ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ঝুঁকিতে লঞ্চ যাত্রীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২০ মার্চ ২০২০

দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ঝুঁকিতে লঞ্চ যাত্রীরা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ করোনাভাইরাসের ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন ঢাকাসহ বিভিন্নস্থান থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটে লঞ্চে যাতায়াত করছেন কয়েক লাখ মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, লঞ্চ চলাচল কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনা মানছে না। এছাড়া বরিশাল নৌ-বন্দরে নেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোন অভিযান। ফলে ঢাকার সাথে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ৩৮টি নৌরুটে ছোট-বড় প্রায় দেড়শ’ লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে কয়েক লাখ যাত্রী করোনার ঝুঁকি নিয়ে অবাধে যাতায়াত করছেন। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নৌবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে গেছে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১, এমভি মানামী, এমভি সুরভী-৮,সুন্দরবন-১১, এমভি পারাবাত-১২ ও তুষখালী থেকে আসা এমভি পূবালী-৭ লঞ্চটি। এরমধ্যে একমাত্র মানামী লঞ্চে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় শুধুমাত্র এমভি মানামী লঞ্চে সকল যাত্রীদের প্রবেশকালে আধুনিক তাপমাত্রা যন্ত্র দিয়ে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় ও হাতের তালুতে জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে লঞ্চের ভিতরে প্রবেশ করতে অনুমতি দিচ্ছে। এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চে দেখা গেছে, শুধু যাত্রীদের হাতে হেক্সিসল দিয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। আর বাকি লঞ্চগুলোতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এমন কোন ব্যবস্থা দেখা যায়নি। ঢাকার উদ্দেশ্য তুষখালী থেকে ছেড়ে আসা এমভি পূবালী-৭ লঞ্চটি বরিশাল নদী বন্দর থেকে চাঁদপুরের যাত্রীদের নেয়ার জন্য নোঙ্গর করার সাথে সাথে ঠেলাঠেলি আর গাঁয়ে গাঁয়ে মিশে কয়েকশ’ যাত্রী ঝুকি নিয়ে লঞ্চে ওঠে। পরবর্তীতে কোন পরীক্ষা আর জীবাণুনাশক স্প্রে ছাড়াই যাত্রীদের নিয়ে নৌ-বন্দর এলাকা ত্যাগ করে লঞ্চটি। এছাড়াও s যাচ্ছেনা। এ কারণে ব্যক্তিগত জরুরি কাজের জন্য করোনার ঝুঁকি থাকা সত্বেও শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করেই চলাচল করছি। এমভি মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা সকল নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করছি। যাত্রীদের করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখার জন্য পাঁচদিন আগে থেকে আমরা প্রথমে জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে লঞ্চটিকে প্রস্তুত করছি। এরপর লঞ্চের প্রবেশদ্বারে উন্নত তাপমাত্রাযন্ত্র দিয়ে প্রত্যেক যাত্রীকে আলাদা আলাদা করে তার শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। সাথে যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এই তাপমাত্রা যন্ত্রের সাহায্যে যদি কোন যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়া যায় অথবা করোনায় আক্রান্ত সন্দেহ হলে তাকে সাথে সাথে লঞ্চ থেকে নামিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কোন পরীক্ষা বা জীবানুনাশক স্প্রে ছাড়াই লঞ্চে অবাধে যাত্রীদের নিয়ে যাতায়াত করার প্রশ্নের জবাবে এমভি সুরভী-৮ লঞ্চের সহকারী মোঃ আসাদ বলেন, বরিশালে জীবাণুনাশক স্প্রেসহ ভাইরাসমুক্ত রাখার অন্যান্য সামগ্রীর সংকট থাকায় লঞ্চে ব্যবহার করতে পারিনি। তবে ঢাকা থেকে এসব সামগ্রী দ্রুত ক্রয় করে এ ভাইরাস প্রতিরোধে যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করা হবে। বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল নৌ বন্দর ও পরিবহন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে নৌযান মালিকদের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক লঞ্চের ডেক-কেবিন পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য যাত্রী তোলার আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, যাত্রীদের লঞ্চে তোলার সময় হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, লঞ্চের শৌচাগারগুলোকে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন এবং সেখানে পর্যাপ্ত পানি ও সাবানের ব্যবস্থা করা, যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, বিদেশ ফেরত যাত্রীদের অন্য যাত্রীদের থেকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করাসহ লঞ্চে যাত্রীদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা ও সচেতনতামূলক মাইকিং, টেলিভিশনে প্রচার ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা প্রচার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এসব নির্দেশনা পালনে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে নৌযানগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাথে সাথে কোন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যদি এসব নির্দেশনা না মেনে চলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্কতা আর সচেতনতার বিকল্প কিছুই নেই। তাই বিআইডব্লিউটিএ’র দেয়া নির্দেশনা পুরোপুরি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ মানলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে অনেকাংশেই রেহাই পাওয়া যাবে।
×