বৃহত্তম রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হচ্ছে। পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযোগ হওয়া মহানন্দা নদীতে জেলা শহরের রেহাইচর এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর ভাটিতে  হচ্ছে  প্রকল্পটি। এর কাজ হলে নদীর দুই ধারের ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কৃষি উৎপাদন ও দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকার মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নদীপাড়ের বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে প্রকল্পটি।

ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার, বৃষ্টি কমে যাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এখনকার পানিশূন্য মহানন্দা নদীতে সারাবছর প্রায় ১৫-২০ ফুট পানি থাকবে। এই পানিতে বছরজুড়ে দেশী মাছ আহরণ ও কৃষি জমিতে চাষাবাদের পরিমাণ বাড়বে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে সহজে মেলে না খাবার পানি। এমনকি ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক টিউবওয়েল। রাবার ড্যাম প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বছরজুড়ে নদীর পানি থাকার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক থাকবে। ফলে সহজেই মিলবে সুপেয় পানি। 
সদর উপজেলার বারোঘরিয়ার ষাটোর্ধ কৃষক আহমেদ আলী জানান, রাবার ড্যামের কাজ শেষ হলে নদীর দুই ধারের অনেক পতিত জমি চাষাবাদ হবে। এমনকি বরেন্দ্র অঞ্চলের শতশত বিঘা পতিত জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে। একদিকে যেমন এই এলাকা মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি অন্যদিকে কৃষিতে চাষাবাদ বাড়বে। তাই আমাদের দাবি, দ্রুত এর কাজ শেষ করা হোক। স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, নদীতে এখন তেমন মাছ পাওয়া যায় না। পানি না থাকলে মাছ থাকবে কোথায়। বর্ষা ছাড়া বাকি ৮-৯ মাস নদীতে চর জেগে ওঠে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের খেলার মাঠে পরিণত হয় মহানন্দা নদী। আমরা আশা করছি, রাবার ড্যাম নির্মাণ হলে বছরজুড়ে পানি থাকবে। এতে মাছের উৎপাদনও স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে। 
জেলা শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, খরার সময় টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। এমনকি আমাদের এলাকার অনেক টিউবওয়েল বন্ধ হয়ে গেছে। পানির সংকটে থাকি শুষ্ক সময়ে। এই রাবার ড্যাম হওয়ার ফলে এই সংকট কেটে যাবে। 
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রাং বলেন, রাবার ড্যামের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষাবাদের উঁচু জমিতে সেচ সুবিধার পাশাপাশি কমবে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ও অনাবাদি জমির পরিমাণ। আবাদি জমি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে ৩৯৩ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ড্যাম প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। 
আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান। তিনি জানান, মহানন্দা নদীর নাব্য ঠিক রাখতে ড্রেজিং ও ভাঙনরোধে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়। এজন্য ১৮৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করে পরিকল্পনা কমিশন। পরে এর ব্যয় বাড়িয়ে ২৫১ কোটি টাকা করা হয়।

×