ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের ঝাঁজ কিছুটা কমেছে

প্রকাশিত: ০২:২৯, ১৮ আগস্ট ২০১৭

পেঁয়াজের ঝাঁজ কিছুটা কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের ঝাঁজ কিছুটা কমেছে। তবে কোরবানি সামনে রেখে সব ধরনের মসলা জাতীয় পণ্যের দাম চড়া। আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। শীঘ্রই চালের দাম কমার আভাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বন্যা ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেড়েছে দাম। ভোজ্যতেল, আটা, এবং ডালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। মুরগির বাজার স্থিতিশীল থাকলেও চড়া গরুর মাংসের বাজার। ইলিশের দেখা মিললেও দাম নাগালের বাইরে। মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত অস্বাদের জাটকা সাইজের ইলিশই ভরসা। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, যাত্রাবাড়ি বাজার এবং ফকিরাপুল বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, দাম কিছুটা কমে কাপ্তান বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আমদানিকৃত ভারতীয় মোটা সাইজের পেঁয়াজ। গত সপ্তায় এই পেঁয়াজ ভোক্তাকে পেতে ৬৫ এবং ৬০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। তবে মিশর থেকে আমদানির ঘোষণা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেই পেঁয়াজের দেখা মিলেনি। আশা করা হচ্ছে, কোরবানি ঈদের আগে মিশরসহ পাশ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ দেশে আনা হবে। ফকিরাপুল বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মোর্শেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দাম কিছুটা কমেছে। তবে কোরবানি সামনে রেখে আমদানি না বাড়লে আবার পেঁয়াজের দাম বেড়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, গতবছর কোরবানির সময় পেঁয়াজর দাম বাড়েনি। এবার বন্যা ও বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে এই পণ্যটির দাম বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, মোকামগুলোতে পেঁয়াজের অভাব নেই। তারপরও পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের বাজারে চাহিদা বাড়লেও বর্ষা মৌসুমে ভারতের উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোতে বন্যার কারণে দেশটি থেকে পেঁয়াজের আমদানি কমে যায়। ফলে পণ্যটির কেজিপ্রতি দাম ২৫-৩০ টাকা থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে গত সপ্তাহে ৬০-৬৫ টাকায় পৌঁছে যায়। এখন আমদানি কিছুটা বাড়ায় দামও সামান্য কমেছে। এদিকে, পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও চালের বাজারে এখনো শুল্ক কমানোর সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীঘ্রই দাম কমে আসবে। কারওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিকেজি মোটা স্বর্ণা চাল ৪২-৪৩ টাকা, পারিজা চাল ৪২ টাকা, ভালো মানের মিনিকেট ৫৪-৫৮ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৫২-৫৪ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৮ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫০ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৫২-৫৮ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৩ টাকা, কাটারিভোগ ৭২-৭৩ টাকা এবং পুরনো পোলাওয়ের চাল ১০০ টাকা ও নতুন পোলাওয়ের চাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হয়েছে গত সপ্তাহেও। এই বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন আব্দুল খালেক মিয়া। তিনি বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা কমেছে। কিন্তু দেশি পেঁয়াজের দাম আরও কমা উচিৎ। যে পেঁয়াজ দুই সপ্তাহে আগেও ছিলো মাত্র ৩০ টাকা, সেই পেঁয়াজ এখনো ৬০ টাকা। এটা কি করে সম্ভব? বাজার তদারকির পাশাপাশি কি কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়লো-সেটিও আমাদের জানা উচিৎ। তিনি বলেন, আমদানি শুল্কমুক্ত করার পরও চালের বাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। অথচ বাইরে থেকে চাল আসছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজ, চালসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনতে হবে। ৬০ টাকার নিচে বাজারে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার খবর পাচ্ছি কিন্তু দাম কমছে না। বেড়ে গেছে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম। এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দাম বেড়ে প্রতিকেজি দেশী রসুন ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিপ্রতি ১০ টাকা দাম কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৬০ টাকায়। মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই কোরবানি ঈদ। তাই আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র বাড়তে শুরু করেছে সব ধরনের মসলার দাম। জিরা, দারচিনি ও এলাচে কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪২০-৪৩০ টাকা, দারচিনি ২০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা, শুকনা মরিচ ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচের। গত সপ্তাহে যে এলাচ কেজিপ্রতি ১৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছে, ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ টাকা দরে। এছাড়া লবঙ্গ ১৫০০ টাকা, দেশি আদা ২০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা, আমদানি করা চীনের আদা ১৪০ টাকা, ক্যারালার আদা ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্যাপক বন্যা ও বৃষ্টিপাতের কারণে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০-৫০ টাকা। বাজারে কাঁচামরিচ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা দরে। কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুন কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা দরে। এছাড়া সব ধরনের সবজির দাম ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা হরে বেড়েছে। এছাড়া কোরবানি সামনে রেখে গরুর সরবরাহ কমে যাওয়ায় মাংসের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। এদিকে, গরুর হাটে পশুপ্রতি খাজনা নামমাত্র ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হলে সারা বছরই সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন রাজধানীর মাংস ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন আশ্বাস দেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি বলেন, পাঁচ-ছয় হাজার টাকা খাজনা দিয়ে গরু কিনে এনে পশুপালনে উন্নয়ন সম্ভব না, অবাস্তব। গাবতলীর গরুর হাটে খাজনা নামমাত্র ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হলে আমরা মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সর্বোচ্চ আড়াইশো টাকা কেজিতে সারাবছর গরুর মাংস খাওয়াবো।
×