ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

টার্কি পালনে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৩ জুলাই ২০১৭

টার্কি পালনে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

গরু, খাসি, মুরগি যাই বলি না কেন। এগুলোর কোনটায় প্রচুর ফ্যাট কিংবা কোলেস্টেরলের স্বর্গরাজ্য। স্বাস্থ্য সচেতন যারা। তারা হয় এসব পরিমিত খান, নয় এড়িয়ে চলেন। ইদানীং মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা বেড়েছে। তবে সবার জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে টার্কি মুরগি। টার্কি হলো উত্তর আমেরিকার বংশোদ্ভূত এক বিশেষ প্রজাতির মুরগি। ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু দেশে টার্কির মাংস অসম্ভব রকম জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে টার্কি প্রচুর বিক্রি হয়। আমেরিকানদের কাছে টার্কির রোস্ট খুবই প্রিয়। পৃথিবীর মধ্যে আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি টার্কি পালন করা হয়। বছরে দেশটির টার্কি মাংস উৎপাদন ২৫ লাখ টন। এক সময় এরা ছিল বন্য পাখি। তবে এখন এরা গৃহেও পালিত হচ্ছে। টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। কোলেস্টেরল নেই বললেই চলে। টার্কির মাংসে আছে আয়রন, জিংক, লৌহ, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, এমাইনো এসিড, ট্্িরপটোফ্যান, ভিটামিন ই. ভিটামিন বি৬, বি১২। এমাইনো এসিড, ট্র্রিপটোফ্যান উপস্থিতি শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। টার্কিতে বিদ্যমান অধিক পরিমাণে ভিটামিনই এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। টার্কির প্রতি ১০০ কেজি মাংসে ১৬২ ক্যালরি শক্তি থাকে বলে জানা যায়। টার্কির মাংসে ২৬% এর মতো আমিষ থাকে। আমাদের দেশে টার্কি মুরগি নামে এরা পরিচিত। সাধারণ মুরগির মতোই এদের পালন করা যায়। উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বেশি। তেমনি টার্কির মাংস খেতে সুস্বাদু। টার্কি পালনে বাংলাদেশে প্্রচুর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে এমনটাই জানালেন রাহাত টার্কি এ্যান্ড এ্যাগ্রো ফার্মের মালিক এন জে রাহাত। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানিখোলাতে তার ফার্মে ছোট বড় প্রায় দুই শতাধিক টার্কি রয়েছে। তিনি জানান, এবার ঈদে টার্কি প্রচুর বিক্রি হয়েছে। শুধু বিক্রিই নয়, টার্কি যারা তার কাছ থেকে কিনেন তাদের তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এ জন্য তিনি কোন টাকা পয়সা নেন না। নরসিংন্দীর পলাশ উপজেলার খানেপুর ও পাইকশা উপজেলায় শতাধিক টার্কি খামার গড়ে উঠেছে। ৩০০টির মতো টার্কি নরসিংন্দীর আরেক খামারি সফিকুলের খামারে। তিনি জানান, ৬/৭ মার্সে টার্কি ডিম পাড়ে। ততদিনে টার্কির দাম ৬/৭ হাজার টাকার মতো হয়। একদিনের টার্কি মুরগির বাচ্চার দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। টার্কির খাওয়া দাওয়া সাধারণ মুরগির মতোই তবে এরা ঘাস, লতা পাতা, পোকা মাকড়, শাক সবজি খেতে পছন্দ করে। এগুলো এমনিতেই বসত বাড়ির আশপাশে হয়। সে জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ কম পড়ে বলে জানান সফিকুল। নরসিংন্দীর অনেক গ্রামে অসংখ্য টার্কি মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। চাকরি কিংবা ব্যবসার পাশাপাশি অনেকেরই বাড়তি আয়ের উৎস টার্কি পালন। সে রকমই একজন আব্দুল হক। ৫০টির মতো টার্কি তার খামারে রয়েছে। তিনি জানান, যে কেউ ছোট আকারের টার্কি খামার করে ও চাকরির পাশাপশি বাড়তি উপার্জন করতে পারে। কারণ টার্কি পালনে খুব বেশি সময় দিতে হয় না। তাছাড়া পরিবারের গৃহিণী, ছেলে মেয়ে, কাজের লোকরা টার্কির দেখভাল করতে পারেন। রাজধানীর দক্ষিণ মা-ায় গড়ে উঠেছে কাঁশবন এ্যাগ্্েরা লিমিটেড। এই ফার্মে প্রায় তিন হাজারের ও বেশি টার্কি রয়েছে। এটি দেশের অন্যতম বৃহত্তম টার্কি খামার। খামারের একজন অংশীদার সেলিম মিয়া বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করে টার্কি ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন। টার্কির রোগ, খাদ্য, বাসস্থানের জন্য বেশি অর্থ খাটানোর প্্রয়োজন পড়ে না। অল্প কিছু জায়গায় টার্কি খামার করে বিনিয়োগকৃত অর্থের দিগুণেরও বেশি লাভ করা সম্ভব। বাংলাদেশের আবহাওয়া অন্যান্য পাখির মতো টার্কি পালনের জন্য সবচেয়ে উত্তম। ৮/১০ মাসে একটি টার্কি ১১ থেকে ১২ কেজি ওজন হতে পারে। এমটাই জানান নওগাঁর জিল্লুর রহমান, ত্রিশ কাঠা জমির ওপর তিন তলাবিশিষ্ট তার টার্কির খামার। বাংলাদেশের অন্যতম বড় খামারের মালিক তিনি। শুধু টার্কি নয়। লাভ বার্ড, তিতির, কবুতরসহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির পাখি তার খামারে রয়েছে। লাভ বার্ড উৎপাদনেও তিনি এলাকায় তাক লাগিয়েছেন। ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের সালনাতে প্রথমবারের মতো টার্কি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। টার্কি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশ টার্কি বার্ডস ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশন (বিটিবিডিএ) এই উৎসবের আয়োজন করে।
×