ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক সংস্কার নয়-মুহিত

প্রকাশিত: ০৩:০১, ১০ আগস্ট ২০১৭

নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক সংস্কার নয়-মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আর কোন ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আগামী ২০২০ সালের পর আবার সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। তার মতে, ৫ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর মেয়াদি অর্থনৈতিক প্রাক্কলন করা প্রয়োজন, যা আরো বেশি বাস্তবভিত্তিক হবে। এছাড়া নগর উন্নয়নে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দারদের হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহ কর) বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল আমারই-তে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতার উন্নয়ন’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউট (পিআরআই)। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের উপ-প্রধান জোয়েল রিফম্যান। মুহিত বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স সিটি কর্পোরেশনের প্রধান আয়। ১৯৬১-৬২ সালে হোল্ডিং ট্যাক্স চালুর পর সেটি আর পুননির্ধারণ করা হয়নি। খোকা (সাবেক সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা) একবার নোটিশ দিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স ১১ গুণ বাড়াতে চেয়েছিল। পরে তা কার্যকর হয়নি। স্থানীয় সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট পরিচালনার ক্ষেত্রে এখনো নাবালক। ’৬১-’৬২ সালের কাঠামোতেই সিটি কর্পোরেশনগুলো হোল্ডিং ট্যােেক্সর মাধ্যমে কিছু অর্থ আয় করে। এক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এগিয়ে আছে। তবে গত ৬০ বছরে এ ট্যাক্স রিভিউ করেনি, যা তাদের আয়ের সক্ষমতাকে বাড়াছে না। নিজের উদাহরণ দিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ বনানীতে ১৪ কাঠা জায়গার ওপর ৫ হাজার ৮০০ বর্গফুটের বাড়িতে বাস করেন তিনি। এ জন্য তাকে বছরে ১১ হাজার টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয়। ট্যাক্স ছাড় পেয়ে তাকে মোট ৬ হাজার টাকার পরিশোধ করতে হয়। এরপর তিনি বলেন, এ জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্নিধারণ করতে নির্বাচিত হওয়ার পর দুই মেয়রকে বলেছি। তারা বিষয়টি দেখবে বলে জানিয়েছে। সেমিনারে আর্থিক স্বচ্ছতার উন্নয়নে ওপর বিশিষ্টজনদের দেয়ার পরামর্শের ওপর বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুসলিম চৌধুরী ও ইন্সটিটিউট অব ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরি। বিক্ষিপ্ত বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে আর অর্থনৈতিক সংস্কার করা হবে না। ২০২০ সালের পর আবার সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। তার মতে, ৫ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর মেয়াদি অর্থনৈতিক প্রাক্কলন করা প্রয়োজন, যা আরো বেশি বাস্তবভিত্তিক হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জোয়েল রিফম্যান বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতা দরকার। ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫তম। আর বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। প্রধানমন্ত্রী আগামী দুই বছরে এই অবস্থান ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মুক্ত ্আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, নিয়মিতভাবে মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামো পর্যালোচনা করতে হবে। এছাড়া সরকারের বড় সংস্থা যেমন পেট্রোবাংলা, বিপিসি, বিজেএমসির মতো সংস্থাকে নিয়মিত অডিট করা উচিত। পাশাপাশি উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন বাড়াতে অর্থবছর সংশোধন করার পরামর্শ এসেছে আলোচনায়। এর কারণ হিসেবে বক্তারা বলেছেন, জুন-জুলাই মাসে দেশে বৃষ্টি হয়। বছরের অন্য সময় কাজ না হলেও এ সময় উন্নয়নমূলক কাজের অর্থছাড়েরর জন্য বেশি কাজ হয়। যা টেকসই হয় না। তাই অর্থবছর পরিবর্তন করে এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যেতে পারে। সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন গবেষণা সংস্থা পিডব্লিউসির ম্যানেজিং পার্টনার ড. মামুনুর রশিদ, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, অলস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এসআর ওসমানি প্রমুখ।
×