ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে একই দলকে মোকাবেলার আগে লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতল মারিয়া, বাংলাদেশ দলের এটি টানা তিন জয়

ভারতকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

ভারতকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিল বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ কয়েকদিন পর আবারও পৌষের সকালে দেখা গেল ঝলমলে-আরামদায়ক রোদ। কনকনে শীত ভাবটা তেমন নেই। এমন পরিবেশে প্রায় হাজার দুয়েক দর্শক কমলাপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। ভুভুজেলা বাজাচ্ছে একটু পর দম নিয়ে। সেই সঙ্গে গগনবিদারী চিৎকার, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ! হারবে কে? ইন্ডিয়া!’ আশেপাশের বিল্ডিংয়ের জানালা এবং ছাদ থেকেও খেলা দেখার জন্য উদগ্রীব অনেককেই দেখা গেল। তাদের এই আগ্রহ-প্রত্যাশাকে মাটি হতে দেয়নি বাংলাদেশ অ-১৫ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। বৃহস্পতিবার দিনটি তাদের জন্য ছিল আসলেই ‘বৃহস্পতি-তুঙ্গে’র মতোই। ঝলমলে রোদের মতোই তাদের পারফর্মেন্সও ছিল উজ্জ্বল। ফাইনালের আগে ‘ড্রেস রিহার্সাল’ খ্যাত শেষ লীগ-ম্যাচে তারা শিরোপা প্রত্যাশী ভারতকে হারায় ৩-০ গোলে। এক ম্যাচ হাতে রেখে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলায় সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে যদিও এই ম্যাচের কোন গুরুত্ব ছিল না। তারপরও দুই দলের কাছে ম্যাচটি ছিল মর্যাদার। যাতে জয়ী হয়েছে লাল-সবুজরাই। খেলার প্রথমার্ধেই বিজয়ী দল এগিয়েছিল ২-০ গোলে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে এএফসি অনুর্ধ-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে দুবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বে ৩-১ এবং ফাইনালে ৪-০ গোলে। এবারও অ-১৫ আসরে তাদের হারিয়ে হ্যাটট্রিক হারের স্বাদ উপহার দিল বাংলাদেশ। রাউন্ড রবিন লীগে নিজেদের তিন খেলার প্রতিটিতেই জিতলো বাংলাদেশ। ৯ পয়েন্ট পেয়ে তারাই হলো রাউন্ড রবিন লীগের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। এর আগে তারা হারায় যথাক্রমে নেপালকে ৬-০ এবং ভুটানকে ৩-০ গোলে। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা ভারতের প্রথম হার। ৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা হলো রানার্সআপ। এর আগে তারা হারায় যথাক্রমে ৩-০ গোলে ভুটানকে এবং ১০-০ গোলে নেপালকে। ভারতের চেয়ে পয়েন্টে এগিয়ে থাকলেও মোট গোলে এখনও তাদের টেক্কা দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতের গোল যেখানে ১৩টি, সেখানে বাংলাদেশের গোল ১২টি। তবে বাংলাদেশ অন্যদিক দিয়ে ঠিকই পেছনে ফেলেছে ভারতকে। বাংলাদেশ এই আসরের একমাত্র দল, যারা এখনও কোন গোল হজম করেনি। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে আরও অনেক গোলের ব্যবধানে জিততে পারতো বাংলার বাঘিনীরা। কিন্তু ভারত বহুবার বাংলাদেশকে অফসাইডের ফাঁদে ফেলে। অনেক গোল প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের। বল নিয়ন্ত্রণ তাদেরই ছিল বেশি, প্রায় ৭০ শতাংশ। সবমিলিয়ে দাপটের সঙ্গে খেলেই জেতে বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচে তহুরা এবং মারজিয়া খেলেনি। তহুরার কুঁচকিতে চোট, মারজিয়া ক্লান্ত। তাদের পরিবর্তে প্রথম একাদশে খেলানো হয় মিডফিল্ডার শামসুন্নাহার, মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা এবং ফরোয়ার্ড সাজেদা খাতুনকে। ৬ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। ফ্রি কিক পায় তারা। আঁখির শট প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে বাঁ পায়ের উঁচু ক্রস করে আঁখি। সেই বল পায়ে সংযোগ করে সাজেদা। বল বাইরের নেটে গিয়ে লাগে। হতাশায় পোড়ে লাল-সবুজ বাহিনী। ৯ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় বক্সে ঢুকে পড়ে সাজেদা। ডান পায়ের ক্রস ফেলে বক্সে। সেই বলে ঋতুর শট পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ১২ মিনিটে শামসুন্নাহারের ক্রস। সাজেদা পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে মিস করে। ২৬ মিনিটে গোড়ালিতে চোট পাওয়া সাজেদার পরিবর্তে মাঠে নামে ফরোয়ার্ড আনুচিং মগিনি। ৩০ মিনিট। বাঁপ্রান্ত। ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। আঁখির উঁচু শট পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে। ৩১ মিনিট প্রথম কর্নার পায় বাংলাদেশ এবং তাতেই করে বাজিমাত। ডানপ্রান্ত দিয়ে মনিকার বাঁ পায়ের কর্নার। আনুচিংয়ের হেড। গোল (১-০)। চলতি আসরে এটা তার তৃতীয় গোল। ৩৫ মিনিটে ডিফেন্ডারদের ভুলে বল পায় আনুচিং। বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে ওয়ান টু ওয়ান পজিশন। শট। গোলরক্ষকের পায়ে লেগে প্রতিহত। পরের মিনিটেই আবারও হতাশ করে আনুচিং। অরক্ষিত আনুচিং বল নিয়ে এগিয়ে যায় বক্সের দিকে। বিপদ বুঝে এগিয়ে আসে ভারত গোলরক্ষক মনিকা দেবী। ডান পায়ে প্লেসিং গড়ানো শট আনুচিংয়ের। কিন্তু সাইডপোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে মিস। ইনজুরি টাইমে (৪৫+২ মিনিটে) মিডফিল্ডার শামসুন্নাহারকে নিজেদের বক্সে ফাউল করে ভারতের ডিফেন্ডার পাকপি দেবী। শ্রীলঙ্কান রেফারি কেজি লোশানি কাদানগোদা পেনাল্টির নির্দেশ দেন। তা থেকে গোল করতে কোন ভুল করেনি শামসুন্নাহার। তবে সে আরেক শামসুন্নাহার। ডিফেন্ডার (২-০)। ৪৮ মিনিটে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় লম্বা দৌড়ে বক্সে ঢুকে মনিকার বাঁ পায়ের শট সাইড পোস্টের সামান্য বাইরে চলে যায়। ৫১ মিনিটে বাঁপ্রান্তে ঋতুর ক্রস। চলন্ত বলে আনুচিং পেট দিয়ে বল মারতে বাধ্য হয়। বল সাইড পোস্টের সামান্য বাইরে। ৫৪ মিনিটে আনাইয়ের পাস পায় মনিকা। কিন্তু সতীর্থ কাউকে আশেপাশে না পেয়ে বল নিয়ে ছুটতে ছুটতে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়ে সে। গোলরক্ষক এগিয়ে আসে। বাঁ পায়ের গড়ানো প্লেসিং শটে মনিকা বল পাঠায় জালে (৩-০)। ৬০ মিনিটে গোলরক্ষককে কাটিয়ে পোস্ট ফাঁকা পায় আনুচিং। বলটা ঠেললেই গোল হয়ে যায়। ঠেললোও আনুচিং কিন্তু এত আস্তে যে গোলরক্ষক দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলে বল। আক্ষেপ আবারও। ৭৬ মিনিটে বক্সের ভেতর বল নিয়ে ঢুকে মনিকার বাঁ পায়ের শট। পোস্টের বাইরে। ভারত বলার মতো একটাও আক্রমণ শানাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। রাউন্ড রবিন লীগ পর্যায়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। এখন আগামী ২৪ ডিসেম্বরের ফাইনালে কি আবারও ভারতকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের অপরাজিত হতে পারবে বাংলাদেশ?
×