নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর ॥ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা এবং নওপাড়া ইউনিয়নে শনিবার ১টার দিকে চরআত্রা আজিজিয়া স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এক হাজার পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করেছেন। পরবর্তীতে এই ২টি ইউনিয়নসহ ভেদরগঞ্জ, জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, কাঁচিকাটা ইউনিয়ন এবং চাঁদপুর জেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পাবে এ বিদ্যুৎ সংযোগ।
বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বলেন, শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তার ঘোষণা বাস্তবায়ন করছি।
মার্চ মাসে আরো ১হাজার ঘরে বিদ্যুৎ পাবে, মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে আমরা ১০ মেগাওয়াটের সাবস্টেশন চালু করবো। এখানে বিদ্যুৎ কখনও যাবে না কারণ চাহিদার তুলনায় ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদ্ধৃত্ত থাকবে। দরকার হলে এই সাবস্টেশন থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ আমরা মুন্সিগঞ্জ জেলায় সরবারহ করতে পারবো। নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রুত সময়ের মধ্যে চরবাসীকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার।
পদ্মার দুর্গম চর হওয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া হলো চরবাসীদের। এর আগে সকালে নওপাড়া বাজার সংলগ্ন নওপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, নওপাড়া মুন্সী আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয় নতুন নামকরণের ভিত্তিপ্রস্তর, চরআত্রা মুন্সী আলীমুজ্জামান রতন সড়ক ও চরআত্রা আজিজিয়া স্কুল এন্ড কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
এ সময় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহেরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার এস.এম. আশরাফুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদার, সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, সাবেক সচিব ফিরোজ আহমেদ, আরইবি ঢাকা জোনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জয়নাল আবেদীন, প্রকৌশলী আবুল হাসেম মিয়া ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত তানভীর আল নাসীফ।
এ ব্যাপারে আরইবি ঢাকা জোনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন জানান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী মহোদয় উদ্বোধনের পরেই বর্তমানে প্রায় এক হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার কাঁচিকাটা, চরআত্রা, নওপাড়া, কুন্ডেরচর ইউনিয়ন ও চাঁদপুর জেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য একটি ১০ এমভিএ উপকেন্দ্র, ২০ কিলোমিটার ৩৩ কেভি লাইন, ৪০০ কিলোমিটার ১১ কেভি লাইন নির্মাণ বর্তমানে চলমান আছে। ১০০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ বর্তমানে সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
এছাড়া ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ৩৩/১১কেভি ১০ এমভিএ উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজের ৮০ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার ৩৩ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১০০ ভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নওপাড়া ইউনিয়নে এক সেট ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। ১০ কেটি টাকা ব্যয়ে কাঁচিকাটা ইউনিয়নে এক সেট ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট টাওয়ার নির্মাণ এবং ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার ৩৩ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন সম্পন্ন করা হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া চরআত্রা বাজারের চায়ের দোকানদার মনা মিয়া বলেন, কখনো কল্পনা করিনি এই বাজারে বিদ্যুৎ পাব।
আজ আমার দোকানে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। সন্ধ্যায় দোকানে আলো ঝলমল করবে । আনন্দে চা বিক্রি করবো। চরআত্রা এলাকার ডা. মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, দুই বছর আগেও জানতাম না যে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসবে। কারণ পদ্মা নদীর মাঝের চরের মধ্যে আমাদের ইউনিয়নটি। পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর বদৌলতে আমরা বিদ্যুৎ পেলাম। বিদ্যুতের আলো পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত।
নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ আজগর সোহেল মুন্সী বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি একটি দুর্গম চর। পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এখানে বিদ্যুৎ এসেছে তা কখনো ভাবিনি। এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে এমন খবরে আমরা আনন্দিত।
