ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাগজের ঠোঙ্গায় সচ্ছল পাঁচ শতাধিক ঈরিবার

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৩ জুন ২০১৮

  কাগজের ঠোঙ্গায় সচ্ছল পাঁচ শতাধিক ঈরিবার

ঘনবসতিপূর্ণ শহর সৈয়দপুর। এখানে সীমিত আয়ের উৎসের কারণে অনেকে কাগজের ঠোঙ্গা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। পুরুষদের পাশাপাশি এ পেশায় পাঁচ শতাধিক পরিবার ধীরে ধীরে স্বনির্ভর হচ্ছেন। তাই এ পেশাটিকে শিল্প হিসেবে প্রসারে সরকারসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চাইছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা। ৩৪ বর্গ কি.মি. এ শহরে বাস করছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর যথাযথ আয়ের ব্যবস্থা সংকুলান না হওয়ায় পুরুষদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরাও ঘরে বসে বিভিন্ন হাতের কাজ শুরু করেন। এসব কাজের মধ্যে কাগজের ঠোঙ্গা তৈরির কাজটিও অন্যতম আয়ের উৎস। আর এতে পরিবারগুলোতে সচ্ছলতা এসেছে। শহরের গোলাহাট ক্যাম্প, বাঁশবাড়ী, কাজিহাট, হাওয়ালদারপাড়া, সুড়কি মহল্লা, লালগেট, মিস্ত্রিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে এ কাজ করে নিজেকে গড়ছেন। সহায়তা করছেন পরিবারকে। এর এভাবে পাঁচ শতাধিক পরিবার কাগজের ঠোঙ্গা বানিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ৩নং গোলাহাট এলাকার ননস্ট্যান্ডার্ড পাকিস্তানী ক্যাম্পের সভাপতি মকবুল। চাকরি করেন একটি হার্ডবোর্ড কোম্পানির দারোয়ান পদে। যা বেতন পান তা দিয়ে ৫ সদস্যের খাওয়াটুকুও জোটে না। তার উপর সন্তানদের লেখাপড়া। স্ত্রী শেফালি বেগমের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন বাড়ির কাজের পাশে ভিন্ন একটি আয়ের ব্যবস্থা। শুরু করেন বাজার থেকে কাগজ কিনে ঠোঙ্গা তৈরির কাজ। একমাত্র মেয়ে শিরিনও লেখাপড়ার ফাঁকে মায়ের সঙ্গে ঠোঙ্গা তৈরি করেন। এর আয় দিয়ে শিরিন কলেজে পড়েছেন। বিয়ে হয়েছে তার সচ্ছল পরিবারে। আর এভাবে এ শহরের বিভিন্ন এলাকার ৫ শতাধিক পরিবার আঁকড়ে ঠোঙ্গা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহের পর স্বনির্ভর হচ্ছেন। তাদের এখন কুঁড়েঘর থেকে টিনশেড পাক-আধা পাকা। অনেকের স্বামী রিক্সা-ভ্যান চালাত। সচ্ছলতা আসায় তারা এখন বিভিন্ন ব্যবসা করছেন। শেফালি বেগম জানান, বাজারের এক রিম কাগজ কিনতে হয় ১২শ’ টাকায়। এ কাগজ হতে ৫ হাজার ঠোঙ্গা বানিয়ে বিক্রির পর ৬ থেকে ৭শ’ টাকা লাভ হয়। শহরের চুড়িপট্টি এলাকার ঠোঙ্গা ব্যবসায়ী আনোয়ার জানান, পলিথিনের শপিং ব্যাগ বিক্রি ও তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঠোঙ্গার চাহিদা বেড়েছে। তাই নিজ বাড়িতে কারিগর রেখে ঠোঙ্গা বানিয়ে নিজেই বিক্রি করছি। এতে ব্যয় বাদ দিয়ে কেজি প্রতি দশ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়। হাওয়ালদারপাড়ার ঠোঙ্গা তৈরির কারিগররা জানান, পরিত্যক্ত কাগজ দিয়ে ঠোঙ্গা বানানো হয়। সিমেন্ট ব্যাগের কাগজ ও সাধারণ কাগজ দিয়ে দুই ধরনের ঠোঙ্গা তৈরি হয়। ঠোঙ্গাগুলোতে ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের পণ্য পরিবহন করা যায়। অভিযাত শপিংমলগুলোতে যেসব শপিং ব্যাগ দেয়া হয় তার চেয়ে অনেক শক্তিশালী এসব কাগজের ব্যাগ। এছাড়া কাগজের ব্যাগগুলো যদি উন্নত ডিজাইনের করা যায় তাহলে এসবের চাহিদাও দিন দিন বাড়বে। এ বিষয়ে সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ ইদ্রিস আলী জানান, এ শিল্পটির বিকাশে একমাত্র বাধা পলিথিন শপিং ব্যাগের যত্রতত্র ব্যবহার। সরকার ২০০২ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করেও অসাধু ব্যবসায়ীরা পলিথিনের ব্যাগ বাজারজাত করায় কাগজের তৈরি ব্যাগের নির্ভরতা এখনও তৈরি হয়নি সাধারণদের মাঝে। তাই কাগজের তৈরি ঠোঙ্গা কিংবা ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে এবং পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহারের কুফল তুলে ধরতে হবে। তাহলেই কেবল দিন দিন এ শিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং এ পেশায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তিনি। ওয়ার্কার্স পাটির সৈয়দপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আলম মাস্টার বলেন, কাগজের তৈরি ঠোঙ্গা ও কাগজের ব্যাগ শিল্পটি প্রসারে সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে জড়িতদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এজন্য সরকারী ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে এ কাজের সঙ্গে জড়িতরা যাতে সহজভাবে সুদমুক্ত ঋণ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। -এম আর মহসিন, সৈয়দপুর থেকে
×