ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শারীরিক প্রতিবন্ধী বাহার এখন পরনির্ভর নয়

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 শারীরিক প্রতিবন্ধী বাহার এখন পরনির্ভর নয়

মনোবলের অদম্য শক্তি নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ বাহার (২৬) রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও অন্যের কাছে হাত পাততে লজ্জা তার। তাই শত কষ্টের মাঝেও রিক্সা চালাতে দ্বিধা নেই বাহারের। তবে যাত্রীরা তার শারীরিক অবস্থা বিশেষ করে তার দুটি হাতই ছোট এবং বাঁকা দেখে প্রথমতঃ তার রিক্সায় উঠতে চায় না। পরে উঠে দেখে সে ঠিকমতই চালাচ্ছে। এতে অনেকের করুণা হয়। কিছুটা হলেও বাড়তি ভাড়া কেউ কেউ দিয়ে থাকেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কালিচর গ্রামে। বাহারের পিতার নাম সিরাজ উল্যা। বাবা সিরাজ একজন কৃষক। নিজের জমি নেই। অন্যের সামান্য জমি বর্গাচাষ করে সংসার চালায়। দরিদ্র পিতার ছয় সন্তানের মধ্যে চারজন মেয়ে এবং দু’জন ছেলে। এর মধ্যে বাহার ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ। তিন বোন বিবাহিত। সবার ছোট ভাই আবুল কাসেম ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তাও বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট বোন ফাতেমা ৭ম শ্রেণীতে পড়ে। এর মধ্যে জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু পুত্রের জন্য অনেক চেষ্টা করে শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারেননি। তখনকার সময়ে চিকিৎসার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন ছিল। তাও চিকিৎসা করলে তার সুস্থতা ফিরে আসবে কীনা বা সে জীবিত থাকবে কীনা ছিল সন্দেহ। এ নিয়ে গরিব পিতা পুত্র বাহারের আর চিকিৎসা চালাতে পারেননি। পরে শিশু ছেলের প্রচন্ড আগ্রহ দেখে ওই অবস্থায় তাকে স্কুলে ভর্তি করেন। পঞ্চম শ্রেণী পাস করেছে বাহার। এর মাঝে নানান টানা হেঁচড়ার মাঝে লেখাপড়া আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি বাহারের। অর্থনৈতিক টানা পোড়নের কারণে পঞ্চম শ্রেণী পাস করে আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি বাহারের। অন্যের কাছে হাত পাতাও বাহারের পছন্দ নয় তার। নিজে কাজ করে চলবে এ মনোবল নাড়া দেয় তার মনে। বাবার অভাবের সংসার। বাবার ওপর বোঝা হয়ে থাকবেনা সে। কাজ করে খাবে। সংসারে বাবাকে সহযোগিতা করতে হবে। এরপর ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে সে পা চাপিয়ে রিক্সা চালানো শুরু করে। তাও ছিল দৈনিক ভাড়ার ভিত্তিতে। পরে দেড় বছর আগে একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাটারি চালিত একটি রিক্সা কেনে নেয় বাহার। -মহিউদ্দিন মুরাদ, লক্ষ্মীপুর থেকে
×