ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেনজির আবরার

তারুণ্যের পথচলা ॥ বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

তারুণ্যের পথচলা ॥ বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব

একটা সময় ছিল বুয়েটে ক্যারিয়ার সম্পর্কিত চর্চার কোন প্ল্যাটফর্ম ছিল না। ক্যারিয়ার নিয়ে একটি কম্পিটিশনকে কেন্দ্র করে ২০১০ সালের আগস্টে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৎকালীন শিক্ষার্থী মোঃ নাজমুস সাকিব ও তার বন্ধুরা স্টুডেন্ট ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, বুয়েট বরাবর আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন ‘বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব (বিসিসি)’ গঠনের। বুয়েটের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনাও ঘটেছিল সেদিন, সকালে আবেদন করে বিকেলে অনুমোদনপ্রাপ্তি বুয়েটের আঙ্গিনায় বুয়েটের ক্যাম্পাসে সেদিন প্রথমবার! কোন প্রেক্ষাপটে বিসিসির যাত্রা শুরু তা ব্যাখ্যা করলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ নাজমুস সাকিব। তিনি বলেন, ‘বুয়েট একটি অনেক বড় এবং মানবসম্পদে ভরপুর কমিউনিটি। বর্তমান স্টুডেন্টরা যেমন নিঃসন্দেহে দেশের সব থেকে মেধাবী ছাত্রছাত্রী, তেমনি এর এলামনাইবৃন্দও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল। ক্লাবটি প্রতিষ্ঠায় আমার সঙ্গে উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন শেষবর্ষে থাকা ২০০৬ ব্যাচ এর আরও কয়েক আগ্রহী স্টুডেন্ট। যাদের নাম রবিন, কুসুম, নওরিন, মাকসিম, দীপ্ত, ফাহিম, ফয়সাল। বর্তমান স্টুডেন্ট ও গ্র্যাজুয়েটদের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে গাইড করা, বিভিন্ন সেক্টরে তাদের সুযোগগুলো তুলে ধরা, মূলত স্টুডেন্ট, এলামনাই এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটা কমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাই ছিল উদ্দেশ্য। আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল তখন বুয়েটে কেন্দ্রীয় একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার ছিল ক্যারিয়ার সচেতনতায়।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার রয়েছে তুমুল ব্যস্ততা। তার পরেও প্রকৌশলবিদ্যার এ শিক্ষার্থীরা সবাই নিজেরা বেশ ক্যারিয়ার সচেতন। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিসিসির বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। এই বছরেই ২৭৬ জন নতুন সদস্য ক্লাবটির সদস্য হয়েছে। প্রতি বছরের জানুয়ারিতে সদস্য সংগ্রহ করেন। নিয়মিত কার্যক্রমÑ বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব বর্তমানে চারটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করে চলেছে। ১. ডিউক অব এডিনবার্গ ২. বুয়েট রোস্ট্রাম ৩. উইমেন চ্যাপ্টার ৪. হায়ার স্টাডিস ইন এব্রোড। চলুন পাঠক, জেনে নেই তাদের প্রোগ্রামগুলো সম্পর্কেÑ ডিউক অব এডিনবার্গ মূলত তরুণদের সহশিক্ষা কার্যক্রমের স্বীকৃতিমূলক একটি এ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম। ভবিষ্যতের জন্য গতানুগতিক পড়ালেখার বাইরে জীবনমুখী শিক্ষা ও দক্ষতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই প্রোগ্রামটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। এর ওপর ভিত্তি করে ব্রোঞ্জ, সিলভার ও গোল্ড এই তিনটা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। হায়ার স্টাডিস ইন এব্রোড সেগমেন্টে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজন করা হয়ে থাকে। জিআরইএর ওপর কয়েকটা সেশনে ‘ক্র্যাকিং জিআরই’ নামে একটি কোর্স পরিচালনা করা হয়। বুয়েট রোস্ট্রাম হচ্ছে বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সফট স্কিল যেমন প্রেজেন্টেশন, স্পিকিং স্কিল, নেটওয়ার্কিং ইত্যাদির উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করে থাকে। আর উইমেন চ্যাপ্টার বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের এক অনবদ্য প্রয়াস। দেশের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ও কর্পোরেট সেক্টরে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ব্যাপারে বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করে থাকে এ সেগমেন্ট। ‘ওমেন ইঞ্জিনিয়ারস কংগ্রেস’-এর মধ্যে অন্যতম। এ সম্পর্কে বর্তমান সভাপতি, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র জীবনের মান উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ আয়োজনের মাধ্যমে দেশ এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন ক্যারিয়ারে সুবিধা, অসুবিধা, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ, সুযোগ ও সম্ভাবনা বুয়েটিয়ানদের কাছে তুলে ধরি, যেন তারা ছাত্র থাকা অবস্থায় ক্যারিয়ার গোল নির্ধারণ করতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। সফলতায় বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবÑ বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব তার বিভিন্ন সেগমেন্টের কার্যক্রমের পাশাপাশি সময়োপযোগী বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজন করে থাকে যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট কোম্পানিদের অংশগ্রহণে ক্যারিয়ার টক, লিডারশিপ প্রোগ্রাম ইত্যাদি। বুয়েট ক্যারিয়ার কার্নিভাল প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় ২০১৪ সালে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্রীদের অংশগ্রহণে বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ‘ওমেন ইঞ্জিনিয়ার্স কংগ্রেস ২০১৬।’ বিভিন্ন এমএনসি এই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। বাংলাদেশের নেতৃত্বে এই প্রোগ্রামের ৪টি সেগমেন্টে স্কুল-কলেজসহ প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল যা একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচ্য। > বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব ২য় বারের মতো আয়োজন করে ‘বুয়েট ক্যারিয়ার সামিট ২০১৭।’ এ ছাড়া মিট উইথ সিইওস নামের বিশেষ আয়োজনও করে তারা। বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের (বিসিসি) মডারেটর ও এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. তানভীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, ‘বুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জীবনের মান উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে এবং তথ্যপূর্ণ সেমিনার এবং মনোনিবেশ কর্মশালাগুলোর মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে কর্মজীবনের সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক জানার, বোঝার ও শেখার সুযোগ প্রদান করে দিচ্ছে আমাদের ক্লাব। ‘বুয়েট ক্যারিয়ার সামিট’ হলো বিসিসিএর স্বাক্ষর ঘটনা যা দেশের বিভিন্ন চাকরির সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয় এবং এর ফলে দেশটির দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য তাদের উৎসাহিত করা হয়। ক্লাবের সদস্যদের মধ্যেও রয়েছে বেশ আগ্রহ। বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের একজন এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে দেখে এসেছি এই ক্লাব টি বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আরও প্রফেশনাল বানানোর চেষ্টা করে চলেছে। আমার বিশ্বাস, বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব আমাদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা গড়ে তুলতে সাহায্য করছে এবং করবে বলে মন্তব্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল মারুফের। ক্যারিয়ার ক্লাবের সদস্যদের আড্ডায় আরও একটি বিষয় উঠে আসল। তা নিয়ে কথা বললেন বর্তমান সহ-সভাপতি এবং বুয়েট ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা সুহা তাবিল, ‘বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবে মূলত শেখার জন্যই আসা। প্রফেশনাল লাইফে টিকে থাকার জন্য বুয়েটিয়ানদের প্রস্তুত করে দেয়ার লক্ষ্যেই বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব এগিয়ে চলেছে।’ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এক্ষেত্রে বেশ গোছাল। পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু তৌহিদ হোসেন বললেন, ‘অনেককেই বলতে শুনি, তুমি যে কাজ করে আনন্দ পাও, সেটাই কর। বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব এ আমার কাজ করার শুরুটা আনন্দ পাওয়া থেকেই। কিন্তু এই ক্লাব আমাকে আস্তে আস্তে অনুভব করতে শেখায় আমি কত বড় একটা ট্যালেন্টেড টিমের সঙ্গে কাজ করতে পারছি। আমি মাঝে মাঝে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি এমন একটা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারার জন্য।’
×