ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরের বড়াইগ্রামে এক পরিবারের সাত প্রতিবন্ধীর মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ০১:১৮, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

নাটোরের বড়াইগ্রামে এক পরিবারের সাত প্রতিবন্ধীর মানবেতর জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগ্রামের বয়োবৃদ্ধ হাঁসমতি নেছা (৮১)। পিঠে বড় কুঁজ, সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা শুতে পারেন না। বয়সের তুলনায় ছোট মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চির দেহটি সামনের দিকে বেঁকে থাকে। শুধু তিনি নন, তার পরিবারের দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও দুই নাতিসহ মোট ৭জন সদস্যের একই অবস্থা। তবে প্রতিবন্ধী হয়েও তারা কেউই অন্যের কাছে হাত পাতেন না, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সবাই। তাই বসে নেই কেউই। কেই ব্যবসা করছেন, কেউবা পশুপালন। পরের উপর নয় েিজর উপর নির্ভর করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এই প্রতিবন্ধী মানুষগুলো। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঝগ্রামের মৃত সায়েদ আলীর স্ত্রী হাঁসমতি নেছা, দুই ছেলে আব্দুর রব (৬১) ও মফিজউদ্দিন (৪১), দুই মেয়ে বিলকিস (৫৭) ও ফুলবানু (৫৩), নাতি নুরুন্নবী ওরফে সাগর (১৩) ও নুর আলম (৬)। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে এরা সবাই প্রতিবন্ধী। বয়সের তুলনায় তারা প্রত্যেকেই শারীরিকভাবে বেশ খাটো। কম বয়সেই চেহারায় বয়সের ছাপ, দেখতে অনেকটা বৃদ্ধদের মত। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করাটা তাদের জন্য কষ্টকর। সোজা হয়ে শুতে বা দাঁড়াতে পারেন না। তাদের মধ্যে আব্দুর রব ও নুরুন্নবীর পিঠে বড়-সড় কুঁজ আছে। কুঁজের ভাড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না তারা। দুই বোন বিলকিসের উচ্চতা ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি ও ফুলবানুর উচ্চতা ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি। দুই পা কিছুটা বাঁকা ও পিঠে ছোট কুঁজ আছে। ছোট ছেলে মফিজউদ্দিনের উচ্চতা ৩ ফুট ১০ ইঞ্চি। দুই পায়ের পাতা বাঁকানো, পিঠে কুঁজ আছে, বুক কিছুটা বেশি উঁচু। হাঁটার সময় হেলে পথ চলতে হয় তাদের। মফিজের ছোট ছেলে নুর আলম অন্যদের চেয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও তার দুই পা বাঁকা। ধীরে ধীরে সেও বাবার মত হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারলেও ঠিকমত বসতে পারে না সে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও জীবন চালাতে আব্দুর রব বীজ ও মফিজউদ্দিন ছোটখাট ফলের দোকান দিয়েছেন। যৌবনে দুই বোনের বিয়ে হলেও দুজনের স্বামীই কিছুদিনের মধ্যে তাদেরকে তালাক দেয়। বর্তমানে তারা দুজনেই ভাইদের সঙ্গে বসবাস করছেন। দুজনেই বাড়িতে ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন ও অন্যের বাড়িতে শ্রমিক হিসাবে পাঁপড় তৈরীসহ নানাভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর নুরুন্নবী বাড়ির পাশের শিখন স্কুলে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে। লেখাপড়া শিখে বড় হতে চায় সে। প্রতিবন্ধী আব্দুর রব জানান, শারীরিকভাবে যখন সুস্থ বোধ করি, তখন দোকানে যাই। অন্য সময় যেতে পারি না। অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। আমার মা একজন বিধবা। তিনি এখনও প্রতিবন্ধী ভাতা পান না, এমনকি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা কোনটারই অন্তর্ভূক্ত হননি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রবিউল করিম বলেন, বর্তমানে এ পরিবারের চারজনকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরকেও ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
×