কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদারপন্থী সরকার চার বছরের মেয়াদের মাঝপথে এসে দাঁড়িয়েছে নানান ভুল ভ্রান্তি ও অপকার্মের কারণে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। সরকারের সুনামও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এতে আগামী দিনগুলো এই সরকারের কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক নীতি যা ফরাসী ভাষাভাষী প্রদেশ কুইবেককে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। সরকার সংস্কার প্রস্তাব, ডাক্তার, কৃষক ও ক্ষুদে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ক্ষেপিয়ে দিয়েছে। অন্য সমস্যাগুলো অবশ্য উদারপন্থীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেমন, নর্থ আমেরিকার ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট নিয়ে নতুন করে আলোচনা। চুক্তিটি হচ্ছে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েই চলেছেন যে চুক্তিটি তিনি ছিঁড়ে ফেলবেন এবং কানাডার সঙ্গে তেল পাইপলাইন স্থাপনের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বাতিল করবেন। এতে ক্রুব্ধ হয়ে উঠেছে পঞ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ এলবার্টা।
কানাডীয়দের অনেকে মনে করেন যে পরিবেশ রক্ষা ও দেশজ গ্রুপগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মতো যেসব প্রতিশ্রুতি ট্রুটো দিয়েছিলেন সেগুলো রক্ষায় তিনি তেমন কিছুই করেননি। তাছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের অঙ্গীকারও তিনি ভঙ্গ করেছেন। এতে লিবারেল পার্টি জনসমর্থন হারাচ্ছে। জনমত জরিপে লিবারেলরা অবশ্য এখনও এগিয়ে। ভোটারদের ৩৭ শতাংশের সমর্থন লিবারেলদের দিকে এবং ৩৩ শতাংশের সমর্থন রক্ষণশীলদের পক্ষে। তবে এই ব্যবধান কমে আসছে। ট্রুডোর ব্যক্তিগত জনসমর্থন এখনও ৫০ শতাংশের ওপর থাকলেও তা পড়তির দিকে। অর্থাৎ তাঁর সামনে কঠিন সময় আসছে।
সেই ইস্যুগুলো লিবারেলদের রক্ষণাত্মক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে তার মধ্যে একটা বড় ইস্যু হলো কর। ধনীরা তাদের পরিমাণ কমানোর জন্য নানা ফাঁকফোঁকড় ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে থাকে। সরকার শুরুতেই সেইসব ফাঁকফোঁকড় বন্ধ করার চেষ্টা করতে গিয়ে অধিক আয়ের লোকদের ওপর করের হার বাড়িয়েছেন। তাতে পাল্টা আঘাত নেমে আসছে সরকারের ওপর। রক্ষণশীল দলের প্রধান এ্যান্ড্রু শিয়াব সরকারের শাণিত সমালোচনা করে বলেন: ‘রক্ষণশীলরা প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে ওঠে কর কমানোর নতুন কি উপায় আছে ভেবে বের করার চেষ্টা করে। আর উদারপন্থীরা কর কিভাবে বাড়ানো যায় সেই নতুন উপায়ের সন্ধান করে।
টাউন হলগুলোর সভাসমাবেশে লিবারেল এমপিরা সমালোচকদের হাতে রীতিমতো ধোলাই হচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকার তাদেরকে কর ফাঁকিবাজ বলে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সরকার ভাবছেন যে তাদের কর সংস্কারের প্রস্তাব ও পরিকল্পনার প্রতি দুই তৃতীয়াংশ কানাডীয়র সমর্থন আছে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়।
পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে ট্রুডো সরকার একদিকে পরিবেশবাদীদের তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছেন অন্যদিক তেল উৎপাদনকারী প্রদেশগুলোর জনগণকে সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন। এলবার্টার মানুষ মনে করে যে পাইপলাইনের জন্য যে নতুন পরিবেশগত আইন নির্ধারিত হয়েছে। সেটির কারণেই ট্রান্সকানাডা নামে এলবার্টার একটি ফার্ম সম্প্রতি প্রস্তাবিত এলার্জি ইস্ট’ পাইপলাইন বাতিল করে দিয়েছে। তাদের অভিযোগ ট্রুডো পাশ্চাত্যের কাছে ভিক্ষা করার চেষ্টা করছেন ঠিক যেমন তাঁর বাবা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো ১৯৮০ সালে তেলের দর কমিয়ে রাখার একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব করেছিলেন। এদিকে সরকার ট্রান্স মাউন্টেন কোম্পানির পাইপলাইন ব্রিটিশ কলাম্বিয়া দিয়ে সম্প্রসারিত করার যে পরিকল্পনা অনুমোদন করছে তাতে নতুন করে চটেছে পরিবেশবাদীরা। জলবায়ু পরিবর্তন নীতি বাস্তবায়নে মন্থরতার জন্য পার্লমেন্টে সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।
কানাডার সংস্কৃতিতে ডিজিটাল হানাদারদের বিশেষ করে আমেরিকানদের হাত থেকে রক্ষার যে বহুল প্রচারিত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাতে কেউ সন্তষ্ট হতে পারেনি। সরকারের হাতে আরও এক মস্তো কালোদাগ হলো গত কয়েকদশকে কেন এত দেশজ মহিমা ও বালিকা নিহত বা নিখোঁজ হয়েছে সে ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনার অভাব। কানাডায় ১৪ লাখ দেশজ অধিবাসী রয়েছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রুডো তার অংশ হিসেবে এই তদন্ত পরিচালিত হলো না নানান সীমাবদ্ধতায় এটি মুখ থুবরে পড়েছে। শুধু একটা দিক দিয়েই ট্রুডো সরকার স্বস্তি বোধ করতে পারে। সেটা হলো অর্থনীতি। এ বছর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে এই হারই দ্রুততম। সেপ্টেম্বরে বেকারত্বের হার ছিল ৬.২ শতাংশ যা তেমন বিপর্যয়কর নয়। নতুন শিশু পরিচর্যা সুবিধা ও অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের ফলে অর্থনীতিতে গতি এসেছে। তবে পূর্বাভাস আছে আগামী বছর প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হবে। কিন্তু তার পরও জি-৭ এর বাকি দেশগুলোর তুলনায় দ্রুততরই থাকবে তা।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: