ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএসইর ভুলে লাভবান ১২ বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

ডিএসইর ভুলে লাভবান ১২ বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (এসিআই) চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর ’১৯) ভুল আর্থিক হিসাব প্রকাশের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ১২ বিনিয়োগকারী। যারা প্রত্যেকেই এসিআইয়ের প্রতিটি শেয়ার ২৬০ টাকার উপরে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। এই লাভবান হওয়া বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ভুল তথ্য প্রকাশের কোন যোগসাজশে আছে কিনা, তা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) ডিএসইর খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন শুরু হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ১২ বিনিয়োগকারী ২৬০ টাকার উপরে এসিআইয়ের শেয়ার বিক্রি করেন। অর্থাৎ আগের দিনের দরের তুলনায় তারা প্রতিটি শেয়ারে ৩১ টাকার উপরে মুনাফা করেছেন। তবে একইসময়ের মধ্যে ২৬০ টাকার নিচে বিক্রি করেও অনেকে লাভবান হয়েছেন। মঙ্গলবার ডিএসইর ভুলে এসিআইয়ের ২২৯ টাকার শেয়ার দ্রুত ২৭০ টাকায় উঠে যায়। এ সময় বিশেষ করে ১২ বিনিয়োগকারী সেই সুযোগ নেন। এক্ষেত্রে ১ বিনিয়োগকারী এসিআইয়ের সর্বোচ্চ ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। তিনি সাড়ে ১২ হাজার শেয়ার গড়ে ২৬৩ টাকার উপরে বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে তিনি আগের দিনের দরের তুলনায় প্রতিটি শেয়ারে প্রায় ৩৪ টাকা করে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা মুনাফা করেছেন। অন্যদিকে ডিএসইর ভুল তথ্য প্রকাশের সুযোগে বাকি ১১ বিনিয়োগকারীও ২৬০ টাকার উপরে শেয়ার বিক্রি করেন। তবে তাদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫-৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে একজন বিনিয়োগকারী ২৬৬.৮০ টাকা করে প্রায় ১৭০০ শেয়ার বিক্রি করেন। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ডিএসইর ভুল তথ্য প্রকাশের সুযোগে যে বিনিয়োগকারী এসিআইয়ের ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন, বিশেষ করে তার সঙ্গে ডিএসই ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কোন সম্পর্ক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত। শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতার স্বার্থে এক্ষেত্রে বিএসইসি ও ডিএসইকে এগিয়ে আসতে হবে। ডিএসই কর্তৃপক্ষ গত ১২ নবেম্বর লেনদেনের আগে এসিআইয়ের প্রথম প্রান্তিকে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিসহ শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হিসাবে ৫.১৯ টাকার তথ্য প্রকাশ করে। যা মূলত এসিআইয়ের একক হিসাব। এই তথ্য প্রকাশের পরে কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়তে থাকে। কারণ কোম্পানিটি গত অর্থবছরে সমন্বিতভাবে বড় লোকসান করেছে। এছাড়া গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৯.০৬ টাকা লোকসান করেছে। সেখান থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফার খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারে আগ্রহ বাড়ে। যে কারণে আগের দিনের ২২৯ টাকার শেয়ারটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৭০ টাকায় উঠে যায়। লেনদেন শুরু হওয়ার ২২ মিনিট পরে অর্থাৎ ১০টা ৫২ মিনিটে ভুল তথ্য প্রকাশের বিষয়টি ডিএসইর নজরে আসে। তারপরে তারা বিষয়টি সমাধান করে সঠিক তথ্য প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে সমন্বিত হিসাবে শেয়ারপ্রতি ৫.৯৯ টাকা লোকসানের তথ্য প্রকাশ করা হয়। এরপরে শেয়ারটির দর ২৪০ টাকার কাছে চলে আসে। এবং শেয়ারটি দিন শেষে ২৪২.৫০ টাকায় দাঁড়ায়। ডিএসই কর্তৃপক্ষের এমন ভুল তথ্য প্রকাশে কিছু বিনিয়োগকারী যেমন লাভবান হয়েছেন, একইভাবে বিনিয়োগকারীদের আরেকটি অংশকে লোকসান গুনতে হবে। যদিও এই ভুলের দায়ে ডিএসইর ম্যানেজম্যান্ট দ্রুততম সময়ে (দুপুর ১২টায়) ডিএসইর সংশ্লিষ্ট মার্কেট অপারেশন্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান সায়িদ মাহমুদ জুবায়েরকে সাময়িক বরখাস্ত করে। একইসঙ্গে ওই বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উপ-মহাব্যবস্থাপক কামরুন নাহারকে।
×