ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযান সফল হোক

প্রকাশিত: ০৩:০৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অভিযান সফল হোক

জুলাই মাসে অসাধু চালকল মালিকদের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল সরকার। তখন বহু চালকল মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। আগামী তিন বছর তারা সরকারের নিষিদ্ধ তালিকায় থাকবে। তাদের কাছ থেকে সরকার চাল সংগ্রহ করবে না। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হয়েছে চাল। ভারত, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও চাল কেনার ব্যবস্থা হয়েছে। তারপরও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে যে এটা হচ্ছে সে কথা বলাই বাহুল্য। ফলে উপায়হীন হয়েই সরকারকে অসাধু চালকল মালিকের বিরুদ্ধে অভিযানে যেতে হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযুক্ত চালকল মালিকের মজুদকৃত পঞ্চাশ হাজার টন চাল জব্দ করে তাকে জরিমানা করাও হয়েছে। তিন মাস আগে বাজারে চালের দাম বাড়ার কারণ থাকলেও বর্তমানে নেই। এ কথা ঠিক যে, সম্প্রতি প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আগমনে খাদ্য চাহিদা বেড়েছে। টানা কয়েক বছর বাম্পার ফলনে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারী হিসাবে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হয় হাওড়ে। পাশাপাশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে ১০ টাকা কেজি দরে সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করায় সরকারী মজুদ কমে আসে। এর ফলস্বরূপ রোজার মধ্যে চালের দাম বৃদ্ধি পায়। সে সময় পাইকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল, স্থানীয় পর্যায়ের শিল্প গ্রুপগুলো অটোমিল করে সারাদেশের চালের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে সরকার চেষ্টা করেও চালের মূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় নামিয়ে আনতে পারেনি। উল্লেখ্য, দেশে এক সময় সনাতন পদ্ধতির চাতাল থেকে চাল উৎপাদন হলেও এখন চালের বড় অংশের সরবরাহ আসে অটোরাইস মিল থেকে। আগেই বলা হয়েছিলো, অসাধু চালকল মালিকদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি যেন কোনক্রমেই পরিবর্তন করা না হয়। কারণ এসব অসাধু ব্যবসায়ীর অনেকেই প্রভাবশালী। সুতরাং অনৈতিক প্রভাব খাটানোর অপচেষ্টায় তারা লিপ্ত হতে পারে। এটা ঠিক যে দেশের মোট চালকল মালিকদের শতকরা আশি ভাগই এই কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে নানা বিবেচনায় এটি বদলে যেতে পারেÑ এমন আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কালো তালিকার বাইরে থাকা চার হাজার চালকলও পুরোটা চাল সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন হবে না। সরকার আড়াই হাজার চালকল থেকে চাল সংগ্রহ করেই অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পারবে। তবু মানুষ নিশ্চিত হতে চায়। অতিরিক্ত লোভের বশবর্তী হয়ে যেসব চালকল মালিক দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যের বাজার অস্থিতিশীল করায় নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। চলতি সপ্তাহে অসাধু চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় আশা করা যায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এতে গুজব রটনাকারীদের মুখও বন্ধ হবে। ভবিষ্যতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে চাল মজুদ করে বাজার অস্থিতিশীল করার অপকর্ম করার সাহস যেন না পায় অসাধু চালকল মালিকরা, সে বিষয়ে সরকারকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
×