ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গতির যুদ্ধে বাংলাদেশের অভিক

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৮ জুলাই ২০১৭

গতির যুদ্ধে বাংলাদেশের অভিক

সুমন্ত গুপ্ত সময়টা ১৮৬৭ সালের ৩০ আগস্ট। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের এ্যাশটন-আন্ডার-লেন। দুটো গাড়ি পাশাপাশি ছুটতে শুরু“করল। গন্তব্য ওল্ড ট্রাফোর্ড। এই ৮ মাইল দূরত্বকে আগে পেরুতে পারে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা। সেদিনের গাড়ি দুটির একটি ছিল বিখ্যাত লোকোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার আইজ্যাক ওয়াট বোল্টনের। আরেকটির মালিক ছিলেন ড্যানিয়েল এ্যাডামসন। সেই সময়ে প্রতিযোগিতাটি পত্র-পত্রিকারও মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। সেগুলোতে ছাপা হয়েছিল বিজয়ীর নাম- আইজ্যাক ওয়াট বোল্টন। মানুষের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। তখন সেটা ছিল ‘কার ডুয়েল’, ঠিক ‘কাররেস’ নয়। সে হিসেবে প্রথম কাররেসের আয়োজন হয় প্যারিসে, ১৮৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল। ২ কিলোমিটারের ট্র্যাক, নিউলি ব্রিজ থেকে বুইস দ্য বোলোনে। আয়োজক স্থানীয় পত্রিকা লা ভেলোসিপেদে। যদিও এটা প্রথম কাররেসের আয়োজন ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত এটাকেও ঠিক কাররেস বলা গেল না। ডি ডায়ন-বুটন কোম্পানির গাড়ি চালিয়ে প্রতিযোগিতায় জয়ী হন জর্জ বুটন। কিন্তু সমস্যা হলো, প্রতিযোগিতায় তিনিই ছিলেন একমাত্র প্রতিযোগী! তার পর বছর সাতেক পর, ১৮৯৪ সালের ২২ জুলাই। পৃথিবীর প্রথম স্বীকৃত কাররেস হয় ওই প্যারিসেই। ওই সময়ে ১০ ফ্রাঙ্ক দিয়ে প্রতিযোগিতায় নাম লেখান ১০২ জন প্রতিযোগী। শৌখিন গাড়িচালক থেকে শুরু করে পিজিয়ট, প্যানহার্ড, ডি ডায়নের মতো বড় বড় গাড়ির কোম্পানি- নাম লেখান সবাই। ৫০ কিলোমিটারের বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করেন ৬৯ জন। সেখান থেকে মূল ১২৭ কিলোমিটারের প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হন ২৫ জন। তাদের মধ্যে রুয়েনে প্রথম পৌঁছান ডি ডায়ন কোম্পানির কাউন্ট জুলস-আলবার্ট ডি ডায়ন, ৬ ঘণ্টা ৪৮ মিনিটে। সাড়ে ৩ মিনিট পরে পৌঁছান পিজিয়ট কোম্পানির আলবার্ট লেমায়েত্রে। তবে নিয়মের মারপ্যাঁচে প্রথম হয়ে যান আলবার্ট লেমায়েত্রে। কিছুদিনের মধ্যেই এক শহর থেকে আরেক শহরে কাররেস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম শুরু“হয় ফ্রান্সে। সেখানকার এই রেসগুলো প্যারিস থেকে শুরু হতো, কিংবা প্যারিসে গিয়ে শেষ হতো। ১৯০৭ সালে আয়োজিত হয় বিখ্যাত পিকিং-প্যারিস রেস। ৯ হাজার ৩১৭ মাইল লম্বা রেসটির পথের অনেকখানিই ছিল ভীষণ দুর্গম। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ফ্রান্সের ৩টি এবং ইতালি ও নেদারল্যান্ডের একটি করে দল। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় ইতালির ‘ইতালা’ কোম্পানির দলটি। এরপর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে নিয়মিত কাররেস হতে থাকে। ১৮৯৫ সালে হয় প্যারিস-বোর্দেও-প্যারিস রেস। একই বছর হয় আমেরিকার প্রথম কাররেস- শিকাগো টাইমস-হেরাল্ড রেস। ১৮৯৭ সালে ফ্রান্সের নিস শহরে হয় স্পিড উইক। তাতে একটি নয়, অনেক ধরনের কাররেস অনুষ্ঠিত হয়- হিল ক্লাইম্ব, স্প্রিন্ট, ড্র্যাগ রেস। কিছুদিনের মধ্যেই এক শহর থেকে আরেক শহরে কাররেস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম শুরু“হয় ফ্রান্সে। এ তো হলো কাররেস শুরুর ইতিহাস। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল খেলা কোনটি? অনেকেই বলবেন কার রেসিং, নির্দিষ্ট করে বললে ফর্মুলা ওয়ান। বাংলাদেশের অনেক ক্রীড়াপ্রেমীই আছেন, যারা এই কার রেসিং সম্পর্কে অনেক খোঁজখবর রাখেন। অনেকেই পছন্দ করেন মাইকেল শুমাখার, ড্যানিসিয়া প্যাট্রিক, লুইস হ্যামিল্টনদের। তাদের আফসোস ছিল, বাংলাদেশের কেউ নেই এ খেলাটিতে। তবে সেই আক্ষেপ এখন আর নেই। এখন আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের দেশে আছে কার রেসার। বাংলাদেশে কাররেস শুরুর ইতিহাস বেশি দিনের না। জনপ্রিয় এই খেলাটি ব্যয়বহুল বিধায় এই খেলার প্রচলন নেই বললেই চলে। দেশে কার রেসিংয়ে প্রশিক্ষণ ট্র্যাক বা দক্ষ প্রশিক্ষক কোনটিই নেই। এর মাঝে ও তরুণ প্রজন্মের কেউ কেউ এগিয়ে এসেছে এই মাধ্যমে। তাদের মাঝে অভিক আনোয়ার অন্যতম। পড়াশোনার সুবাদে ছোটবেলায় ছিলেন বিদেশে। গাড়ির প্রতি আকর্ষণ সেই সময় থেকেই। নতুন কোন মডেলের গাড়ি এলেই তাকে দেখতে হতো। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই গাড়ি স্পর্শ করছেন না ততক্ষণ মনে শান্তি লাগত না। সময় আর সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পড়তেন দূর অজানার উদ্দেশ্যে। ছোট বেলায় টিভিতে কাররেস দেখতেন, খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন। গতির লড়াইয়ে একে অন্যকে কীভাবে টেক্কা দিচ্ছে। সেই থেকেই গতির প্রেমে পরে যান। গাড়ির ট্র্যাকে অনেকবার গাড়ি চালিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে তিন বার রেলি ক্রস এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আমাদের অভিক। এবারে ভারতের দিল্লীতে অনুষ্ঠিত রেসিং প্রতিযোগিতা ভক্সওয়াগন এ্যামিও কাপ-২০১৭ তে অংশ নিচ্ছে অভিক। কানাডার এফ আই দ্বারা স্বীকৃত লাইসেন্স প্রফেশনাল রেস লাইসেন্স আছে অভিকের। এফআই হলো রেসিং গ্রুপের একটি গভর্নিং বডি। যার মাধ্যমে অভিক বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
×