ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে হচ্ছে স্বতন্ত্র বার্ন ইনস্টিটিউট

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাজধানীতে হচ্ছে  স্বতন্ত্র বার্ন  ইনস্টিটিউট

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার আনুমানিক এক শতাংশ আগুনে পোড়ার শিকার হচ্ছেন। অগ্নি শিখা, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, এ্যাসিড সন্ত্রাস এবং নানাভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে সকল দুর্ঘটনার মধ্যে অগ্নিশিখার মাধ্যমে দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি। আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করেছে সরকার। কেননা দেশে বাড়ছে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা। ফলে রোগীর ভিড় সামলাতে পারছে না ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১১তলা বিশিষ্ট আলাদা বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৫২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এতে কম খরচে দেশেই উন্নত সেবা নিতে পারবেন অগ্নিদগ্ধরা। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটির প্রকল্প পরিচালক ডাঃ সামন্ত লাল সেন বলেন, মেডিসিন, সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগ থেকে যেখানে ১৫ থেকে ১৬ জন করে ডাক্তার বের হচ্ছে, সেখানে বার্ন বিভাগ থেকে বের হচ্ছে মাত্র ১ জন করে। এটা একটা সঙ্কট। এ থেকে উত্তরণের প্রয়োজন। এ ছাড়া পোড়া রোগীর সংখ্যাও দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সদিচ্ছায় স্বতন্ত্র বার্ন ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সবাই ঢাকা শহরমুখী। ফলে ডাক্তার স্বল্পতা, বেড স্বল্পতা, সুচিকিৎসার পরিবেশ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে সঙ্কট রয়েছে। এই বার্ন ইনস্টিটিউট হলে যার অনেকাংশে সমাধান হবে। ফলে এটা সময়োপযোগী ও অতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে অনেক উন্নতি করলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও বিশ্বমানের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষায়িত চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতি ৫ থেকে ১৫ লাখ জনগণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে। যেখানে উন্নত বিশ্বে সাধারণত ৫ হাজার জনগণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকে। সাধারণত টারশিয়ারী লেভেল হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে, কিন্তু প্রয়োজনীয় উন্নত যন্ত্রপাতির অভাবে পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার আনুমানিক এক শতাংশ আগুনে পোড়ার শিকার। অগ্নি শিখা, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, এ্যাসিড সন্ত্রাস এবং নানাভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে সকল দুর্ঘটনার মধ্যে অগ্নিশিখার দ্বারা দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি। আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি নামের প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। যেটি সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন লাভ করেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ঢাকা বার্ন ইউনিট। এ বিষয়ে পরিকল্পনা পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন এ ইনস্টিটিউটটি স্থাপিত হলে একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্ট তৈরি হবে, জনগণের আর্থিক সামর্থ্যরে মধ্যে দেশেই উন্নত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি সেবা গ্রহণ করতে পারবে, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স ও স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে। তিনি জানান, এই ইনস্টিটিউটে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এবং জ্ঞান ও কারিগরি সহায়তা বিনিময়ের মাধ্যম বিভিন্ন দেশের সমধর্মী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যকর নেটওয়ার্ক তৈরি করে এ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এসব দিক বিবেচনায় করে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে ২০০৩ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বার্ন ইউনিট প্রকল্পের আওতায় একটি বার্ন ইউনিট স্থাপন করা হয়। অধিকসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য পরবর্তীতে ২০১২ সালে এই ইউনিটকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এটি বাংলাদেশে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি সরকারী রেফারেল হাসপাতাল। এছাড়া দেশের আরও বিভিন্ন টারশিয়ারী ও বিশেষায়িত হাসপাতালে বার্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এসব দিক বিবেচনা করে দেশে একটি উন্নত মানের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকার চাঁনখারপুলে যক্ষ্মা হাসপাতালের অব্যবহৃত জায়গায় দুটি বেজমেন্টসহ ১৭তলা ভিত্তির ওপর ১১তলা ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া হাসপাতালের জন্য আধুনিক মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং আসবাবপত্র সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থবছর ভিত্তিক বরাদ্দ চাহিদা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।
×