ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপূর্ব কুমার কুণ্ডু

সুস্মিতার বাড়ি ফেরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৬ মে ২০১৭

সুস্মিতার বাড়ি ফেরা

আলোর নিচে বসে কেউ যেমন মহাকবি শেখ সাদীর গুলিস্তান কাব্য পড়ে জীবনের নৈতিকতার বোধ আত্মস্থ করে ঠিক তেমনি অপর কেউ ওই একই আলোর নিচে বসে ভাইয়ের জায়গা জমি আত্মস্থ করার জন্য দলিলে সই করে। অনেকটা তেমনিভাবে ইন্টারনেট সংযোগকে ব্যবহার করে কেউ যেমন প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের দুটি ব্যাকুল হৃদয়কে এক করিয়ে দেয় আবার ওই একই ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে দুটি হৃদয়ের একটিকে ক্ষত-বিক্ষত করে মৃত্যুর খাদে পৌঁছে দেয়। বর্তমান বাস্তবতায় সাইবার অপরাধের কারণে ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রী সুস্মিতার জীবনে ঘটে যাওয়া আর্থ-সামাজিক টানাপোড়েনের মর্মগাঁথা নিয়ে কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের উপন্যাস ‘সুস্মিতার বাড়ি ফের।’ প্রথমা প্রকাশন থেকে আলোচ্য উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছে এবারের অমর একুশে বইমেলায়। মেলার ভিড়ে সুস্মিতা এবং তার বাগদত্তা রাজীব নিজেদের বেশকিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের স্টিল ছবি তোলে। পরবর্তীতে সুস্মিতার ছবির সঙ্গে অশ্লীল ছবি যুক্ত করে রাজীব সুস্মিতার বাবা-মায়ের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা দাবি করে। ছবি ভাইরালের কারণে সুস্মিতা এক ঘরে, ভাই ক্রিকেটার সোহান টিমচ্যুত, বাবা রাশেদ রহমান সামাজিক বলয়ে অপদস্থ, মা সুমি রহমান আতঙ্কিত, পিতৃবন্ধু হায়দার আলী পাশে সহমর্মী হয়ে দাঁড়ানোর কারণে রাজীবের ভাড়াটে মস্তানদের দ্বারা হুমকিগ্রস্ত তথা প্রত্যেকেই নানাবিধ যন্ত্রণায় জর্জরিত। এসবের মধ্যে সুস্মিতার এক সময়ের ভার্সিটির ক্লাসমেটের কেউ কেউ যেমন তাকে এড়িয়ে যায় আবার কেউ কেউ পাশেও দাঁড়ায়। যেমন মামুন যে সুস্মিতাকে বোঝায় এটা ফটোশপের কারসাজি। ভাই সোহানকে টিম থেকে বাদ দিলে পাশে দাঁড়ায় বন্ধু পূর্ণেন্দু যে বোঝায় আগামী ক্রিকেট টুর্নামেন্ট তাকে খেলতেই হবে। কি হতে কি হবে এই দুশ্চিন্তার ভার সইতে না পেরে এক সময় বাবা রাশেদ রহমানের স্ট্রোক হয়ে যায়। বাবা- কন্যার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতে এসে বন্ধু হায়দার আলী মুখোমুখি হয় রাজীবের ভাড়ােেট গু-া রাজু নামে সন্ত্রাসীর। একদিকে তারই কন্যা পূর্ণকথাকে তুলে নেয়ার হুমকি অপরদিকে তারই প্রাণনাশের হুমকি। হায়দার আলী কমিশনার সিরাজ মিয়ার মাধ্যমে রাজু বাহিনীর অপকর্মের রাশ টানতে গিয়ে ব্যর্থ হলেও সফল হয় সুস্মিতার বান্ধবীরা ইউনিভার্সিটির সায়ন্তয়ী ম্যামের পরামর্শে কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করে রাজীবকে গ্রেফতার করতে। একদিকে রাজীবের গ্রেফতারে মধ্য দিয়ে সুস্মিতার নির্দোষ প্রমাণ অপরদিকে তারই কারণে ভাড়াটে গু-া রাজু বাহিনী দ্বারা তার ভাই সোহান ও পিতৃবন্ধু হায়দার আলীকে চিরদিনের মতো হারানোর বেদনা অনুধাবনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মোহিত কামালের উপন্যাস সুস্মিতার বাড়ি ফেরা। ঘুরে ফিরে জানা-চেনা বিষয়কে আরও কত গভীরভাবে, আরও কত নিমগ্নতার সঙ্গে অনুধাবন করা যায়, তারই প্রচেষ্টা এই উপন্যাস। বহুমাত্রিক চরিত্রের বিস্তৃতি পাঠকের ভাবনাকে প্রসারিত করে। উপন্যাসটি এক বসাতেই পড়ে শেষ করতে হয় সত্য কিন্তু পড়া শেষে যে বেদনা মনে দাগ কাটে তা তো ভুলবার নয়। ভুলে থাকতে চাইলেও মনে বারংবার মনে পড়ার উপন্যাস সুস্মিতার বাড়ি ফেরা।
×