
ময়মনসিংহ নগরজুড়ে সড়কের ওপর এভাবেই ঝুলে রয়েছে তারের জঞ্জাল
ইন্টারনেট সার্ভিস ও ডিস ক্যাবল অপারেটরদের তারের জঞ্জাল ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ময়মনসিংহ নগরবাসীর। নগরজুড়ে সড়কের ওপর স্পর্শকাতর বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এলোমেলোভাবে ঝুলিয়ে রাখা এসব তার থেকে প্রায়ই ঘটছে অগ্নিকা-ের ঘটনা। ঝুলে থাকা তারের জঞ্জালে প্রায়ই আটকে যাচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। অনেক সময় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় সড়কের ওপর ছিড়ে পড়ছে তারের জটলা। এ নিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় নগরবাসী আতঙ্কে থাকলেও নির্বিকার সিটি কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন ছাড়া তার ঝুলিয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ডিস ক্যাবল অপারেটররা ব্যবসা করলেও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলিয়ে রাখা এসব তারের জঞ্জাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নাগরিক নেতৃবৃন্দ। দ্রুত এসব তার মাটির নিচ দিয়ে স্থাপনের দাবি উঠেছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু জানান, ময়মনসিংহ এখন বিভাগীয় নগরী। দেশের প্রতিটি বিভাগে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে তারের এই জঞ্জাল থাকবে না। তবে কবে নাগাদ শুরু হতে পারে এই কাজ তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সিটি মেয়র।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ময়মনসিংহ নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা গাঙিনাপাড়, স্টেশন রোড, রামবাবু রোড, দুর্গাবাড়ি রোড, সিকেঘোষ রোড, জিলা স্কুল মোড়, চরপাড়া মোড়, পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ মোড়সহ নগরীর প্রতিটি সড়ক ও অলিগেিলর স্পর্শকাতর বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বছরের পর বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে খেয়াল খুশিমতো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস ও ডিস ক্যাবল অপারেটরদের অসংখ্য তার। দীর্ঘদিন যাবত বিনা বাধায় এসব তার ঝুলিয়ে রাখায় তারের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে ময়মনসিংহ নগরী। এতে একদিকে বাড়ছে নানা দুর্ঘটনা। অন্যদিকে ময়মনসিংহ নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। অথচ এসব দেখার যেন কেউ নেই।
ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, স্থানীয় সিটি কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় যে যেভাবে পারছে সেখানেই ইচ্ছেমতো তার ঝুলিয়ে রাখছে ইন্টারনেট সার্ভিস ও ডিস ক্যাবল অপারেটররা। অবিলম্বে সড়কের খুঁটির ওপর থেকে তারের জঞ্জাল নামিয়ে মাটির নিচ দিয়ে বসানোর দাবি জানিয়েছেন এই নাগরিক নেতা।
নগরীর প্রতিটি বৈদ্যুতিক খুঁটি তারের এই জঞ্জালের ভার এখন আর যেন বইতে পারছে না। তারের এই জঞ্জালের কারণে অনেক জায়গায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার দেখাও যায় না। বিপজ্জনকভাবে ঝুলিয়ে রাখা তারের এই জঞ্জাল যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা বিদ্যুৎ বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ময়মনসিংহ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ জানান, ইন্টারনেট সার্ভিস ও ডিস ক্যাবল থেকে প্রায় ঘটছে অগ্নিকা-ের ঘটনা। এ সময় পুরো ফিডারের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে আগুন নেভাতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
ইনসুলেটর ও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ছাড়াও ইনসুলেশন করা বৈদ্যুতিক তার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তীব্র গরমের সময় বিদ্যুতের লোড বাড়লে এসব তারের জঞ্জাল থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের অগ্নিকা--এমন আশঙ্কার কথা জানালেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, খবর পেয়ে গত রমজানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৩টি স্পটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে অপরিকল্পিতভাবে যে হারে তার ঝুলানো হচ্ছে তাতে আগামীতে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রগুলো আরও জানায়, গত রমজানে তীব্র দাবদাহের সময় নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা গাঙিনাপাড় ট্রাফিক মোড়, বিদ্যাময়ী স্কুলের সামনে ও পালিকা শপিং সেন্টারের সামনে তারের জঞ্জাল থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়ে আগুন নেভায়। এর আগে নগরীর মিন্টু কলেজ লেভেল ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর ট্রেন পার হওয়ার সময় ঝুলে থাকা তারের জঞ্জালে বাঁধা পেয়ে ট্রেনের ছাদে থাকা কয়েক আরোহী পড়ে গুরুতর আহত হলে তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনার পর স্থানীয় মানবিক ব্যবসায়ী নেতা শফিকুর রহমান লেভেল ক্রসিংয়ের দুই পাশে বাশের খুঁটি দিয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের তার কিছুটা ওপরের দিকে ঝুলিয়ে দেন।
ঝুলে থাকা তারের জঞ্জালে প্রায়ই পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আটকে যাচ্ছে। এ সময় তার ছিড়ে ব্যস্ত সড়কের ওপর পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। এতসব অগ্নিকা- ও তার ছিড়ে সড়কের ওপর পড়ে থাকার ঘটনারও পর ময়মনসিংহ সিটি কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কিংবা ডিস ক্যাবল অপারেটরদের ব্যাপারে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে এমন নজির নেই। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ময়মনসিংহ শাখার পরিচালক কাজী সাজ্জাদ হোসেন তারের জঞ্জাল ও নানা অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা সিটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন। সিটি মেয়র তাদের সহায়তা করলে মাটির নিচ দিয়েই এসব তার বসানো হবে।
মাল্টি ক্যাবল অপারেটরের স্থানীয় পরিচালক হারুন অর রশিদ জানান, ক্যাবল অপারেটরদের মাত্র একটি তার। বাকি সব তার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ঝড় বৃষ্টি কিংবা পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় কখনো কোনো এলাকায় ঝুলে থাকা তার ছিড়ে গেলে সেটি অপসারণ না করেই নতুন তার ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবেই বছরের পর বছর ধরে সৃষ্টি হচ্ছে জঞ্জালের।