ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভোরের আলো ফোটার আগেই ঝকঝকে রাজশাহী নগর

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১ জুন ২০১৯

 ভোরের আলো ফোটার আগেই ঝকঝকে  রাজশাহী নগর

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ভোরের আলো ফোটার আগেই এখন ঝকঝকে হয়ে ফুটে উঠে রাজশাহী নগরী। এক বছর আগেও নগরীর পদ্মাপাড়ে সকালে হাঁটতে যেতে দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপতে হতো মানুষকে। তবে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা অভিযানে পাল্টে গেছে সেদিন। এখন ক্রমেই সবুজে রূপ নিচ্ছে নগরী। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি নতুন রাস্তাঘাট, নগরীতে জেনারেল এবং স্পেশালাইজ হাসপাতাল, হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং টেকনিক্যাল সুবিধা বৃদ্ধি, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, গণপরিবহন, রাস্তার আলোকায়ন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার প্রকল্প নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা আর এসব প্রকল্পের অগ্রগতিতে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে সবুজনগরী রাজশাহী। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তিনি প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেটি আর ধরে রাখা হয়নি। এবারও তার গুরুত্বের প্রথমে আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। তা ছাড়া কর্মসংস্থান, মানুষের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সরকার সহযোগিতা করছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বদলে যাওয়া নগরী দেখতে পাবে মানুষ। জানা যায়, রাজশাহী নগরীর পরিবেশ উন্নয়ন এবং পৌরসেবা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে রাত্রিকালীন আবর্জনা অপসারণ চালু করে। এরপর থেকে সারাদিনের ময়লা-আবর্জনা রাতের মধ্যে পরিষ্কার করা হতো। ফলে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই নগরীর রাস্তাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ঝকঝকে দেখতে পেতেন নগরবাসী। দেশে প্রথম এই কার্যক্রমটি চালু করেছিলেন তৎকালীন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০১৩ সালে লিটন পরাজিত হন। এরপর পরিচ্ছন্নতায় মন ছিল না রাসিকের। তবে আবারও মেয়র নির্বাচিত হয়ে লিটন ২০০৯ সালের মতো বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছেন। বিকেল হতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা সংগ্রহ করছে। সড়কের ময়লাও রাতেও পরিষ্কার করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন জানান, প্রতি অর্থবছর পরিচ্ছন্নতা খাতে সিটি কর্পোরেশন প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় করছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ছয়টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। কর্মীরা বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে সেখানে জমা করে। এরপর ট্রাকে করে সেই ময়লা নিয়ে ভাগাড়ে ফেলা হয়। রাসিক সূত্রে জানা যায়, নগরীর সড়ক উন্নয়নে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। নগরীর যানজট মোকাবেলা ও নগরবাসীর যাতায়াত নির্বিঘ্নে করতে ১৫টি সড়ক নিয়ে এই পরিকল্পনা নেয়া হয়। এর আওতায় প্রতিটি সড়ক ৪২ মিটার চওড়া করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর সড়কগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে। বাকি আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে ভূমি অধিগ্রহণে। রাজশাহীর বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যানও তৈরি করা হচ্ছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে চীনের বৃহত্তর কোম্পানি চায়না পাওয়ার। এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে চায়না পাওয়ারের একটি প্রতিনিধি দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জ্যুয়ো রাজশাহীতে এসে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। এরপর তিনি চীনের বৃহত্তর একটি কোম্পানি চায়না পাওয়ারকে আমার কাছে পাঠান। এ বছরের ৩১ জানুয়ারি কোম্পানিটির সঙ্গে বৈঠকে রাজশাহীর উন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারাও মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে রাজশাহীর উন্নয়ন করা হবে। তারা অর্থসহ সবকিছু বিনিয়োগ করবে। চীনের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী রাজশাহীতে নির্মাণ করা হবে ইকোপার্ক ও সায়েন্স সিটি। হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ও টেকনিক্যাল সুবিধা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া স্যুয়ারেজ ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে চায়না পাওয়ার নামে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। ফলে উন্মোচিত হয়েছে মাস্টার প্ল্যানে রাজশাহীর উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার। ৫০ বছর দীর্ঘমেয়াদী মাস্টার প্ল্যানটি বাস্তবায়ন হতে শুরু করলে পাল্টে যাবে পুরো রাজশাহীর চিত্র।
×