ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল খেলার প্রত্যাশা পরের ম্যাচে

তবু আশাবাদী মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

তবু আশাবাদী মাশরাফি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ দল। লজ্জাজনক হার হয়েছে গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজেভাবে। ওয়ানডেতে সর্বশেষবার ১০ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ দল ২০০৮ সালে করাচিতে পাকিস্তানের কাছে। তারপর এই প্রথম রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে একই ব্যবধানে পরাজয় দেখল বর্তমানে ওয়ানডে ক্রিকেটে শক্তিধর দলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ। সর্বাধিক রান তাড়া করে এই ব্যবধানে জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশী বোলারদের ব্যর্থতায়। বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এমনটাই মনে করছেন। তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান তিনি, দলের মানসিক অবস্থা চাঙ্গা রেখে পরবর্তী ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়াতে চান। মাঝে একটা দিন সময় পাবে আর বাংলাদেশ সেই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। বুধবারই পার্লের বোল্যান্ড পার্কে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে আরেকটি অগ্নিপরীক্ষা মাশরাফিদের জন্য। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে সেখানে। ৩ ম্যাচের সিরিজ হার ঠেকাতে হলে এ ম্যাচে জিততেই হবে। আর সেটাই করতে চান মাশরাফি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেটাই ছিল দু’দলের মধ্যে সর্বশেষবার এই ফরমেটে মুখোমুখি হওয়া। সেবার স্বাগতিক বাংলাদেশের কাছে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছিল প্রোটিয়ারা। প্রথমবার বাংলাদেশের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের ঠিক দুই বছর পর প্রথম মোকাবেলাতেই চরম প্রতিশোধ তুলে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশকে দিল ওয়ানডে ক্রিকেটে ১১তম বারের মতো ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারের কলঙ্ক। আর দক্ষিণ আফ্রিকা সর্বাধিক ৩ বার এই ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশকে। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের অক্টোবরে বেনোনিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের প্রথমবার ১০ উইকেটে হারের বিস্বাদটাও দিয়েছিল প্রোটিয়ারাই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে দলটি ওয়ানডে ক্রিকেটে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছে সেই দলটির বিরুদ্ধে এমন জয় সত্যিই অস্বাভাবিক। কারণ, রান তাড়া করার ক্ষেত্রে কোন উইকেট না হারিয়ে জেতার বিশ্বরেকর্ড গড়েছে প্রোটিয়ারা। গত বছর জুনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বার্মিংহামে ইংল্যান্ড জিতেছিল ২৫৪ রান তাড়া করে ১০ উইকেটে। সেই বিশ্বরেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালের উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল স্বর্গ। কিন্তু এরপরও মাশরাফি মনে করেন বোলাররা ভাল বোলিং করতে পারলে অবশ্যই ম্যাচ জয় সম্ভব ছিল। উইকেটের হালচাল দেখে মাশরাফি বললেন, ‘উইকেট ভাল ছিল। কিন্তু আমাদের আরও বেশি রক্ষণাত্মক বল করা উচিত ছিল। এমন উইকেট যে হবে সেটা সবসময় জানতাম, যেখানে উইকেট নেয়াই হতো একমাত্র উপায়। কিন্তু আমরা শুরুতে ব্রেকথ্রু আনতে পারিনি। বোলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। এই উইকেটে ২৮০ রান নিয়েও জেতা সম্ভব ছিল। যদি আমরা শুরুতে উইকেট নিতে পারতাম। দুই দিক থেকেই আমরা যদি চাপ তৈরি করতে পারতাম, তাহলে হয়তো সম্ভব হতো। এসব উইকেটে যদি দুই পাশ থেকে পার্টনারশিপ বোলিং না করা যায় তাহলে উইকেট পাওয়া খুব কঠিন। তারপরও যা হয়েছে, তা আমাদের একেবারেই ভাবনার বাইরে। আমরা একটা উইকেটও নিতে পারিনি এখানে।’ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল বাংলাদেশকে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ভিন্ন কন্ডিশনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার সম্ভাবনা আগেই দেখেছিলেন মাশরাফি মর্তুজা। তাই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের বিকল্প কিছু ভাবেননি প্রথম ওয়ানডেতে। কিন্তু সেটা ফলাফল আনতে পারেনি। একটা ম্যাচ হেরেই হতাশায় মুষড়ে পড়তে চাননা মাশরাফি। তিনি নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান জয় ছিনিয়ে আনার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমনটা ক্রিকেটে হয়েই থাকে। সব খেলাতেই হয়। আমাদের লড়াই করে যেতে হবে। আমি মনে করি মুশফিক খুব ভাল ব্যাট করেছে। তামিম মাঠের বাইরে থাকায় সিনিয়রদের অবদান রাখতেই হতো। আমি আশা করি তামিম পরের ম্যাচের জন্য ফিট থাকবে। ব্যাটিং সে তুলনায় ভাল হয়েছে। এ ধরনের কন্ডিশনে দুদিকেই (ব্যাটিং-বোলিং) ভাল না করলে আমাদের জেতা কঠিন হবে।’ আর দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই সব বিভাগে ভাল করতে চান মাশরার্ফি। তবে এই ওয়ানডেতে তামিম ফিরলেও যে বোলিং নিয়ে দুঃশ্চিন্তা সেটা থাকছেই অধিনায়কের। কারণ, কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের সিরিজই শেষ হয়ে গেছে এমনটাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিশ্চিতভাবেই তিনি পার্লে বাংলাদেশের বাঁচা-মরার দ্বিতীয় ওয়ানডের লড়াইয়ে থাকতে পারছেন না। তাই বর্তমান বোলিং আক্রমণ নিয়েই লড়াই করতে হবে মাশরাফিদের। আর সেই লড়াইয়ে একেবারে অচেনা ভেন্যুতে নামতে হবে বাংলাদেশকে। কিম্বার্লিতে ২০০২ সালে একবার খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও পার্লে আজ পর্যন্ত খেলেনি। সেখানে উইকেট ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিনই হবে বাংলাদেশের জন্য। আর হারলেই আরেকটি সিরিজ হার হয়ে যাবে। সেই হার ঠেকানোর লড়াইয়ে দলের অস্ত্রের যে মজুদ সেখানেই রয়েছে বেশ ঘাটতি- তার সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রথম ওয়ানডেতে হতাশাজনক হারে ভেঙ্গে পড়া মানসিকতা। এসব কাটিয়ে ওঠাই হবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
×