ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

১০ বছরে ১৬০ কোটি টাকা লেনদেন

ওটিসি মার্কেটের ক্রেতা নেই

প্রকাশিত: ০৯:০২, ৩ এপ্রিল ২০২০

  ওটিসি মার্কেটের ক্রেতা নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে লেনদেনে জটিলতা থাকায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ওটিসি মার্কেটকে উন্নয়ন ও গতিশীল করতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোন পদক্ষেপ না থাকায় লেনদেনে গতি ফিরছে না। প্রতিবছরই ওটিসি মার্কেটে শেয়ার লেনদেন আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে। ওটিসি গঠনের এক দশকে লেনদেন হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) একদিনের লেনদেনের চেয়ে কম। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওটিসি উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি। এটি এখন চতুর উদ্যোক্তাদের স্থান হয়ে গেছে। বাজারে এসে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বছরের পর বছর লভ্যাংশ না দিয়ে এখানেই পড়ে রয়েছেন। এতে করে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলে মনে করেন তারা। এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক ও এফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, পৃথিবীর কোথাও ওটিসি মার্কেট নেই। এই মার্কেট গঠন করা হয়েছে চতুর উদ্যোক্তাদের জন্য। তারা ইচ্ছা করেই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এখন তাদের ঠকাচ্ছেন। এক্ষেত্রে এটি নিয়ন্ত্রণে বিএসইসি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও যেসব কোম্পানি লিস্টেড হয় তারা যদি কয়েক বছর লভ্যাংশ দিতে না পারে সেক্ষেত্রে ওই কোম্পানিকে বাইব্যাক করতে হয়। আমাদের দেশেও এই আইনটি জরুরী। কোম্পানিগুলোকে শাস্তির বিধানে নিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা করতে আসবে আর বিনিয়োগকারীদের ঠকাবেন এটা হতে পারে না। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দুর্বল ভিত্তি আর লেনদেন প্রক্রিয়ার জটিলতার বাজারে এ অচলাবস্থা বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, কাগজের শেয়ারকে ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর বা ডিম্যাট না করায় লেনদেন প্রক্রিয়ার জটিলতা রয়েছে। তাই ওটিসি মার্কেটে ক্রেতা পেতে কষ্ট হয়। এখানে কেনা-বেচা করতে গেলে তৃতীয়পক্ষ হয়ে আসতে হয়। এরপরও শেয়ার কেনা-বেচা করতে সময় নিচ্ছে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ। এর কারণে ওটিসি মার্কেট ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন তিনি। তবে বাজারকে গতিশীল এবং বিনিয়োগকারীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে ওটিসি নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১০ বছরে ডিএসইর ওটিসি মার্কেটে লেনদেন হয়েছে ১৬০ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮৯ টাকার। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ওটিসি মার্কেট গঠন হওয়ার পর থেকে ২০০৯-১০ সালে তিন কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, ২০১০-১১ সালে ১ কোটি ৯ লাখ ১০৩ টাকা, ২০১১-১২ সালে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৪৫ টাকা, ২০১২-১৩ সালে ১ কোটি ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৫ টাকা, ২০১৩-১৪ সালে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৬ টাকা, ২০১৪-১৫ সালে ১৭ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার ১৩৪ টাকা, ২০১৫-১৬ সালে ৭ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার ১৬৮ টাকা, ২০১৬-১৭ সালে ১৯ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ১৬৯ টাকা, ২০১৭-১৮ সালে ৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৫১ টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে লেনদেন হয় ২২ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৮৯২ টাকার। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ওটিসি মার্কেটে ৫৪টি কোম্পানি থাকলেও ওটিসি গঠনের দীর্ঘসময় পেরোলেও এ পর্যন্ত কোন লেনদেন হয়নি বলে জানা গেছে। তবে ওটিসি মার্কেটকে সচল করতে বিএসইসির কার্যকরী পদক্ষেপ চান বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, বিএসইসি কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। একইসঙ্গে তারা ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোকে শেয়ার বাইব্যাক করারও দাবি জানান। জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ওটিসি নামের বিকল্প মার্কেট চালু করা হয়। দুর্বল মৌলভিত্তি ও লোকসানে থাকা কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের জন্যই এটি চালু হয়। ওই মার্কেট চালু হওয়ার পর একই বছর ৪ অক্টোবর বিএসইসি প্রথমে ‘জেড’ শ্রেণীভুক্ত ৫১টি কোম্পানিকে মূল বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করে লেনদেনের জন্য ওটিসি মার্কেটে পাঠায়। এরপর ২০১০ সালে দুই দফায় মোট ২৯ কোম্পানিকে ওটিসিতে পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে ওটিসি বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০টি। পরবর্তী সময়ে বেসরকারী খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) মামলা-সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ায় সেটি মূল বাজারে ফিরে আসে। এতে ওটিসি বাজারে কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৯টি। পরে আরও ১৪টি কোম্পানি মূল বাজারে ফিরে আসায় বর্তমানে ওটিসি মার্কেটে কোম্পানি সংখ্যা ৬৫টি।
×